স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ২৬ ফেব্রুয়ারি : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৮০ তম বিজয় উৎসব উদযাপনে মস্কো সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি! এমনটাই জানা যাচ্ছে, রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম ‘তাস’ সূত্রে। বুধবার তাদের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ৯ মে ‘গ্রেট প্যাট্রিয়টিক ওয়ার’-এর বিজয় উৎসবে নরেন্দ্র মোদির যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। আমন্ত্রণ জানানো হবে ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও। তা যদি হয়, তবে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে আমেরিকা, রাশিয়া ও ভারতের এক নয়া সমীকরণ তৈরি হতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সম্প্রতি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাংবাদিক সম্মেলনে প্রেস সেক্রেটারি দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছিলেন, “সিআইএস (কমনওয়েলথ অব ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্টেটস) এর বাইরে অন্যান্য দেশগুলিকে আমন্ত্রণ জানানো হবে ‘গ্রেট প্যাট্রিয়টিক ওয়ার’-এর বিজয় উৎসবে যোগ দেওয়ার জন্য। পাশাপাশি যারা বিজয় দিবসের গুরুত্ব উপলব্ধি করেন সেই সকল দেশকে এই অনুষ্ঠানে স্বাগত।” অর্থাৎ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়ার মিত্রশক্তি আমেরিকাকেও আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে পুতিনের ডাকে সাড়া দিয়ে এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এদিকে রুশ সংবাদমাধ্যমের তরফে জানা যাচ্ছে, এই অনুষ্ঠানে দেশের সেনাবাহিনী-সহ যোগ দিতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। অনুষ্ঠানের অন্তত একমাসে আগে মস্কোয় পৌঁছতে পারে সেনাবাহিনী। মোদির সফরের দিনক্ষণ নিয়ে বিশদে কিছু না জানা গেলেও, ইউক্রেন যুদ্ধের মাঝে ‘গ্রেট প্যাট্রিয়টিক ওয়ার’-এর বিজয় উৎসবে মোদি ও ট্রাম্পের যোগদান যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
‘গ্রেট প্যাট্রিয়টিক ওয়ার’কে কেন্দ্র করে এই বিরাট তৎপরতায় কূটনৈতিক মহলের দাবি, সাম্প্রতিক ইউক্রেন যুদ্ধের মাঝে এই বিজয় উৎসব আন্তর্জাতিক কূটনীতির এক নয়া সমীকরণ তৈরি করতে চলেছে। রাশিয়ার তরফে ইউক্রেনের দখলকৃত জমি আমেরিকার সঙ্গে ভাগাভাগির প্রস্তাব ইতিমধ্যেই দিয়েছেন পুতিন। বন্ধু জেলেনস্কিকে দূরে ঠেলে রাশিয়ার সমর্থনে রাষ্ট্রসংঘে ভোট দিয়েছে আমেরিকা। যার নেপথ্যে রাজনৈতিক মহলের দাবি, আসলে আমেরিকা চাইছে রাশিয়া শত্রুতা কাটিয়ে বন্ধুত্বের হাত বাড়াতে। কারণ ওয়াশিংটনের কাছে এখন সিঁদুরে মেঘ চিন। এই অবস্থায় ইউক্রেন বা ইরান ইস্যুতে মার্কিন নীতি রাশিয়াকে আরও বেশি করে চিনের ঘনিষ্ঠ করে তুলবে। ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে যা কোনওভাবেই চান না ট্রাম্প। তাই ‘ইগো’র লড়াইয়ে না গিয়ে ব্যবসায়ী ট্রাম্প লাভ ক্ষতির হিসেবে মন দিতে বেশি আগ্রহী। সেখানে রাশিয়া ঘনিষ্ঠতাতেই বেশি লাভ দেখছেন ট্রাম্প। ফলে রাশিয়ার ‘গ্রিন সিগন্যাল’ তিনি উপেক্ষা করবেন না বলেই মনে করা হচ্ছে।
পাশাপাশি ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকেই শান্তির পক্ষে হেঁটেছে ভারত। নয়াদিল্লির কাছে চিন কতখানি ঝুঁকির তা আলাদা করে বলার প্রয়োজন পড়ে না। সেই হিসেব চিনের প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বের গুরুত্ব আমেরিকা ভালোই বোঝে। এদিকে ভারত ও রাশিয়ার সম্পর্কও যথেষ্ট মধুর। সেখানেই এবার সব হিসেব উলটে পালটে মস্কোয় রাশিয়া, আমেরিকা ও ভারতের এক নয়া সমীকরণ তৈরি হতে চলেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।