স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ৭ মে : পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গিঘাঁটিতে পহেলগাঁও হামলার প্রত্যাঘাত ভারতের। নিহতদের স্ত্রীদের মুছে যাওয়া সিঁদুরের বদলা নিতে শুরু হয় ‘অপারেশন সিঁদুর’। মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে এখনও পর্যন্ত ভারতীয় সেনার পালটা মারে নিকেশ হয়েছে প্রায় শতাধিক জঙ্গি। সূত্রের খবর এমনই। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের এই লড়াইয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে ‘বন্ধু’ ইজরায়েল। পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে ইহুদি দেশটি। পাশাপাশি দিল্লি ও ইসলামাবাদের এই লড়াইয়ে শান্তির বার্তা দিয়েছে আমেরিকা, চিন, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, ব্রিটেন।
ভারতের এই প্রত্যাঘাতে সম্পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে ইজরায়েল। ভারতে নিযুক্ত ইজরায়েলের রাষ্ট্রদূত রিউভেন আজার এক্স হ্যান্ডেলে বলেন, ‘ভারতের আত্মরক্ষার অধিকারকে ইজরায়েল সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করে। সন্ত্রাসীদের জেনে রাখা উচিত যে নিরীহদের উপর হামলা চালিয়ে লুকিয়ে থাকা যায় না।’ পহেলগাঁও হামলার পরেরদিন নিহতদের পরিবারের প্রতি শোকজ্ঞাপন করেছিলেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একযোগে লড়াই করার বার্তা দিয়েছিলেন তিনি।
অপারেশন সিঁদুরের পর বদলার হুঁশিয়ারির পালটা নিয়ে পাকিস্তানকে সতর্ক করল আমেরিকা। হামলা পালটা হামলার জেরে পরিস্থিতি যাতে যুদ্ধের দিকে না গড়ায় তা মাথায় রেখে পাক সরকারকে সতর্ক করেছেন মার্কিন বিদেশ সচিব মার্কো রুবিও। হোয়াইট হাউসের একটি সরকারি সূত্রের দাবি অনুযায়ী, রুবিও স্পষ্ট জানিয়েছেন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে ভারতের। এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘এটা লজ্জাজনক। আমি চাই দু’দেশের এই সংঘাত তাড়াতাড়ি থামুক। অনেকদিন ধরে ওরা লড়াই করছে।’
কয়েকদিন আগেই পহেলগাঁও হামলা নিয়ে ট্রাম্প বলেছিলেন, “ভারত আর পাকিস্তান দু’জনেই আমার খুব কাছের। আমার বন্ধু। কাশ্মীরে তাদের লড়াই ১০০০ বছর ধরে চলে আসছে। এই লড়াই আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে। এছাড়া ওই সীমান্তে ১৫০০ বছর ধরে উত্তেজনা তৈরি হয়ে আছে। আমার মনে হয়, দুই দেশই পারবে এই সমস্যার সমাধান করতে। আমি নিশ্চিত। আমি দু’দেশের রাষ্ট্রনেতাকেই চিনি। তাদের নিজেদের সমস্যা নিজেদেরই মেটাতে হবে। তবে এই জঙ্গি হামলা নিন্দনীয়। এগুলো মানুষ প্রাণ হারালেন।” বিশ্লেষকদের মতে, গাজায় হামাস-ইজরায়েল সংঘাত এবং রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে নিজে থেকে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিয়েছেন ট্রাম্প। কিন্তু ভারত-পাকিস্তানের সংঘাতের ক্ষেত্রে যে হোয়াইট হাউস অন্য পন্থা অবলম্বন করবে তা ট্রাম্পের বক্তব্যে স্পষ্ট।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের এই দশার জন্য প্রাণ কাঁদছে চিনের। বিবৃতি দিয়ে সেদেশের বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে, ‘ভারতের এই সামরিক অভিযানে আমরা দুঃখিত। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। চিনের অবস্থান সব সময় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে। আমরা ভারত-চিন দু’পক্ষকেই অনুরোধ করব শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যা সমাধানের জন্য। এমন কোনও পদক্ষেপ করবেন না যাতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’ মাস দুয়েক আগেই যুদ্ধবিমান কেনা নিয়ে চিন-পাকিস্তানের মধ্যে চুক্তি হয়েছিল। ফলে এখন সবরকমভাবে বেজিংকে পাশে পেতে মরিয়া ইসলামাবাদ।
ভারতের অপারেশন সিঁদুর নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ রাষ্ট্রসংঘের। শান্তির বার্তা রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের। বিবৃতি দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিও। সেদেশের বিদেশ বিষয়ক উপপ্রধানমন্ত্রী শেখ আবদুল্লা বিন জায়েদ আল নাহয়ান বিবৃতিতে বলেছেন, ‘বিভিন্ন দেশের মধ্যে শান্তি, স্থিতিশীলতা, সমৃদ্ধির জন্য, যেকোনও সংকটে শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য আলোচনাই সবচেয়ে কার্যকর উপায়। আমরা চাই ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমন হোক।’ একইভাবে আত্মরক্ষার ক্ষেত্রে ভারতকে সমর্থন জানালেও শান্তির বার্তা দিয়েছে ব্রিটেন, কাতার। কিন্তু এখন তৎপরতা তুঙ্গে দিল্লিতে। অপারেশন সিঁদুরের পর ইউরোপ সফর বাতিল করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সূত্রের খবর, চলতি মাসেই ক্রোয়েশিয়া, নরওয়ে এবং নেদারল্যান্ডসে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর।
ফলে প্রশ্ন উঠছে, অপারেশন সিঁদুরের পর কি আবারও পাকিস্তানের উপর হামলার পরিকল্পনা রয়েছে ভারতের? সেকারণেই কি আপাতত দেশ ছাড়তে চাইছেন না প্রধানমন্ত্রী? অপারেশন সিঁদুরের পর পালটা আঘাত হানতে পারে পাকিস্তানও। সবমিলিয়ে, দেশের এহেন স্পর্শকাতর পরিস্থিতিতে দেশেই থাকতে চান প্রধানমন্ত্রী। অপারেশন সিঁদুর নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেননি তিনি। তবে যেভাবে শত্রুর জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় সেনা, তাতে গর্বিত মোদি।