Thursday, March 28, 2024
বাড়িখেলা২০০২ বিশ্বকাপ: অঘটনের আসরে ব্রাজিলের ‘পঞ্চম’

২০০২ বিশ্বকাপ: অঘটনের আসরে ব্রাজিলের ‘পঞ্চম’

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা,১৬ নভেম্বর: বিশ্বকাপের সপ্তদশ আসরে আয়োজনে আগ্রহী ছিল মেক্সিকো। তাদের পেছনে ফেলে ১৯৯৬ সালের ৩১ মে যৌথভাবে আয়োজনের সুযোগ পেয়ে যায় এশিয়ার দুই দেশ। ২০০২ সালের ৩১ মে থকে ৩০  জুন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত টুর্নামেন্টের প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নেয় গত আসরের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। সেই মৌসুমে ইউরোপের সেরা পাঁচ লিগের তিনটির শীর্ষ গোলদাতা ছিল দলে, তবুও কোনো গোল দিতে পারেনি ফ্রান্স! দ্বিতীয় ফেভারিট আর্জেন্টিনাও বিদায় নেয় গ্রুপ পর্বেই। একই পরিণতি হয় উরুগুয়ে ও পর্তুগালের।    এই আসর দিয়েই সমাপ্তি ঘটে আগের আসরের চ্যাম্পিয়ন দলের সরাসরি খেলা এবং ‘গোল্ডেন গোল’ নিয়মের। দুই স্বাগতিক জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সরাসরি খেলে শিরোপাধারী ফ্রান্স। ২৯ দেশ আসে বাছাই পর্ব পেরিয়ে। এর মধ্যে ইউরোপের ছিল ১৪টি। লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকা থেকে আসে পাঁচটি করে। এশিয়া থেকে দুটি এবং কনমেবল অঞ্চল থেকে তিনটি দল অংশ নেয় টুর্নামেন্টে।  

গ্রুপ পর্ব 

আট গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দল যায় দ্বিতীয় রাউন্ডে। সেখান থেকেই শুরু হয় নক আউট পর্ব। এরপর ধাপে ধাপে হয় কোয়ার্টার-ফাইনাল, সেমি-ফাইনাল ও ফাইনাল।  

গ্রুপ ‘এ’: ফ্রান্স, ডেনমার্ক, উরুগুয়ে, সেনেগাল

গ্রুপ ‘বি’: স্পেন, প্যারাগুয়ে, স্লোভেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা

গ্রুপ ‘সি’: ব্রাজিল, তুরস্ক, কোস্টা রিকা, চিন

গ্রুপ ‘ডি’: দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, পোল্যান্ড, পর্তুগাল

গ্রুপ ‘ই’: জার্মানি, আয়ারল্যান্ড, ক্যামেরুন, সৌদি আরব

গ্রুপ ‘এফ’: ইংল্যান্ড, সুইডেন, আর্জেন্টিনা, নাইজেরিয়া

গ্রুপ ‘জি’: মেক্সিকো, ইতালি, ক্রোয়েশিয়া, একুয়েডর

গ্রুপ ‘এইচ’: জাপান, বেলজিয়াম, রাশিয়া, তিউনিসিয়া 

গ্রুপ ‘এ’ থেকে দ্বিতীয় রাউন্ডে যায় ডেনমার্ক ও সেনেগাল। বিদায় নেয় দুই সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে ও ফ্রান্স।    

দুই জয় ও এক ড্রয়ে ৭ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ সেরা হয় ডেনমার্ক। এক জয় ও দুই ড্রয়ে ৫ পয়েন্ট নিয়ে রানার্সআপ সেনেগাল। তাদের একমাত্র জয়টি আসে ফ্রান্সের বিপক্ষে। দুই ড্রয়ে ২ পয়েন্ট পায় উরুগুয়ে, ১ পয়েন্ট নিয়ে তলানিতে থেকে বিদায় নেয় ফ্রান্স। গ্রুপ ‘বি’ থেকে পরের রাউন্ডে যায় স্পেন ও প্যারাগুয়ে। তিন জয়ে ৯ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ সেরা হয় স্পেন, একটি করে জয় ও ড্রয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে তাদের সঙ্গী হয় প্যারাগুয়ে। লাতিন আমেরিকার দেশটির মতো ৪ পয়েন্ট পায় দক্ষিণ আফ্রিকাও। তবে গোল পার্থক্যে পিছিয়ে থাকায় বিদায় নিতে হয় তাদের। সব ম্যাচ হেরে শূন্য হাতে ফেরে স্লোভিনিয়া। গ্রুপ ‘সি’ থেকে দ্বিতীয় রাউন্ডে যায় ব্রাজিল ও তুরস্ক। তিন জয়ে ৯ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ সেরা হয় ব্রাজিল। একটি করে জয় ও ড্রয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে তাদের সঙ্গী হয় তুরস্ক। কোস্টা রিকাও পায় ৪ পয়েন্ট। তবে গোল পার্থক্যে তুরস্কের চেয়ে পিছিয়ে থাকায় বিদায় নেয় কনমেবল অঞ্চলের দেশটি। তিন ম্যাচেই হারে এশিয়ার দেশ চীন।  

গ্রুপ ‘ডি’ থেকে কোয়ার্টার-ফাইনালে যায় দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। দুই জয় ও এক ড্রয়ে ৭ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় দক্ষিণ কোরিয়া। এক জয়ের সঙ্গে তাদের বিপক্ষে এক ড্রয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে রানার্সআপ যুক্তরাষ্ট্র।   ইউরোপের দুই দেশ পর্তুগাল ও পোল্যান্ড পায় একটি করে জয়। টুর্নামেন্টে টিকে থাকার জন্য যা যথেষ্ট ছিল না। গ্রুপ ‘ই’ থেকে কোয়ার্টার-ফাইনালে যায় জার্মানি ও আয়ারল্যান্ড। দুই জয় ও এক ড্রয়ে অনুমিতভাবে গ্রুপ সেরা হয় জার্মানি। এক জয় ও দুই ড্রয়ে রানার্সআপ আয়ারল্যান্ড। একটি করে জয় ও ড্রয়ে আশা জাগিয়েছিল ক্যামেরুন। তবে শেষ ম্যাচে জার্মানির বিপক্ষে হেরে বিদায় নেয় আফ্রিকার দেশটি। সৌদি আরব হারে তিন ম্যাচেই, হজম করে ১২ গোল। দিতে পারেনি একটিও। তাদের বিপক্ষেই হ্যাটট্রিক করেন জার্মানির মিরোস্লাভ ক্লোসা। 

গ্রুপ ‘এফ’ থেকে কোয়ার্টার-ফাইনালে যায় সুইডেন ও ইংল্যান্ড। একটি করে জয় ও দুটি ড্রয়ে ৫ পয়েন্ট করে পায় এই দুই দল। গোল বেশি করায় গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় সুইডেন, রানার্সআপ ইংল্যান্ড। একটি করে জয় ও ড্রয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় হয় আর্জেন্টিনা। ১৯৬২ সালের পর প্রথমবার দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে ব্যর্থ হয় দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। ১ পয়েন্ট নিয়ে তলানিতে থেকে আসর শেষ করে নাইজেরিয়া। গ্রুপ ‘জি’ থেকে শেষ ষোলোয় যায় মেক্সিকো ও ইতালি। দুই জয় ও এক ড্রয়ে ৭ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ সেরা হয় মেক্সিকো। একটি করে জয় ও ড্রয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে রানার্সআপ ইতালি।একটি করে জয় পায় ক্রোয়েশিয়া ও একুয়েডর। পরের ধাপে যাওয়ার জন্য যা যথেষ্ট ছিল না। গ্রুপ ‘এইচ’ থেকে শেষ ষোলোয় যায় জাপান ও বেলজিয়াম। দুটি জয় ও একটি ড্রয়ে গ্রুপ সেরা হয় জাপান। এক জয় ও দুই ড্রয়ে ৫ পয়েন্ট নিয়ে রানার্সআপ বেলজিয়াম। জয় দিয়ে আসর শুরুর পর টানা দুই হারে আগেভাগেই বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যায় রাশিয়ার। তিউনিসিয়া এক পয়েন্ট নিয়ে থাকে তলানিতে। 

দ্বিতীয় রাউন্ড 

শেষ ষোলোয় মুখোমুখি হয়: জার্মানি-প্যারাগুয়ে, ইংল্যান্ড-ডেনমার্ক, সেনেগাল-সুইডেন, স্পেন-আয়ারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো, ব্রাজিল-বেলজিয়াম, জাপান-তুরস্ক ও দক্ষিণ কোরিয়া-ইতালি।১৫ জুনের প্রথম ম্যাচে ৮৮তম মিনিটে গোলে প্যারাগুয়েকে হারায় জার্মানি। দিনের পরের ম্যাচে ডেনমার্কের বিপক্ষে ৩-০ গোলে জেতে ইংল্যান্ড। পরদিন অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো প্রথম ম্যাচে ২-১ ব্যবধানে জেতে সেনেগাল। ১১তম মিনিটে এগিয়ে যায় সুইডেন। ৩৭তম মিনিটে সমতা ফেরান হেনরি কামারা। পরে ১০৪তম মিনিটে তার গোল্ডেন গোলেই নির্ধারিত হয়ে যায় ম্যাচের ভাগ্য। দিনের অন্য ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। অষ্টম মিনিটে এগিয়ে যায় স্পেন। সফল স্পট কিকে ৯০তম মিনিটে সমতা ফেরায় আয়ারল্যান্ড। টাইব্রেকারে আর পারেনি তারা, হেরে যায় ৩-২ ব্যবধানে। ১৭ জুন মহাদেশীয় প্রতিপক্ষ মেক্সিকোকে ২-০ গোলে হারায় যুক্তরাষ্ট্র। রিভালদো ও রোনালদোর গোলে একই ব্যবধানে বেলজিয়ামের বিপক্ষে জেতে ব্রাজিল। পরদিন জাপানকে ১-০ গোলে হারায় তুরস্ক। দিনের অন্য ম্যাচে ১৮তম মিনিটে এগিয়ে যায় ইতালি। ৮৮তম মিনিটে সমতা ফেরায় দক্ষিণ কোরিয়া। পরে ১১৭তম মিনিটে গোল্ডেন গোলে ইতালিকে বিদায় করে দেয় তারা।   

কোয়ার্টারফাইনাল 

শেষ আটে মুখোমুখি হয়: ব্রাজিল-ইংল্যান্ড, জার্মানি-যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন-দক্ষিণ কোরিয়া ও তুরস্ক-সেনেগাল। ২১ জুন সেমি-ফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে নামে দুই সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড ও ব্রাজিল। ২৩তম মিনিটে ইংল্যান্ডকে এগিয়ে নেন মাইকেল ওয়েন। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে সমতা ফেরান রিভালদো। দ্বিতীয়ার্ধের শুরু ব্রাজিলকে এগিয়ে নেন রোনালদিনিয়ো। সেই গোলেই শেষ চারে যায় ব্রাজিল। দিনের অন্য ম্যাচে মাইকেল বালাকের একমাত্র গোলে যুক্তরাষ্ট্রকে হারায় জার্মানি। পরদিন ৯০ মিনিটের পর অতিরিক্ত সময়েও গোলশূন্য থাকে দক্ষিণ কোরিয়া ও স্পেনের লড়াই। টাইব্রেকারে ৫-৩ গোলে জিতে এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে সেমি-ফাইনালে যায় দক্ষিণ কোরিয়া। দিনের অন্য ম্যাচে সেনেগালকে ১-০ গোলে হারায় তুরস্ক। নির্ধারিত ৯০ মিনিটে গোল পায়নি কোনো দলই। ৯৪তম মিনিটে গোল্ডেন গোলে ব্যবধান গড়ে দেন ইলহান মানসিজ।   

সেমিফাইনাল 

২৫ জুন সিউলে মুখোমুখি হয় জার্মানি ও দক্ষিণ কোরিয়া। স্বাগতিকদের স্বপ্ন যাত্রা থামান বালাক। তার ৭৫তম মিনিটের গোলে ফাইনালে যায় জার্মানি।    পরদিন একই ব্যবধানে তুরস্ককে হারায় ব্রাজিল। ৪৯তম মিনিটে ব্যবধান গড়ে দেওয়া গোলটি করেন রোনালদো। ইতিহাসের মাত্র দ্বিতীয় দল হিসেবে টানা তৃতীয়বার ফাইনালে যায় ব্রাজিল। ২৯ জুন তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে ৩-২ গোলে দক্ষিণ কোরিয়াকে হারায় তুরস্ক। বিশ্বকাপে এটাই তাদের সেরা ফল। মাত্র ১০.৮ সেকেন্ডে জালের দেখা পান হাকান সুকুর। বিশ্বকাপের ইতিহাসে যা দ্রুততম গোল। পরে জোড়া গোল করেন ইলহান। 

ফাইনাল 

৩০ জুন, ২০০২। ইয়োকোহামা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে ৬৯ হাজারের বেশি দর্শক সামনে লড়াইয়ে নামে ব্রাজিল ও জার্মানি। গোল শূন্য প্রথমার্ধের পর ৬৭ ও ৭৯তম মিনিটে দুই গোল করেন রোনালদো। তার নৈপুণ্যে ২-০ গোলে পঞ্চম শিরোপা জেতে ব্রাজিল। ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টানা তিনটি আসরের ফাইনালে খেলা কাফু দলের হয়ে গ্রহণ করেন ট্রফি।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য