স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা, ১৩ জুলাই : বাম ঘাঁটিতে টানটান পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে রবিবার দুপুরে রাজনগর জেলা পরিষদের প্রাক্তন প্রার্থী বাদল শীলের বর্ষপূর্তি স্মরণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সমাবেশে গিয়ে শাসক দল বিজেপি-র গনা কয়েক মহিলার বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকে। গাড়ি থেকে নামার আগেই চোত্তাখলায় রাস্তা রুখে শাসক দলের পতাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন গনা কয়েক মহিলা। স্লোগান দেয় মানিক সরকার হায় হায়, ভারত মাতা কি জয়। কিছুক্ষণ বিক্ষোভ চলার পর সিপিআইএম দলীয় কর্মী সমার্থক এবং পুলিশের চেষ্টায় সমাবেশ স্থলে গিয়ে পৌঁছান প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। যথারীতি সমাবেশ শুরু হলেও অভ্যাস বদলাতে পারল না এলাকার শাসক দল।
রীতিমতো বিরোধীদল সিপিআইএমের আয়োজিত শোক সমাবেশ পন্ড করে দিতে উচ্চস্বরে সাউন্ড বক্স ব্যবহার করেছে। কিন্তু তার মধ্যে দিয়েই চলে বিলোনিয়া সিপিআইএম মহকুমা কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত বর্ষপূর্তি শোক সমাবেশ। উপস্থিত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার বক্তব্য রেখে বলেন, ২০২৪ সালে তিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজনগরের জেলা পরিষদের প্রার্থী বাদল শীল মনোনয়ন পত্র দাখিল করার পর তাকে খুন করেছিল দুষ্কৃতিকারীরা। অভিযোগের আঙ্গুল উঠেছিল শাসক দলের দিকেই। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানোর ভাষা পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছে রাজ্যবাসী। তিনি রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, বিদ্যালয় শিক্ষক নেই, ছেলেমেয়েরা কিভাবে ভালো ফলাফল করবে? হাসপাতালে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও নার্সের অভাব। পাশাপাশি হাসপাতালে মিলছে না রোগীদের কোন ঔষধ। অপরদিকে গ্রামের হাসপাতাল গুলি অবস্থা অত্যন্ত অসহনীয়। রোগীরা গেলে তাদের ভর্তি রাখতে চান না চিকিৎসকরা। চিকিৎসকরা জানেন রোগী ভর্তি করলে সুস্থ হয়ে বাড়ি যাবে অবশ্যই, কিন্তু রোগীকে খাবার দেওয়ার মত টাকা নেই। তাই শহরের হাসপাতাল গুলিতে রেফার করে দিচ্ছে। কিন্তু আবার দেখা যায় রোগীকে শহরে হাসপাতালে পাঠানোর জন্য অ্যাম্বুলেন্সের তেল নেই। পরে রোগীর পরিবারের কাছে টাকা চায় এম্বুলেন্স চালক। বর্তমান সরকার এমন পর্যায়ে ত্রিপুরাকে নিয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
তিপরা মথাকে কাঠগড়ায় তুলে বলেন, ত্রিপুরার দুই তৃতীয়াংশ এলাকার নিয়ে উপজাতি অধ্যুষিত এলাকা। এই এডিসি চার বছর আগে দখল করেছে তিপরা মথা। কিন্তু কোন কাজ করছেন না তারা। গত এক বছর আগে তিন শতাধিক সরকারি কর্মচারী অবসরে গেছেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো, তাদের এখন পর্যন্ত আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হয়নি। এখন তারা বলছে তাদের কাছে টাকা নেই অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা মিটিয়ে দেওয়ার। কিন্তু তিপরা মথার দুজন মন্ত্রী বর্তমান সরকার পরিচালনার জন্য সহযোগিতা করছে। তারপরেও সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে টাকা আনার বন্দোবস্ত করছেন না অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের জন্য। ফলে এডিসি এলাকায় অর্থ সংকট, খাদ্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ফলে মানুষ সন্তান বিক্রি করছে এবং মৃত্যুর মুখে পড়ছে। তাদের খোঁজ নেওয়ার কেউ নেই। যা কিছু টাকা পয়সা আছে সেগুলি দিয়ে এডিসির নেতৃত্ব লন্ডনে যাচ্ছেন ফুর্তি করবার জন্য। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার আরো বলেন, চাকরি নেই। দু-তিন বছর আগে যারা চাকরির পরীক্ষা দিয়েছিল তাদের ফলাফল ঘোষণা হচ্ছে না। তারা যখন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছে তখন তাদের পুলিশ দিয়ে লাঠিপেটা করে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হচ্ছে। পরে চাকরি প্রত্যাশীদের জামিন নিয়ে জেল থেকে বের হয়ে আসতে হয়। অথচ বিধানসভায় সরকার হিসাব দিয়ে বলছে ১৫ হাজার শিক্ষক পদ শূন্য পড়ে আছে। সারা রাজ্য জুড়ে এমন অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়ে আছে বলে জানান তিনি। রাজ্যে ফ্যাসিস্ট সুলভ সন্ত্রাস, অর্থনৈতিক লুণ্ঠন এবং গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে প্রচারণের মাধ্যমে সরকার ও এডিসি দখল করে অত্যাচারের স্টিল রোলার চালানোর চেষ্টা করছে। তিনি আরো বলেন, এই পরিস্থিতিতে সকলকে ঘর থেকে বের হয়ে প্রতিবাদ ব্যক্ত করতে হবে। কারণ এই জনগণের দুশমন সরকার মনে করছে ভোট জালিয়াতি করে, দুর্বৃত্তদের ব্যবহার করে এবং সন্ত্রাস করে ক্ষমতা দখল করে লুটের রাজত্ব তারা চালাবে। তাই তাদের বিরুদ্ধে শক্তি প্রসারিত করে ক্ষমতাচ্যুত করতে হবে জনগণকে। পাশাপাশি জনগণের শত্রু এই সরকারকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে বলে জানান তিনি। আয়োজিত এদিনের সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক সুধন দাস, প্রয়াত বাদল শীলের স্ত্রী ও কন্যা সহ অন্যান্যরা।