Saturday, June 14, 2025
বাড়িখেলাইডেনের নরক থেকে মেলবোর্নের স্বর্গে স্টোকস

ইডেনের নরক থেকে মেলবোর্নের স্বর্গে স্টোকস

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা, ১৪ নভেম্বর: কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে শেষ ওভারে তার ওপর ভরসা রেখেছিল দল। টানা চারটি ছক্কা হজম করে অবিশ্বাস্যভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ট্রফি তুলে দিয়েছিলেন তিনি। টানা চার ছক্কার নায়ক কার্লোস ব্র্যাথওয়েটক ঘিরে যখন ক্যারিবিয়ানদের উল্লাস চলছিল, পাশেই ভেঙে পড়া স্টোকসকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন সতীর্থরা।সাড়ে ৬ বছর পর আরেকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে সেই স্টোকসই দলকে জিতিয়ে হুঙ্কার ছুড়লেন। আনন্দে পিঠে চড়ে বসলেন উইকেটে তার সঙ্গী লিয়াম লিভিংস্টোন। পাকিস্তানিদের সবুজ বেদনার পাশেই স্টোকসকে ঘিরে লাল উৎসবে মেতে উঠল ইংলিশরা।এই দিনটি স্টোকসের দরকার ছিল। এই মুহূর্তটির অপেক্ষা ছিল।ক্যারিয়ারে এখনও পর্যন্ত যা করেছেন স্টোকস, ইংল্যান্ডের সমৃদ্ধ ক্রিকেট ইতিহাসে আলাদা জায়গা তিনি পাকা করে ফেলেছেন। গৌরবময় সেই উপাখ্যানে বড় কালির ছোপ ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল। তার মতো একজন গ্রেটের জন্য বড় অস্বস্তির অধ্যায়ও।সেই স্মৃতিকে মিলিয়ে দেওয়ার উপায় নেই। তবে কিছুটা ভুলিয়ে রাখার সুযোগ ছিল। ওই ওভার নতুন করে করার সুযোগ নেই। তবে তা আড়াল করে রাখার সুযোগ ছিল সাফল্যের নতুন স্মৃতি গড়ে।

বেন স্টোকস অবশেষে তা পারলেন।হয়তো প্রায়শ্চিত্তের ব্যাপার এটি নয়। ২০১৬ সালের ওই আসরের পর অসাধারণ সব পারফরম্যান্স তিনি উপহার দিয়েছেন। ক্রিকেটের জনকদের চিরন্তন আক্ষেপ মিটিয়েছেন ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতিয়ে। নিজেকে অমর করে রাখার আয়োজন করে চলেছেন তিনি অনেক দিন ধরেই। তবে বড় একটা অপূর্ণতা তো ছিলই। টি-টোয়েন্টির আন্তর্জাতিক আঙিনায়ও ছাপ রাখার ব্যাপার ছিল।এই ফাইনাল, এই ট্রফি স্টোকসের জন্য প্রায়শ্চিত্ত না হোক, প্রাপ্তি তো বটেই।একটা সময় মনে হচ্ছিল, সুযোগটি তিনি হয়তো পাবেন না। টেস্ট আর ওয়ানডের ব্যস্ততায় জাতীয় দলে টি-টোয়েন্টিতে তাকে দেখা যায়নি খুব একটা। চোটাঘাত থেকে বাঁচাতে বিশ্রামও দেওয়া হয় নানা সময়। এবার অস্ট্রেলিয়া সফর শুরুর আগে ১১ বছরের ক্যারিয়ারে ইংল্যান্ডের জার্সিতে তার টি-টোয়েন্টি ছিল মোটে ৩৪টি।এই সংখ্যা আর বাড়ার বাস্তব কারণ খুব একটা ছিল না। গত বছর মানসিক অবসাদের কারণে খেলেননি বিশ্বকাপ। টেস্ট দলের অধিনায়ক হওয়ার পর টি-টোয়েন্টি খেলার বাস্তবতাও কমে আসে অনেকটাই। ইংল্যান্ডের হয়ে তাই স্টোকসকে আবার এই সংস্করণে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল সামান্যই।

কিন্তু ওই যে, তার কিছু পাওয়ার আছে। কিছু হিসাব চুকানোর আছে। কিছু প্রতিদান দেওয়ার আছে। চারপাশের সবকিছু তাই যেন মেলবোর্নের এই উপলক্ষ সাজিয়ে দেয়।

দেড় বছরের বেশি সময় পর টি-টোয়েন্টি দলে তাকে ফেরানো হয়। অবশ্যই দলের কিছু সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও ভাবনা ছিল তাকে নিয়ে। তবে তার জন্য এটিই ছিল সুযোগ। হয়তো এই সংস্করণে শেষ সুযোগও। তাকে লুফে নিতেই হতো।বিশ্বকাপের আগে অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি সিরিজ কিংবা বিশ্বকাপেও ফাইনালের আগ পর্যন্ত ভালো কিছু যদিও করতে পারেননি। উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্স ছিল স্রেফ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩৬ বলে অপরাজিত ৪২। তবে ফাইনালে দলের প্রয়োজনে সব পুষিয়ে দিলেন যেন।বল হাতে একটি উইকেট নেন দারুণ ডেলিভারিতে। এরপর ব্যাটিংয়ে দুরন্ত ঝঞ্ঝায় দলের হাল ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ। পরিস্থিতিই তাকে সুযোগ করে দেয়, তিনি নায়ক হয়েই মাঠ ছাড়েন।খুব বড় কিছু নয়। বিধ্বংসী বা চোখধাঁধানো কিছু নয়। ৪৯ বলে ৫২ রানের ইনিংস। টি-টোয়েন্টিতে বেশির ভাগ দিনই এমন ইনিংস উল্টো দলকে বিপদে ফেলবে। কিন্তু এ দিনের পরিস্থিতির বিবেচনায়, এই ম্যাচের দাবি অনুযায়ী এই ইনিংসটিই মহামূল্য। দল তার কাছ থেকে ঠিক এটিই চাইছিল।

শুধু রান-বলের সমীকরণের দিক থেকে নয়, ব্যাটিংয়ের ধরনেও খুব আদর্শ ছিল না ইনিংসটি। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিজের চেনা সাবলীল ছন্দে তাকে দেখা যায়নি। বলের পর বল অল্পের জন্য তার ব্যাটের কানা নেয়নি। টাইমিং করতে ধুঁকেছেন। কিন্তু আসল কাজটি করেছেন। হাল ছাড়েননি। নিজের ইগোর সঙ্গে আপোস করে উইকেটে পড়ে থেকেছেন। দলের ডাক শুনেছেন। নিজের ভেতরে আহ্বানও হয়তো শুনেছেন। ২০১৬ সালে পারেননি। এবার পারতেই হবে।পারতেই হতো। তিনি পেরেছেন। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি উপহার দিয়েছেন এই ম্যাচেই। শেষ পর্যন্ত থেকেছেন। জয়সূচক রানটি নিয়েছেন। উল্লাসে ফেটে পড়েছেন। ২০১৬ সালের দুঃস্বপ্ন মাটিচাপা দিয়েছেন।ম্যাচ শেষে অধিনায়ক জস বাটলার বললেন, স্টোকসকে ধুঁকতে দেখেও তারা বিশ্বাস হারাননি।“মোটেও অবাক হইনি। সে তো সত্যিকারের ম্যাচ উইনার। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সে আগেও ছিল এবং জিতিয়েছে। সে খুব ভালো করেই জানে, এই সময়ে কী করতে হয়। এটা অবশ্যই খুব মসৃণ ইনিংস ছিল না। খুব ভালো টাইমিং করতে পারেনি। তবে এটা জানা কথাই যে, সে লড়াই ছাড়বে না এবং শেষ পর্যন্ত থাকবে।”

“তার মতো একজনকে পাওয়া আমাদের দলের জন্য সৌভাগ্যের। ইংলিশ ক্রিকেটের গ্রেটদের একজন সে।”‘গ্রেটদের একজন নাকি সর্বকালের সেরা?’, এই প্রশ্নও উঠল। গত কয়েক বছরে সব সংস্করণেই ইংলিশ ক্রিকেটের সাফল্যে তার যে অবদান, যে প্রভাব, যে সার্বিক ছাপ, তাতে প্রশ্নটি খুব অবান্তরও নয়। বাটলার অবশ্য নিরাপদ উত্তরের পথ বেছে নিলেন, “সে নিশ্চিতভাবেই (সর্বকালের সেরার) আলোচনায় থাকবে।”তবে তাকে যেমন স্রেফ কিছু সংখ্যা দিয়ে বিচার করা যায় না, তেমনি গ্রেটদের সঙ্গে তুলনা বা মাপার আলোচনাও হয়তো জরুরি নয়। অনেক আগে আসলে ছাড়িয়ে গেছেন চেনা অনেক সীমানাই। মানসিক অবসাদের কারণে গত বছর তার ক্যারিয়ার নিয়েই ছিল শঙ্কা। সেই তিনি মাঠে ফিরে ইংল্যান্ডের টেস্ট অধিনায়ক হয়ে সাদা পোশাকে নতুন ঘরানার বিপ্লব আনার পথে। যাকে আবার টি-টোয়েন্টি দলে দেখা যাবে না বলেই মনে করা হয়েছিল, তিনি এখন বিশ্বকাপ ফাইনালের নায়ক।তার গ্রেটনেসের পরিমাণ মেপে তাই তল পাওয়া যাবে না। তিনি রূপকথা হয়ে গেছেন আগেই!

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য

error: <b>Alert: </b>Content selection is disabled!!