Tuesday, March 18, 2025
বাড়িখেলাবদলে যাওয়া স্পেন-ইতালির লড়াইয়ে জিতবে কে?

বদলে যাওয়া স্পেন-ইতালির লড়াইয়ে জিতবে কে?

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ১৯ জুন: পজেশন ধরে রেখে আর ছোট ছোট পাসের তিকি-তাকা ফুটবলে প্রতিপক্ষের পরিকল্পনা ভেস্তে দেওয়ার কৌশল থেকে সরে এসেছে স্পেন। বল দখলে অতিরিক্ত মনেযোগী না হয়ে এখন তারা আরও বেশি সোজাসুজি আক্রমণ শাণাতে পটু। অন্যদিকে, ‘সবার আগে ঘর সামলানো’র নীতি থেকে সরে এসে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে শুরু করেছে ইতালি। খোলনলচে বদলে ফেলা এই দুই দলের মুখোমুখি লড়াই ছড়াচ্ছে বাড়তি উত্তাপ, শিহরণ। দারুণ রোমাঞ্চ নিয়ে ক্ষণ গুণছেন ফুটবলপ্রেমী, বোদ্ধারাও।জার্মানির মাঠে গড়ানো এবারের ইউরোয় ইতোমধ্যে দুই দলই একটি করে ম্যাচ খেলে ফেলেছে। নতুন কৌশলে কাঙিক্ষত শুরুও পেয়েছে তারা; ক্রোয়েশিয়াকে ৩-০ গোলে গুঁড়িয়ে দেয় স্প্যানিশরা আর আলবেনিয়ার বিপক্ষে ২৩ সেকেন্ডে গোল হজমের পর ঘুরে দাঁড়িয়ে ২-১ গোলে জেতে আজ্জুরিরা।

এখন দেখার অপেক্ষা, নতুন সাজের দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে কারা বাজিমাত করতে পারে। আগামী বৃহস্পতিবার জার্মানির পশ্চিমের শহর গেলসেনকিরশেনে মুখোমুখি হবে এই দুই দল।তিকি-তাকার ‘ভয়ঙ্কর সুন্দর’ অস্ত্রে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে ২০০৮ ও ২০১২ সালের ইউরো জয়ের মাঝে ২০১০ সালের বিশ্বকাপও জিতেছিল স্পেন। তবে সেই কৌশল বাস্তবায়নে পারদর্শী মূল তিন খেলোয়াড় শাভি এর্নান্দেস, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা ও শাবি আলোনসো অনেক আগেই বিদায় বলে দিয়েছেন।ধীরে ধীরে স্পেনের ওই কৌশলও ভোতা হতে শুরু করে কিছুটা। প্রয়োজনের তাগিদে, সময়ের দাবিতে নতুন খেলোয়াড়দের সঙ্গে মানানসই কৌশল খুঁজতেই একেবারে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে হাজির হন কোচ লুইস দে লা ফুয়েন্তে। ম্যাচে পরিস্থিতির প্রয়োজনে চটজলদি সে ছক বদলেও ফেলা যায়। এ কারণে ফুয়েন্তে মনে করেন তার দল এখন আরও ভয়ঙ্কর।

“জাতীয় দলকে আমরা এমন এক দলে বদলে ফেলছি, যার অনেক রূপ। অন্যান্য দল জানেও না, আমরা কী ধরনের আক্রমণ শাণাতে যাচ্ছি। আর এতে খুশি হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। এই কৌশলে স্পেনকে ফের আগের শীর্ষ অবস্থায় ফেরানো যাবে, আমাদের থেকে যেটা সবাই আশা করে।”অনেকের মতে, ‘বয়সী’ ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে স্পেন দাপট দেখাতে পারলেও ইউরোর শিরোপাধারীদের বিপক্ষে তাদের পড়তে হবে কঠিন পরীক্ষায়। এদিকে, গত ম্যাচে আবার চোট পেয়েছেন মাঝমাঠের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য রদ্রি ও অধিনায়ক আলভারো মোরাতা। ইতালি ম্যাচে তাদেরকে না পেলে ভুগতে হতে পারে দলটিকে।এই অবস্থায়, নিজেদের পরিকল্পনা গোপন রাখতে দলের টানা দুই দিনের অনুশীলনে গণমাধ্যমকে ঢুকতেই দেয়নি স্পেন।

পরিসংখ্যানের পাতায় ঢু মারলে দেখা যাচ্ছে, ইতালির বিপক্ষে মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে তিনবারের ইউরোপ চ্যাম্পিয়নরা; ৩৬ বারের মুখোমুখি লড়াইয়ে স্প্যানিশদের জয় ১৪টি, হার ১০টি, বাকি ১২ ম্যাচ ড্র।২০১২ ইউরোর ফাইনালে ইতালিকে ৪-০ গোলে গুঁড়িয়ে শেষবার এর চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল স্পেন। পরের দুই আসরেও নকআউট পর্বে দেখা হয় দল দুটির; ২০১৬ আসরের শেষ ষোলোয় ২-০ গোলে ও গত আসরের সেমি-ফাইনালে টাইব্রেকারে জিতে ১২ বছর আগের ফাইনালে হারের ক্ষতে কিছুটা প্রলেপ দেয় ইতালিয়ানরা।উয়েফা নেশন্স লিগের গত দুইবারের ফাইনালসেও শেষ চারের লড়াইয়ে দেখা হয় স্পেন ও ইতালির, দুবারই জয়ের হাসি হাসে স্পেন। তাই, এই দুই দলের লড়াইয়ের ইতিহাস যেমন সমৃদ্ধ, তেমনি মাঠের লড়াইয়ে শেষের আগ পর্যন্ত সম্ভাব্য বিজয়ীর ধারণা করাও ভীষণ জটিল।

কোভিড মহামারীর মাঝে ২০২১ সালে মাঠে গড়ানো ইউরোয় ইতালি চ্যাম্পিয়ন হলেও, এর আগে-পরের কয়েক বছরে তাদের পারফরম্যান্স ভীষণ হতাশাজনক। গত দুই বিশ্বকাপেই বিস্ময়করভাবে বাছাইপর্ব উতরাতে ব্যর্থ হয় তারা। এমন দলের ওপর সমর্থকদের আস্থা ফেরাতে নাপোলিকে সেরি আ জিতিয়ে ইতিহাস গড়া কোচ লুসিয়ানো স্পালেত্তি নিজের ফুটবল দর্শন প্রয়োগ শুরু করেন।ইতালিয়ানদের চিরাচরিত ফুটবল দর্শন রক্ষণাত্মক কৌশল বদলে, দলের মধ্যে আক্রমণের বীজ বুনে দেন। আলবেনিয়ার বিপক্ষে জয়ের পথে যে কৌশল দারুণ কাজেও দেয়। স্পালেত্তির কোচিংয়ে, মাঠে বেশি সময় পজেশন রেখে, ছোট ছোট অংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আরও আক্রমণাত্মক হতে আগ্রহী এই ইতালি।ফুটবল বিশ্বের এই দুই পরাশক্তির নতুন কৌশল কার্যকর হলে নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, অসাধারণ এক লড়াইয়ের সাক্ষী হতে যাছে ফুটবলপ্রেমীরা।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য