স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,৩১ ডিসেম্বর: উত্তরাখন্ডের রুর্কি শহরের কাছে গুরুতর দুর্ঘটনায় পান্তের আহত হওয়ার খবর জানা এখন প্রায় সবারই। মাথা থেকে পা পর্যন্ত শরীরের নানা জায়গায় আঘাত পাওয়া কিপার-ব্যাটসম্যান এখন বিপদমুক্ত। অনেকটাই স্থিতিশীল আছে তার অবস্থা।পান্তের দুর্ঘটনা নিয়ে নানা কিছু অনুসন্ধানেই বেরিয়ে আসে সুশিল কুমারের কথা। দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর পান্ত বিপদমুক্ত হওয়ার কথা টুইটারে প্রথম জানিয়েছিলেন যিনি, সেই সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার ও জাতীয় একাডেমির প্রধান ভিভিএস লক্ষ্মণই পরে একটি টুইটে ধন্যবাদ জানান সুশিলকে।
“হরিয়ানা রোডওয়েজের বাস চালক সুশিল কুমারের প্রতি কৃতজ্ঞতা, যিনি জলন্ত গাড়ী থেকে রিশাভ পান্তকে বের করেছেন, চাদরে মুড়িয়েছেন এবং অ্যাম্বুলেন্স ডেকেছেন। সুশিলজি, আপনার এই নিঃস্বার্থ অবদানের জন্য আমরা আপনার প্রতি চিরঋণী।”পরে আরেকটি টুইটে লক্ষ্মণ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন কন্ডাক্টর পরমজিতের প্রতিও।বাংলাদেশ সফর শেষে কয়েকদিন পরই জাতীয় একাডেমিতে যোগ দিয়ে স্ট্রেংথ ও কন্ডিশনিং নিয়ে কাজ করার কথা পান্তের। এর আগে মাকে চমকে দিতে পরিবারের কাউকে না জানিয়েই তিনি হুট করে দিল্লি থেকে রুর্কি যাচ্ছিলেন বলে খবর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের। পুলিশ যা জানায়, তাতে শুক্রবার ভোর রাত সাড়ে ৫টার দিকে ওই দুর্ঘটনা ঘটে।
হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে কথোপকথনে দুর্ঘটনার সময়ের বর্ণনা দেন বাস চালক সুশিল কুমার।“আমি হরিয়ানা রোডওয়েজের চালক। ভোর ৪টা ২৫ মিনিটে বাস নিয়ে হরিদ্বার থেকে রওনা হই আমরা। পখে এগোচ্ছিলাম, হঠাৎ দেখি প্রচণ্ড গতিতে আসা একটি গাড়ী ভারসাম্য হারায় এবং ডিভাইডারে আঘাত করে। ধাক্কা লেগে গাড়ীটি রাস্তার উল্টো দিকে ছিটকে পড়ে, যে পথ দিল্লির দিকে গেছে।”“বিকট শব্দে গাড়িটি রাস্তার দ্বিতীয় লেনে পড়ে যায়। এটা দেখে আমি বাস ব্রেক করি। গাড়ীটি থেকে তখন আগুনের ফুলকি বের হচ্ছে। আমি আর কন্ডাক্টর তাই দ্রুত ছুটে গিয়ে তাকে গাড়ী থেকে বের করি। ততক্ষণে গাড়ীতে আগুন ধরে গেছে। এরপর আরও তিনজন লোক আসে এবং আমরা তাকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাই।”
সুশিল জানালেন, গাড়ী থেকে বের করার পরও তিনি বুঝতে পারেননি, আহত মানুষটি দেশের বড় এক তারকা।“ন্যাশনাল হাইওয়ের নম্বরে ফোন করি আমি, কেউ ধরেনি। এরপর পুলিশকে ফোন করি। কন্ডাক্টর ততক্ষণে অ্যাম্বুলেন্সের জন্য ফোন করে। আমরা তাকে জিজ্ঞেস করতে থাকি যে ভালো আছে কি না। পানি পান করতে দেই।”“একটু সামলে নিয়ে সে জানায় যে সে রিশাভ পান্ত। আমি ক্রিকেট দেখি না ততটা, তাই তাকে চিনতাম না। কিন্তু আমার কান্ডাক্টর তখন আমাকে বলল যে, ‘সুশিল… সে জাতীয় দলের ক্রিকেটার।”“সে (পান্ত) তার মায়ের নম্বর দিল আমাকে। আমরা কল করে ধেখি ফোন বন্ধ। ১৫ মিনিট পর অ্যাম্বুলেন্স আসে। আমরা তাকে সেটায় তুলে দেই… তাকে জিজ্ঞেস করি যে গাড়ীতে সে একাই ছিল কি না। সে জানায় যে আর কেউ নেই।”
পান্তকে শুরুতে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে তাকে স্থানান্তর করা হয় দেরাদুনের ম্যাক্স হাসপাতালে।ভারতীয় বোর্ড পরে বিবৃতিতে জানায়, পান্তের কপালে দুই জায়গায় কেটে গেছে, ডান হাঁটুর একটি লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেছে। এছাড়াও তিনি আঘাত পেয়েছেন ডান কবজিতে, অ্যাঙ্কেলে, পায়ের অগ্রভাগে। পিঠে ঘর্ষণজনিত চোটও আছে। বড় স্বস্তির ব্যাপার যে, তার মাথা ও মেরুদন্ডের এমআরআই স্ক্যানে খারাপ কিছু ধরা পড়েনি। হাঁটু ও অ্যাঙ্কেলের স্ক্যান করানোর কথা দু-একদিনের মধ্যে।নতুন বছরের শুরুতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সীমিত ওভারের সিরিজের ভারতীয় দলে পান্তকে রাখা হয়নি। ফেব্রুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের প্রস্তুতির জন্য এই সময়টায় জাতীয় একাডেমিতে কাজ করার কথা তার। কিন্তু দুর্ঘটনার পর এখন তাকে লম্বা সময় থাকতে হবে মাঠের বাইরে। শরীরের নানা জায়গায় চোট তো আছেই, লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেলে তা ঠিক হতে সাধারণত সময় লাগে তিন থেকে ছয় মাস।