জাকির হোসেন ঢাকা ৫ জুন: বাংলাদেশের চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে সোনাইছড়ী ইউনিয়নে বিএম কনটেইনার ডিপোতে শনিবার রাতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫০ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনায় ৫ শতাধিক আহত হয়েছেন। স্থানীয় ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় চট্রগ্রামের বিএম কনটেইনার ডিপোতে আমদানিকৃত একটি কন্টেইনার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়।
শনিবার রাত্রের দুর্ঘটনায় ৫ শতাধিক মানুষ দগ্ধ ও আহত হয়েছেন। জানা যায়, কেমিক্যাল কনটেইনার থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগুন লাগার পর পর কন্টেইনারগুলো একের পর এক বিস্ফোরিত হতে থাকে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে কন্টেইনার ডিপোর আশে পাশের ৪-৫ কিলোমিটার এলাকায় ব্যাপক কম্পনের সৃষ্টি হয়। প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় শতাধিক বিভিন্ন বাড়ি-ঘর ও মসজিদের দরজা এ জানালার কাঁচ ভেঙ্গে যায়। এ ঘটনায় জনমনে আতংকের সৃষ্টি হয়। সীতাকুন্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বিএম কন্টেইনার ডিপোতে শনিবার রাত্রের ভয়াবহ অগ্নিকান্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় শনিবার রাতেই ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেকে) রয়েছে। রবিবার আরও ২৮ জনের লাশ উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৯ জন ফায়ার কর্মী রয়েছেন। এখনো উদ্ধার অভিযান চলছে। তবে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে- তাদের ৯ জন কর্মী আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে মারা গেছেন। তিনি জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণ ও উদ্ধার অভিযানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২০০ সদস্যের একটি টিম সকাল থেকে কাজ শুরু করেছে।
এদিকে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা ও আহতদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আশরাফ উদ্দিন। আগুন নেভানো ও বিস্ফোরণের ঘটনায় ২৬টি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের টিম কাজ করছে। এছাড়া চট্টগ্রাম, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কুমিল্লা, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী থেকে অফিসাররা যোগ দিয়েছেন। শনিবার রাতে শত শত আহত মানুষকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ( চমেক), চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালসহ নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে প্রেরণ করা হয় এবং এসব হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে।
সর্বশেষ চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে লাগা আগুন এখনও জ্বলছে। ফায়ার সার্ভিস বলছে, লাশের সারি আরও দীর্ঘ হতে পারে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। রবিবার বিকেল ৪টার পর চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ৫০ জন হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সিভিল সার্জন জানান, আহত অনেকের অবস্থা গুরুতর, মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। দুপুর ১টা ৫০ মিনিটের দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুরো ডিপো এলাকা যেন যুদ্ধপরবর্তী ধ্বংসস্তূপ। এখানে-ওখানে ছড়িয়ে-ছটিয়ে রয়েছে বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ছোট ছোট কনটেইনার। এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে অনেক পণ্যবোঝাই কনটেইনার। রাতভর ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের আগুন নেভানোর যে প্রাণান্তকর চেষ্টা ছিল, তা ডিপো প্রাঙ্গণ দেখে সহজেই বোঝা যাচ্ছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের আরবান সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ টিমের প্রধান আরিফুল ইসলাম হিমেল বলেন, রবিবার সকাল থেকে আমরা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি। এখনো পুরোপুরি নেভেনি। কিছু কনটেইনারে এখনো আগুন জ্বলছে।
প্রশাসনের ৯ সদস্যের তদন্ত কমিটি: বাংলাদেশের চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। আগামী সাত দিনের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। রবিবার সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। তিনি বলেন, বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে হতাহতের কারণ অনুসন্ধান এবং ক্ষয়-ক্ষতি নির্ধারণ এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সুপারিশমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে নয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।