স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ০৪ মার্চ : ‘ছিল রুমাল হয়ে গেল বেড়াল।’ ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমেরিকার বিদেশনীতির এমন আকস্মিক রঙ বদলকে এভাবেই ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের মাঝেই সাদা বাড়ির অধীশ্বর হয়েই কূটনীতির ঘোড়ার লাগাম একেবারে বিপরীত দিকে ঘুরিয়ে ফেলেছেন ট্রাম্প। ইউরোপকে কাঁচকলা দেখিয়ে পুতিনপ্রেমে মগ্ন তিনি। সেই লক্ষ্যেই এবার জানা যাচ্ছে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে অতীতের মার্কিন নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে চলেছে হোয়াইট হাউস। জোরকদমে শুরু হয়েছে সেই কাজ।
মার্কিন প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ককে উন্নত করে তুলতে আগ্রহী আমেরিকা। সেই লক্ষ্যেই ঠিক কোন কোন ক্ষেত্রে রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে আমেরিকা তার খসড়া তালিকা তৈরি হচ্ছে। ইতিমধ্যেই বিদেশ দপ্তর ও রাজস্ব দপ্তরকে এই খসড়া তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছে হোয়াইট হাউস। জানা যাচ্ছে, এই তালিকা থেকে উঠে আসা বিষয়গুলি নিয়ে আগামীদিনে মস্কোর সঙ্গে আলোচনা করবে হোয়াইট হাউস। আমেরিকার এই তৎপরতা প্রকাশ্যে আসতেই বিশ্ব রাজনীতিতে শোরগোল শুরু হয়েছে। ‘বন্ধু’ আমেরিকার এই রাশিয়া প্রেম ভালো চোখে দেখছে না ইউরোপ। এই তৎপরতা ইউক্রেনের সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফিরে রুশ নীতি বদলে ফেলেছেন ট্রাম্প। রাশিয়ার সঙ্গে চিনের জোট ভাঙতে পুতিনকে কাছে টানার চেষ্টা করছেন। তাই তিনি ‘হাতিয়ার’ করেছেন এই যুদ্ধকে। প্রথম থেকে জেলেনস্কিকেই মস্কোর সঙ্গে সমঝোতার পথে হাঁটার বার্তা দিচ্ছেন তিনি। এছাড়া এতদিন ইউক্রেনকে যা যা সাহায্য করেছে আমেরিকা, তা এবার সুদে-আসলে বুঝে নিতে চান ব্যবসায়ী ট্রাম্প। তাই খনিজ চুক্তি করতে চেয়েছিলেন। জেলেনস্কিও রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু শুক্রবারের বৈঠকে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পর সেই খনিজ চুক্তির অপমৃত্যু হয়। অন্যদিকে, পুতিন ট্রাম্পকে প্রস্তাব দিয়েছেন ইউক্রেনের অধিকৃত জমির খনিজ ভাগাভাগি করে নেওয়ার। এই পরিস্থিতিতে পুতিন প্রেমে একাধিক ফায়দা দেখছেন দুঁদে ব্যবসায়ী ট্রাম্প। ইউক্রেনের সঙ্গে বন্ধুত্বে আমেরিকা শুধুমাত্র ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে নিজেদের প্রাপ্য খনিজ সম্পদটুকুই পেত। পুতিনের হাত ধরলে প্রাপ্য আদায় তো বটেই রাশিয়ার দখল নেওয়া অধিকৃত জমির ভাগ নেওয়া যাবে। এবং বর্তমানে আমেরিকার প্রধান শত্রু হয়ে ওঠা চিনের থেকে রাশিয়াকে সরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
রুশ-মার্কিন কূটনৈতিক সম্পর্কের আবহে হোয়াইট হাউসের এই খসড়া তৈরির নির্দেশে অনুমান করা হচ্ছে, মস্কোর সঙ্গে সম্ভবত কোনও চুক্তি করতে চাইছেন ট্রাম্প এবং তাঁর পরামর্শদাতারা। সেই কারণেই তাঁরা রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা কিছু ক্ষেত্রে শিথিল করতে চান। তবে কী সেই চুক্তি তা নিয়েই জলঘোলা শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক মঞ্চে।