স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা, ১৪ নভেম্বর: বিশ্বকাপের মঞ্চে স্পেনের পাসিং ফুটবলের সুর, তিকি-তাকার ছন্দ পূর্ণতা পেয়েছিল ২০১০ সালে। জোহানেসবার্গের ফাইনালে আন্দ্রেয়াস ইনিয়েস্তার একমাত্র গোলে নেদারল্যান্ডসকে হারানোর মধ্য দিয়ে। কিন্তু এবার শাভি এরনান্দেস, ইনিয়েস্তার মতো সুরেলা শিল্পীরা নেই স্পেনের তাবুতে। অস্কার ব্রুসন তাই খুব জোর গলায় বলতে পারছেন না, এবার তার দেশই হবে চ্যাম্পিয়ন।বাংলাদেশ জাতীয় দলের দায়িত্বে থাকা বিদেশি কোচদের কয়েকজন কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে কথা বলেছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে। নিজেদের দেশ, দলের তারকা, সম্ভাবনাময় উদীয়মানদের নিয়ে ভাবনাগুলো জানিয়েছেন বিশ্লেষণী চোখে। আজ থাকছে স্পেন ও ব্রুসনকে নিয়ে।স্পেন দলে তারার মেলা নেই সে অর্থে। লুইস এনরিকে যে দল দিয়েছেন, সেখানে নেই সের্হিও রামোসের মতো অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার। ব্রাজিল কোচ তিতে যেখানে ৩৯ বছর বয়সী দানি আলভেসকে রেখেছেন, সেখানে তার চেয়েও তিন বছর কম বয়সী রামোসকে ঠাঁই দেননি এনরিকে।
যদিও সের্হিও বুসকেতস, আলভারো মোরাতার মতো অভিজ্ঞরা আছে দলে। তাদের সঙ্গী পেদ্রি-গাভির মতে তরুণেরা। সব মিলিয়ে এনরিকে অভিজ্ঞ ও তারুণ্যের মিশেলে দল সাজিয়েছেন। তারপরও এই দলটি আর যাই হোক, ২০০৮ ও ২০১২ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ২০১০ বিশ্বকাপে বাজিমাত করা ‘সেই স্পেনের’ মতো নয় মোটেও।শিরোপার সম্ভাব্য দাবিদারকে তালিকায় তাই স্পেনের নামটা আসছে বেশ পরে। স্বাভাবিকভাবে সবার আগে থাকছে রেকর্ড পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। এরপর আছে লিওনেল মেসির কাঁধে চেপে ১৯৮৬ সালের পর চূড়ায় উঠতে মুখিয়ে থাকা আর্জেন্টিনা। ২০১৮ সালের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকেও পাশ কাটানোর উপায় নেই। স্পেনের সম্ভাবনার প্রশ্নে তাই বসুন্ধরা কিংস কোচ ব্রুসনের মন ও মাথার ভাবনার মিল হচ্ছে না কোনোভাবেই।“এবার টানা ১২বারের মতো বিশ্বকাপ খেলবে স্পেন। ২০১০ সালে আমরা যে ট্রফি আমরা প্রথম জিতেছিলাম, সেটা আবারও অর্জনের আশা নিয়ে যাবে দল।”“আমার হৃদয় স্পেনের পক্ষে বলছে। তবে স্কোয়াডের গভীরতা এবং দলে অনেক বৈচিত্রময় খেলোয়াড়ের উপস্থিতির জন্য মাথা বলছে, এবারের ফেভারিট ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, এমনকি ফ্রান্স।”
স্পেনের সাম্প্রতিক সময়ের পারফরম্যান্স অবশ্য বেশ আশা জাগানিয়া। নেশন্স কাপে সুইজারল্যান্ডের কাছে হারলেও পরে পর্তুগালের বিপক্ষে জিতে জায়গা করে নিয়েছে ফাইনাল ফোরে। যদিও বিশ্বকাপের হিসেব আলাদা। ২০ নভেম্বর শুরু হতে যাওয়া বিশ্বকাপে জার্মানি, কোস্টা রিকা ও জাপানের সঙ্গে ‘ই’ গ্রুপে পড়েছে তারা। তবে নেশন্স লিগ, দুই বছর আগে ইউরোর সেমি-ফাইনাল খেলা-এই ছোট ছোট সাফল্য আশাবাদী করে তুলছে ব্রুসনকে।“আমরা সহজ একটা গ্রুপে নেই, যেহেতু আমাদেরকে পেরুতে হবে ২০১৪ সালের চ্যাম্পিয়ন জার্মানি এবং জাপান ও কোস্টা রিকাকে। তবে স্পেন দল নিয়ে লুইস এনরিকের রেকর্ড ভালো। তারা ইউরোর সেমি-ফাইনাল খেলেছে, সম্প্রতি নেশন্স কাপের ফাইনাল ফোরে উঠেছে।”স্পেনের এই প্রাপ্তিগুলো এসেছে দলগত প্রচেষ্টার সিঁড়ি বেয়ে। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা বা ফ্রান্সের মতো ব্যক্তিগত নৈপূণ্যনির্ভর খেলোয়াড় বলতে গেলে তাদের নেই। মেসি এক ঝটকায় আর্জেন্টিনাকে পথ দেখাতে পারেন, নেইমার মুহূর্তেই ঘুরিয়ে দিতে পারেন ম্যাচের ভাগ্য। করিম বেনজেমা বা কিলিয়ান এমবাপে একাই টেনে নিতে পারেন ফ্রান্সের ভার, স্পেনের আক্রমণভাগে এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া কঠিন।
যারা আছে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল মোরাতা। এই দলে দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি গোল তার, ৫৭ ম্যাচে ২৭টি। নেশন্স লিগে পর্তুগালের বিপক্ষে ম্যাচে নির্ধারিত সময়ের দুই মিনিট বাকি থাকতে এই ৩০ বছর বয়সী ফরোয়ার্ডই করেছিলেন ব্যবধান গড়ে দেওয়া গোল। বাকিদের মধ্যে ২২ বছর বয়সী তরুণ ফেররান তরেসের গোল ১৩টি, পাবলো সারাবিয়ার গোল ৯টি। ২০ বছর বয়সী তরুণ ফাতি পরিসংখ্যানের পাতায় পিছিয়ে, জাতীয় দলের হয়ে মাত্র একটি গোল তার, কিন্তু বার্সেলোনার এই ফরোয়ার্ডের মেধা ও দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ আছে কমই। গত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের ডাগআউটে থাকা ব্রুসন তাই নির্দিষ্ট কাউকে দলের ত্রাতা হিসেবে বেছে নিতে পারছেন না।“বিশ্বকাপ স্কোয়াডে ডাকার জন্য চমৎকার এক দল খেলোয়াড় পেয়েছে এনরিকে। বার্সেলোনার ‘তরুণ ত্রিফলা’ পেদ্রি, গাভি ও আনসু ফাতি দারুণ সম্ভাবনাময়, সের্হিও বুসকেতস, সেসার আসপিলিকুয়েতা এবং আলভারো মোরাতার মতো অভিজ্ঞরা আছে, যারা জানে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ফুটবলে প্রয়োজনীয় কোনটা।”