Monday, July 28, 2025
বাড়িখেলাবিশ্ব আসরে ভারতের আরেকটি ব্যর্থ অভিযান

বিশ্ব আসরে ভারতের আরেকটি ব্যর্থ অভিযান

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা, ১১  নভেম্বর: স্বপ্নের মৃত্যুর পর সেই আঙিনা ছেড়ে গেলেন তারা। আস্তে আস্তে। একটু একটু করে। একরাশ হতাশাকে সঙ্গী করে। আরও একবার!গত ৯ বছর ধরে বিশ্ব আসরে এটিই তাদের চেনা চিত্র। কখনও শেষের মঞ্চে মুখ থুবড়ে পড়ে তারা। কখনও সেই মঞ্চে পা রাখার ঠিক আগে। শেষ হাসির তৃপ্তি নিয়ে ফেরা হচ্ছেই না তাদের। বছরের পর বছর। টুর্নামেন্টের পর টুর্নামেন্ট।বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও আকর্ষণীয় টি-টোয়েন্টি লিগ ভারতের। বিশ্বজুড়ে তারকাদের কাঙ্ক্ষিত লিগ। ভারতীয় ক্রিকেটে প্রাপ্তির শেষ নেই এই টুর্নামেন্ট থেকে। কিন্তু কঠিন বাস্তবতা হলো, আইপিএল শুরুর পর একটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও জিততে পারেনি ভারত। সেই হতাশার স্রোতে ভেসে গেল এবারের বিশ্বকাপও।অন্যান্য সংস্করণেও ভারতের ধারাবাহিকতা দুর্দান্ত। কখনও তারা র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে। কখনও সেরার আশেপাশেই। দ্বিপাক্ষিক সিরিজে ঐতিহাসিক সব সাফল্যও ধরা দিচ্ছে। কিন্তু বৈশ্বিক আসরের সাফল্য হয়ে গেছে মরীচিকা।মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ভারত, ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও ২০১৩ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু এরপর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আর কোনো আইসিসি আসরে তারা শিরোপার স্বাদ পায়নি।ইংল্যান্ডে ২০১৩ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের পরের বছরই বাংলাদেশে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে যায় তারা প্রবল দাপটে। কিন্তু সেখানে হেরে যায় শ্রীলঙ্কার কাছে। ক্রমে সেমি-ফাইনাল আর ফাইনালে হেরে যাওয়াই হয়ে ওঠে তাদের নিয়তি।

২০১৫ ওয়ানডে ও ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আটকে যায় তারা শেষ চারে, ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের কাছে। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে আবার অভিযান থমকে যায় সেমিতে। সাদা পোশাকের প্রথম বৈশ্বিক আসরেও তাদের ভাগ্য রঙিন হয়নি। আইসিসি টেস্ট চাম্পিয়নশিপের ফাইনালে হেরে যায় নিউ জিল্যান্ডের কাছে। এরপর গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তো আরেক দফা পতন। জায়গা হয়নি শেষ চারেও।চক্র ভাঙার সুযোগ শেষ হয়ে গেল এবার অস্ট্রেলিয়াতেও।গত ৯ বছরে ৮টি আইসিসি টুর্নামেন্টে তারা সেমি-ফাইনালে উঠেছে ৭টিতেই, এর মধ্যে ৩টিতে পৌঁছেছে ফাইনালে। অনেক দলের জন্যই এটা দারুণ সাফল্য যাত্রা। ধারাবাহিকতার প্রকাশও। কিন্তু ভারতীয় দলের যা শক্তি-সামর্থ্য ও বাস্তবতা, তাদের জন্য এই খতিয়ান আসলে আক্ষেপেরই শব্দমালা। প্রতিটি আসরেই তারা শুরু করে ট্রফির দাবিদার হিসেবে। সবকটিতে ট্রফি জয় অবশ্যই সম্ভব নয়, কিন্তু টানা এত বছরের খরাও তো তাদের জন্য মানানসই নয়!একমাত্র অধিনায়ক হিসেবে সীমিত ওভারের ক্রিকেটের তিনটি বিশ্ব আসরই জয় করা ধোনির নেতৃত্বের শেষ সময় থেকে এই দীর্ঘশ্বাসের পালা শুরু। বিরাট কোহলির নেতৃত্বের সময়ও তা রয়ে গেছে। এখন বদল এসেছে নেতৃত্বে। আইপিএলের সফতম অধিনায়ক রোহিত শর্মা দলের দায়িত্বে। কোচিংয়ে পরিবর্তন এনে ভার তুলে দেওয়া হয়েছে রাহুল দ্রাবিড়ের মতো পরিশীলিত একজনের কাঁধে। কিন্তু ভারতের ভাগ্য বদলায়নি। রোহিত-দ্রাবিড় জুটির প্রথম অভিযানও ব্যর্থ।

যদিও এই বিশ্বকাপে তারা চোটের জন্য পায়নি দলের সেরা বোলার জাসপ্রিত বুমরাহকে। পরীক্ষিত অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজাও চোটের কারণে না থাকায় দলের শক্তি কমে গেছে। তবে ভারতের যে দল, যাদের শক্তির গভীরতা বিশ্ব ক্রিকেটে উদাহরণ, শীর্ষ পর্যায়ের দুই-তিনটি দল তারা গড়তে পারবে বলে মনে করা হয়, তাদের জন্য তো আর ২-১ জন ক্রিকেটার না থাকাকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করানো যায় না।এবারের বিশ্বকাপের জন্য ভারতের প্রস্তুতিও ছিল দারুণ। বিশ্বকাপের আগে এই বছর সবচেয়ে বেশি টি-টোয়েন্টি খেলা দল ছিল তারা। ৩২টি ম্যাচ খেলে ২৩টিতেই জিতে তারা বিশ্বকাপে এসেছিল। কিন্তু এমন জায়গায় তারা হোঁচট খেল যে, এবার আর অন্তত উঠে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই।ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই সেমি-ফাইনালে শক্তি-সামর্থ্যে ভারত পিছিয়ে ছিল না কোনোভাবেই। কিন্তু মাঠের ক্রিকেটে তারা লড়াই জমাতেই পারল না। দুই দলের মানসিকতার ব্যবধান স্পষ্ট হয়ে ফুটে ওঠে ব্যাটিংয়ের প্রথম ভাগেই। মাত্র ১টি উইকেট হারালেও পারওয়ার প্লেতে ভারত তোলে ৩৮ রান। ১০ ওভারে মোটে ৬২। ইংল্যান্ড পাওয়ার প্লেতে তোলে ৬৩। ১০.১ ওভারে ১০০।ম্যাচের পর কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের অকপট স্বীকারোক্তি, ম্যাচেই অনেকটা ছিলেন না তারা।“সেমি-ফাইনালেই থমকে যেতে হওয়ায় অবশ্যই খুবই হতাশ। আরও দুই ধাপ এগিয়ে যেতে পারলে ভালো লাগত। তবে আজকে আমরা স্রেফ উড়ে গেছি, পাত্তাই পাইনি। সব বিভাগেই তারা ছিল শ্রেয়তর দল। স্কোরেই তা ফুটে ওঠে।”

ভারত ২০ ওভারে ১৬৮ রান পর্যন্ত যেতে পারে শেষ ৫ ওভারের ঝড়ে। হার্দিক পান্ডিয়ার বিধ্বংসী ফিফটিতে শেষ ৫ ওভারে তারা তুলতে পারে ৬৮ রান। তবে সর্বনাশটা যে প্রথম ১০ ওভারেই হয়ে গেছে, তা তো পরে স্পষ্টই! উইকেট দেখেই বোঝা গেছে, অন্তত ২০-২৫ রান কম ছিল ভারতের।কিন্তু ব্যাট হাতে ২৮ বলে ২৭ রান করা অধিনায়ক রোহিত ম্যাচ শেষে কাঠগড়ায় তুললেন বোলারদের।“আজকে আমরা যেভাবে খেলেছি, তা হতাশাজনক। শেষ দিকে আমরা ভালোই ব্যাট করেছি, কিন্তু বল হাতে যথেষ্ট ভালো ছিলাম না। এটা নিশ্চিতভাবেই এরকম উইকেট নয় যে কোনো দল ১৬ ওভারে এই রান তাড়া করে ফেলবে। বল হাতে আজকে আমরা ম্যাচেই ছিলাম না।”একের পর এক টুর্নামেন্টে নক-আউট পর্যায় থেকে ছিটকে যাওয়া কারণ রোহিতের কাছেও মনে হলো ধাঁধা। আইপিএলে চাপের ম্যাচে পারফর্ম করা ছেলেরাই কেন এখানে বিশ্ব আসরে পারছে সা, বুঝতে পারছেন না ভারত অধিনায়ক। তবে আবারও তিনি দায় দিলেন বোলারদের।“নক-আউট পর্যায়ে মূল ব্যাপারটি হলো চাপ সামলানো। ব্যক্তিগতভাবেও অনেকের ওপর নির্ভর করে তা। চাপ সামলানোর ব্যাপারটি কাউকে শেখানো যায় না। এই ছেলেগুলোই তো আইপিএলের প্লে অফ ও এরকম চাপের ম্যাচ খেলে, এরকম চাপ সামলায়। আমরা বল হাতে যেভাবে শুরু করেছিরাম, একটু স্নায়ুর চাপের ছাপ ছিল সেখানে।”ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধানের এই পালা হয়তো আরও চলবে কিছুদিন। সঙ্গে থাকবে বারবার কাছে গিয়ে না পারার দীর্ঘশ্বাসও। আগামী নভেম্বরে ওয়ানডে বিশ্বকাপ ভারতের মাঠেই। আপাতত রোহিতদের অপেক্ষা সেই সময়ের।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য

error: <b>Alert: </b>Content selection is disabled!!