স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১৮ মে। যান্ত্রিক ত্রুটির প্রমাণ না মেলায় চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনাটি ফ্লাইট ডেকে ইচ্ছাকৃত কোনো কর্মকাণ্ডের কারণে হয়েছে কিনা তদন্ত কর্মকর্তারা এখন তা খতিয়ে দেখছেন বলে জানিয়েছেন বিষয়টি সম্বন্ধে অবগত দুই ব্যক্তি।
ককপিটে থাকা কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বিমানটিকে বিধ্বস্ত করিয়েছেন, বোয়িং ৭৩৭-৮০০’র একটি ব্ল্যাক বক্সের তথ্যে তেমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে বলে মার্কিন কর্মকর্তাদের প্রাথমিক মূল্যায়নের বিষয়ে জ্ঞাত ওই ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।এ বিষয়ে উড়োজাহাজটির নির্মাতা কোম্পানি বোয়িং ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পরিবহন নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ (এনটিসিবি) কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি এবং যাবতীয় সব জিজ্ঞাসার জন্য চীনের নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষকে দেখিয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের বিমান দুর্ঘটনার তদন্তে নেতৃত্ব দেওয়া চীনের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (সিএএসি) কাছে এ বিষয়ে মন্তব্য চাওয়া হলেও তাৎক্ষণিকভাবে তাদের সাড়া মেলেনি বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।কুনমিং থেকে গুয়াংঝু যাওয়ার পথে গত ২১ মার্চ অনেক উঁচু দিয়ে উড়ে যাওয়া বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমানটি হঠাৎ করে প্রায় খাড়া নিচে পড়ে গুয়াংসি অঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায় বিধ্বস্ত হয়; প্রাণ হারান বিমানটির ১৩২ আরোহীর সবাই।গত ২৮ বছরে চীনের মূল ভূখণ্ডে কোনো বিমান দুর্ঘটনায় এত প্রাণহানি হয়নি।অনেক উঁচু থেকে নিচে পড়ার সময় এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার ও কাছাকাছি বিমানগুলো বোয়িং ৭৩৭-৮০০’র সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও পাইলটদের সাড়া মেলেনি বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
দুর্ঘটনাটি ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ ঘটানো হয়েছে কিনা, তদন্তকারীরা এখন তা খতিয়ে দেখছেন বলে একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে।
ইচ্ছাকৃতভাবে বিমানটিকে দুর্ঘটনায় ফেলা হয়েছে, ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া এমন গুজবের প্রতিক্রিয়ায় গত ১১ এপ্রিল সিএএসি বলেছিল, এ ধরনের অনুমান ‘জনগণকে ব্যাপকভাবে বিভ্রান্ত করবে’ এবং ‘দুর্ঘটনার তদন্তের কাজে ব্যাঘাত ঘটাবে’।
বিমান দুর্ঘটনায় স্বামী হারানো এক নারী বুধবার রয়টার্সকে বলেছেন, তিনি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনটি দেখেননি কিন্তু তদন্তের ফল শিগগিরই প্রকাশ করা হবে বলে আশা করছেন।ওই নারীর ডাক নাম ওয়েন, তিনি কেবল এটুকুই প্রকাশ করতে বলেছেন। ওয়েন জানান, তিনি ও নিহত অন্যদের পরিবারের সদস্যরা চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের সঙ্গে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন, যাতে ক্ষতিপূরণ বিষয়ক একটি পয়েন্টও আছে। অবশ্য ক্ষতিপূরণবাবদ কী পরিমাণ অর্থ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে, তা বলতে রাজি হননি তিনি।
মন্তব্যের জন্য চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাৎক্ষণিকভাবে তাদের সাড়া মেলেনি।তদন্তে উড়োজাহজাটিতে কোনো ত্রুটির ইঙ্গিত মেলার প্রমাণ পাওয়া যায়নি, চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের এক বিবৃতিতে এমনটা বলা হয়েছে বলেও জানিয়েছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন পেতে দুই বছর বা তারও বেশি সময় লেগে যেতে পারে বলে ধারণা চীনের কর্মকর্তাদের। বেশিরভাগ বিমান দুর্ঘটনাই মানুষের ভুল ও যান্ত্রিক ত্রুটির মিশ্রণের ফলে হয় বলে মত বিশ্লেষকদের।
বিশ্বজুড়ে ইচ্ছাকৃত বিমান দুর্ঘটনা খুবই বিরল। ইস্টার্ন এয়ারলাইনসের এ দুর্ঘটনাটি কোনো পাইলটের ইচ্ছাকৃত কর্মকাণ্ডে কিংবা ককপিটে জোর জবরদস্তি বা অনুপ্রবেশের কারণে হয়েছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি ।দুর্ঘটনায় পড়া বিমানটির ককপিট ভয়েস রেকর্ডারের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল, তদন্তকারীরা ওই রেকর্ডার থেকে কোনো তথ্য উদ্ধার করতে পেরেছেন কিনা তাও স্পষ্ট হওয়া যায়নি।