Friday, May 30, 2025
বাড়িখেলাএমবাপেকে ভুল প্রমাণের সুযোগ মেসিদের সামনে

এমবাপেকে ভুল প্রমাণের সুযোগ মেসিদের সামনে

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ১৬ ডিসেম্বর: এমবাপের গত মে মাসে বলা সেই তীর্যক মন্তব্য ফের উঠে এসেছে আলোচনার টেবিলে। কাতার বিশ্বকাপের ফাইনাল সামনে রেখে। এমবাপের ভাষায় এগিয়ে থাকা ইউরোপের দল ফ্রান্স, পিছিয়ে থাকা লাতিনের প্রতিনিধি আর্জেন্টিনা মুখোমুখি এবারের মহারণে। মেসিদের সামনে তাই মাঠের খেলা দিয়ে এমবাপেকে ভুল প্রমাণের সুযোগও এটি। এবারের আসরের পথচলায় হার-জিতে দুই দল সমানে সমান। যদিও দুই দল হয়েছিল গ্রুপ সেরা, কিন্তু ওই পর্বেই একটি করে ম্যাচ হেরেছিল তারা। সৌদি আরবের কাছে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মেসির গোলে এগিয়ে গিয়েও ২-১ ব্যবধানে হারে আর্জেন্টিনা। টানা দুই জয়ের পর ফ্রান্সের তরি ডোবে পেছনের সারির দল তিউনিসিয়ার বিপক্ষে হেরে। গ্রুপ পর্বে দুই দলের তিন ম্যাচের পয়েন্ট ৬ করে। আর্জেন্টিনা পাঁচ গোল দিয়ে হজম করে দুটি; ফরাসিরা ছয়টি দিয়ে তিনটি। নকআউট পর্বের পথচলায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মেসিদের জয় ২-১ গোলে, পোল্যান্ডকে ৩-১ গোলে হারায় এমবাপেরা। কোয়ার্টার-ফাইনালের বৈতরণী পেরুতে ঘাম ছুটে যায় দুই দলেরই। যদিও আর্জেন্টিনা শুরুতে ছিল অনায়াস জয়ের পথে। নাহুয়েল মোলিনা ও মেসির গোলে জয়ের পথে ছুটতে থাকা আর্জেন্টিনার রাশ শেষ দিকে টেনে ধরেন ভঠ ভেহর্স্ট। ২-২ সমতার পর টাইব্রেকারে গড়ানো ম্যাচে এমিলিয়ানো মার্তিনেসের মুগ্ধতা ছড়ানো পারফরম্যান্সে ৪-৩ গোলে জিতে আর্জেন্টিনা। 

আল বাইত স্টেডিয়ামে অহেলিয়া চুয়ামেনির গোলে এগিয়ে গেলেও ফরাসিদের স্বস্তি কেড়ে নেন হ্যারি কেইন। স্পট কিক থেকে সমতায় ফেরান দলকে। পরে কেইনের আরেকটি পেনাল্টি মিস আর অলিভিয়ে জিরুদের গোলে পার হয় ফ্রান্স। সেমি-ফাইনালের পথ দুই দল পাড়ি দিয়েছে ভিন্নভাবে। মেসি-আলভারেসদের ডানায় চেপে আর্জেন্টিনা ছিল রীতিমতো অবিশ্বাস্য। ক্রোয়াশিয়াকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দেয় ১৯৮৬ সালে সবশেষ বিশ্বকাপ জেতা আলবিসেলেস্তেরা। নেয় ২০১৮ সালে একই ব্যবধানে গ্রুপ পর্বে হেরে যাওয়ার মধুর প্রতিশোধও।বৈশ্বিক ফুটবলে পেছনের বেঞ্চের দল মরক্কো আড়মোড় ভেঙে জেগে ওঠায় কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয় ফরাসিদের। যদিও স্কোরলাইন ২-০, কিন্তু এই জয়ের ভেতরে উত্তর আফ্রিকার দলটির কাছে দফায় দফায় দেশমের দলের প্রবল ঝাঁকুনি খাওয়ার গল্পও আছে লুকিয়ে। এবারের আসরেও গোলের পাতায় দারুণ লড়াই চলছে ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার খেলোয়াড়দের। গতি, ক্ষিপ্রতায় পাঁচ গোল নিয়ে তালিকায় শীর্ষে ছিলেন ফরাসি ফরোয়ার্ড এমবাপে। স্কিল আর শৈল্পিক ছোঁয়ায় পাঁচ গোল করে মেসিও ছুঁয়ে ফেলেছেন পিএসজি সতীর্থকে। 

এই তালিকায় পরের দুজনও দুই মহাদেশের। ৪টি করে গোল ফ্রান্সের অলিভিয়ে জিরুদের ও আর্জেন্টিনার হুলিয়ান আলভারেসের। গ্রুপ পর্বে জিরুদ দুটি ও আলভারেস একটি গোল পান। নকআউট পর্বে জিরুদ দুই বার, আলভারেস তিনবার পান জালের দেখা। মোটামুটি সব পাতায় বরাবরের মতো ইউরোপ-লাতিনের জমজমাট লড়াই চলছে। ফাইনালের পথচলায় ঝরে পড়াদের তালিকায় বরং ইউরোপের দলই বেশি! আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের বাইরে লাতিন আমেরিকার আর কোনো দলের নামের সঙ্গে সেঁটে ছিল না ‘ফেভারিট’-এর তকমা। বরং ফ্রান্স ছাড়াও জার্মানি, ইংল্যান্ড, স্পেনকেও রেখেছিলেন অনেকে। চারবারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানির বিদায়ঘণ্টা বাজে গ্রুপ পর্বে। রেকর্ড পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল ছিটকে যায় কোয়ার্টার-ফাইনাল থেকে; এই ধাপ থেকে ১৯৬৬ সালের প্রথম ও সবশেষ বিশ্বকাপ জেতা ইংল্যান্ডের পথ চলা থামে ফ্রান্সের কাছে হেরে। মরক্কোর ঝড়ে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালের ঝরে যাওয়াও এই সেরা আট থেকেই। সেমি-ফাইনালের চার দলের মধ্যে ইউরোপের দুটি-ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়া, গত আসরের ফাইনালিস্ট তারা। বাকি দুই দল লাতিনের আর্জেন্টিনা, আফ্রিকার মরক্কো। গতবারের রানার্সআপ ক্রোয়াটদের উড়িয়ে দিয়ে লুসাইলের মঞ্চে উঠে এসেছে আর্জেন্টিনা। মরক্কোর বিপক্ষে স্বস্তির জয়ে মুকুট ধরে রাখার মিশনের শেষ ধাপে পৌঁছেছে ফ্রান্স। এ পর্যন্ত হওয়া ২১টি বিশ্বকাপে অবশ্য ইউরোপের আধিপত্য বেশি। জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড ও স্পেন মিলিয়ে ইউরোপে উৎসব হয়েছে ১২বার। ব্রাজিল, উরুগুয়ে ও আর্জেন্টিনায় লাতিনের শোকেসে ট্রফি ৯টি। এই তালিকায় আবার রেকর্ড পাঁচ শিরোপা দক্ষিণ আমেরিকার দল ব্রাজিলের।বিশ্বকাপের ২২তম শিরোপা তাই দুই মহাদেশের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই নয়, এমবাপের বাঁকা মন্তব্যের জবাব দেওয়ার মঞ্চও হয়ে উঠেছে মেসি-দি মারিয়াদের কাছে।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য

error: <b>Alert: </b>Content selection is disabled!!