Saturday, January 25, 2025
বাড়িখেলাবাজবলের পর ব্রামব্রেলা নিয়ে এল ইংল্যান্ড

বাজবলের পর ব্রামব্রেলা নিয়ে এল ইংল্যান্ড

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,১৯ জুন: দিনটা ছিল ‘আমব্রেলার’—মানে ছাতার।এজবাস্টন টেস্টে প্রথম দুটি দিন নির্বিঘ্নে খেলা হলেও তৃতীয় দিনে হানা দেয় বৃষ্টি। সেই বৃষ্টিও একাধারে নয়, থেমে থেমে নেমেছে। যে কারণে খেলা বন্ধ হওয়ার পর শুরু হয়ে আবার বন্ধ হয়েছে। এমন বৃষ্টির দিনে ক্রিকেট মাঠের পরিচিত দৃশ্য ছাতা মাথায় আম্পায়ারদের হেঁটে বেড়ানো। আরেকটি দৃশ্যও আছে—কভার দিয়ে মাঝমাঠ ঢেকে ফেলা। তবে অ্যাশেজে ইংল্যান্ড–অস্ট্রেলিয়া প্রথম টেস্টের তৃতীয় দিনের সবচেয়ে আলোচিত দৃশ্যের নাম ‘ব্রামব্রেলা’—যার উৎস সেই আমব্রেলা আর কভার! ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস এই ‘ব্রামবেলা’ কৌশলের রুপকার। ফলকেন্দ্রিক ভাবনায় আক্রমণাত্মক ও ইতিবাচক ক্রিকেটের যে ধারা ইংল্যান্ড দল গত এক বছর খেলে চলেছে, তাঁকে বলা হচ্ছে ‘বাজবল’। ইংল্যান্ডের টেস্ট কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালামের ডাকনাম ‘বাজ’। নিউজিল্যান্ডের সাবেক এই অধিনায়ক ইংল্যান্ডের কোচ হওয়ার পর দলের মধ্যে যে পরিবর্তন নিয়ে এসেছেন, সেটিকে তাঁর নামের সঙ্গে মিলিয়ে ডাকা হচ্ছে। ‘ব্রামব্রেলা’র গল্পটা অবশ্য ম্যাককালাম বা স্টোকসের সঙ্গে নয়, বার্মিংহামের এজবাস্টন স্টেডিয়ামের সঙ্গে জড়িত। সেটা কেমন আর স্টোকসই বা কী করেছেন, সেসব জেনে নেওয়া যাক।

ব্রামব্রেলার অতীত

১৯৮১ থেকে ২০০১ পর্যন্ত বার্মিংহামের এজবাস্টন মাঠে যে কভার পিচ ব্যবহার করা হতো, সেটা ছিল অনেকটা ছাতা আকৃতির। এর সুবিধা ছিল বৃষ্টি শুরু হলে দ্রুত পিচের ওপর নিয়ে বসিয়ে দেওয়া যেত। বার্মিংহামের ডাকনাম ‘ব্রাম’ শব্দের সঙ্গে ‘আমব্রেলা’কে যুক্ত করে ব্রামব্রেলা নামে ডাকা হতো বড় আকারের ওই পিচ কভারকে। তবে দুই দশক ব্যবহারের পর এটি পাল্টে ফেলা হয়। বড় কারণ ছিল, ব্রামব্রেলা থেকে পানি চুইয়ে পড়ত, যা দীর্ঘসময় বৃষ্টির ঘটনায় পিচের আরও ক্ষতি করতো। বিশ বছরের বেশি সময় পর এজবাস্টনে আবারও ব্রামব্রেলা ফিরেছে। তবে এই ফেরাটা পিচ কভার রূপে নয়, ফিল্ডিং সেটআপ হিসেবে।

ব্রামব্রেলার বর্তমান

অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার উসমান খাজাকে যখন সুইং, বাউন্সার বা স্পিন কোনোভাবেই আউট করা যাচ্ছিল না, ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস এক অভিনব ভঙ্গিমার ফিল্ডিং সাজান। অলি রবিনসনের ওভারে খাজার বিপক্ষে কাছাকাছি ছয়জন ফিল্ডার দাঁড় করানো হয়। লেগ সাইডে শর্ট স্কয়ার লেগ থেকে শর্ট মিড অনের মধ্যে তিনজন আর অফ সাইডে শর্ট কভার থেকে শুরু করে শর্ট মিড অফ পর্যন্ত তিনজন। ফিল্ডারদের নিজেদের মধ্যে দূরত্ব ছিল দুই থেকে তিন মিটারের মতো। আর ব্যাটসম্যান খাজা থেকে দূরত্ব ছিল ১২ থেকে ১৫ মিটার। ব্যাটসম্যানের কেন্দ্র করে ছয়জন ফিল্ডারের এভাবে ছাতার মতো দাঁড়িয়ে থাকাকে বলা হচ্ছে ব্রামব্রেলা। যে কিছুক্ষণের মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবিসহ ভাইরাল হয়ে যায়।

ব্রামব্রেলার সুবিধা–অসুবিধা

ব্রামব্রেলায় ফিল্ডিং দলের জন্য সুবিধা–অসুবিধা দুটিই আছে। অসুবিধা হচ্ছে ছয় ফিল্ডার ও বোলার–উইকেটকিপারসহ আটজন মিলে অল্প জায়গাই কভার করা হয়। মাঠের বেশির ভাগ জায়গাই ব্যাটসম্যানের জন্য উন্মুক্ত থাকে। সুবিধা হচ্ছে, ব্যাটসম্যানের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করা যায়। খুব সহজে রান বা বাউন্ডারির সুযোগ নিতে প্রলুব্ধ হতে পারেন ব্যাটসম্যান, যা আদতে বোলিং দলের জন্যই ভালো। আবার বোলার ঠিক কী ধরনের বোলিং করতে পারেন এ নিয়ে বিভ্রান্তিতেও পড়তে পারেন ব্যাটসম্যান।স্টোকসের ব্রামব্রেলায় ইংল্যান্ডের লাভই হয়েছে। উসমান খাজা সাধারণত উইকেট ছেড়ে খেলেন না। কিন্তু ব্রামব্রেলা ফিল্ডিংয়ের সুবিধা নিতেই হয়তো রবিনসনকে উইকেট ছেড়ে জায়গা করে খেলার চেষ্টা করতে গেছেন তিনি। আর সেটা করতে গিয়েই ৭ ঘণ্টা ৫৮ মিনিট ক্রিজ আকড়ে থাকা খাজা ইয়র্কারে বোল্ড হন।

পন্টিং কখনো দেখেননি

৩২১ বল খেলা খাজাকে ইংল্যান্ড যেভাবে আউট করেছে, তাতে বিস্মিত হয়েছেন রিকি পন্টিং। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপজয়ী সাবেক অধিনায়ক স্টোকসের ফিল্ডিং সাজানো এবং এক পর্যায়ে খাজাকে আউট করতে পারা নিয়ে আইসিসি রিভিউতে বলেন, ‘টেস্ট ক্রিকেটে এমন ফিল্ডিং আমি আগে কখনো দেখেছি বলে মনে পড়ে না। ব্যাটসম্যানের মুখের সামনে ফিল্ডারদের ছাতা তৈরি করে রাখা হলো। এর পর কয়েকটি স্লোয়ার বলের পর একটা ইয়র্কার। এটা নিশ্চিত যে খাজা পা ব্যবহার করেছিলেন, স্টাম্প ছেড়ে দিয়ে কিছুটা জায়গা করে দিয়েছিলেন বোলারকে। এর পরই ইয়র্কারে স্টাম্পে আঘাত। এটা দুর্দান্ত একটা ব্যাপার। একটা দলকে এভাবে টেস্ট খেলতে দেখাটা খেলাটার জন্য সত্যিকারের সঞ্জিবনী।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য