Friday, April 25, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদকৃষ্ণাঙ্গ ও লাতিন আমেরিকানরা কমলার বদলে কেন ট্রাম্পের দিকে ঝুঁকছেন

কৃষ্ণাঙ্গ ও লাতিন আমেরিকানরা কমলার বদলে কেন ট্রাম্পের দিকে ঝুঁকছেন

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ১৮ অক্টোবর: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র তিন সপ্তাহ বাকি। নির্বাচনী প্রচারের শেষ মুহূর্তে কমলা হ্যারিস কৃষ্ণাঙ্গ ও লাতিন আমেরিকার ভোটারদের সর্বোচ্চ সমর্থন আদায় করে নিতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। একইভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পও।ঐতিহাসিকভাবে কৃষ্ণাঙ্গ ও লাতিন আমেরিকানদের মধ্যে ডেমোক্রেটিক পার্টির সমর্থক বেশি। তবে এবারের নির্বাচনে রিপাবলিকানরা এ দুই গোষ্ঠীর ভোটারদের নিজেদের দলে নিয়ে আসতে সফল হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে দলটির কিছু নেতা–কর্মী সতর্ক করেছেন যে এসব ভোটারকে নিজের পক্ষে ধরে রাখতে কমলা হ্যারিসকে আরও ভালোভাবে কাজ করতে হবে।

সাম্প্রতিক কিছু জরিপে দেখা গেছে, রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প কৃষ্ণাঙ্গ ও লাতিন আমেরিকান ভোটারদের সমর্থন আদায়ে সফল হচ্ছেন। ২০১৬ ও ২০২০ সালের নির্বাচনেও এ দুই গোষ্ঠীর বড় সমর্থন আদায় করে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি।নিউইয়র্ক টাইমস ও সিয়েনার এক জরিপে দেখা গেছে, এবার কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের মধ্যে ৭৮ শতাংশ কমলাকে সমর্থন করছেন। অথচ এর আগের সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোয় ডেমোক্রেটিক পার্টির পক্ষে প্রায় ৯০ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গের সমর্থন ছিল। ডেমোক্রেটিকদের প্রতি এই গোষ্ঠীর পুরুষ ভোটারদের সমর্থন সবচেয়ে বেশি কমেছে।

আসন্ন নির্বাচনে লড়ছেন কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। এসব জরিপের তথ্য সত্য না হলেও দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোয় কৃষ্ণাঙ্গ ও লাতিন আমেরিকার ভোটাররা ভোটের ফল উল্টে দিতে পারেন।অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে আসন্ন নির্বাচনে চারজন ভোটারের মধ্য প্রায় একজন লাতিন আমেরিকান বলে ধারণা করা হচ্ছে। নেভাদায় লাতিন ভোটার প্রায় ২০ শতাংশ। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে জর্জিয়ায় মোট ভোটারের প্রায় ৩০ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ। কার্যত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যে এসব ভোটের হার অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ।কৃষ্ণাঙ্গ ও লাতিন আমেরিকানদের সমর্থন আদায়ে কেন সফল হচ্ছেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রে সিংহভাগ ভোটারের জন্য অর্থনীতি, বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাপনের ব্যয় প্রধান বিবেচনার বিষয়। কৃষ্ণাঙ্গ ও লাতিন আমেরিকান ভোটারদের অনেকের কাছে দলবদলের এটি একটি বড় কারণ। নিউইয়র্ক টাইমসের মতে, এই দুই গোষ্ঠীর কেউই যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্ট নন।এসব ভোটারদের একজন কুয়েন্টন জর্ডান। ৩০ বছর বয়সী ভার্জিনিয়ার এই বাসিন্দা একবার বারাক ওবামাকে ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু ২০২৬ সালে জাতীয় রাজনীতির মঞ্চে পা রাখার পর থেকে ট্রাম্পকেই ভোট দিয়ে আসছেন তিনি।কুয়েন্টন বলেন, মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতির কারণে সাধারণ মানুষ পরিবারের সদস্যদের প্রতিদিনের মৌলিক চাহিদা মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছেন। জীবনযাত্রার ব্যয় সামাল দেওয়া প্রায় অসম্ভব এবং ভয়াবহ চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নির্বাচনী জরিপে কমলা নাকি ট্রাম্প এগিয়ে?

নেভাদা অঙ্গরাজ্যে বিপুলসংখ্যক লাতিন আমেরিকান জনগোষ্ঠীর বসবাস। সেখানকার শহর লাস ভেগাসের বাসিন্দা লিডিয়া ডমিঙ্গেজ বলেন, অনেক লাতিন আমেরিকান ট্রাম্পের সময়কার অর্থনীতির কথা মনে রেখেছেন। অর্থনৈতিক উদ্বেগের অর্থ হলো সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সমর্থন দেওয়াকে আর কলঙ্কজনক বলে ধরা হবে না।লিডিয়া বিবিসিকে বলেন, তাঁরা জীবনযাত্রার ব্যয় সামাল দিতে পারছেন না, যা সত্যিকার অর্থেই নির্বাচনের জন্য একটি বড় বিষয়। সে ক্ষেত্রে ট্রাম্পকে সমর্থন করা এখন আর খারাপ কিছু নয়।

এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে এবার যাঁরা কমলা হ্যারিসের দিকে ঝুঁকছেন, তাঁরাও বলেছেন, অর্থনৈতিক কারণে তাঁদের অনেকে দল বদলাতে উৎসাহিত হচ্ছেন।নেভাদার ডিয়েগো অ্যারানকিভিয়া একসময় রিপাবলিকান দলের সমর্থক ছিলেন। এবার তিনি কমলা হ্যারিসকে ভোট দেবেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সম্প্রদায়ের অনেক মানুষ দল বদলাচ্ছেন। শুধু অর্থনৈতিক কারণে অনেকেই ট্রাম্পকে ভোট দেবেন। তাঁরা কখনোই তাঁর (ট্রাম্প) সঙ্গে বিয়ার পান করতে চাইবেন না। কিন্তু তাঁরা মনে করেন, ট্রাম্প তাঁদের অর্থনৈতিকভাবে ওপরের দিকে টেনে তুলতে পারবেন।’

অভিবাসন ও সীমান্তসংশ্লিষ্ট বিষয়

কৃষ্ণাঙ্গ ও লাতিন আমেরিকানরা অভিবাসন এবং বাইডেন প্রশাসনের যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।সীমান্তে কঠোর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং অনিবন্ধিত লাখ লাখ অভিবাসীকে উচ্ছেদ করা ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারের মূল বিষয় হয়ে উঠেছে।

টেক্সাসের রোনালদো রদ্রিগেজ একসময় ডেমোক্রেটিক পার্টির সমর্থক ছিলেন। এখন তিনি রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পকে সমর্থন করছেন। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের হার রেকর্ড মাত্রায় বেড়েছে। এ বছর সংখ্যাটি কিছুটা কমলেও বিষয়টি নিয়ে অনেক ভোটার উদ্বিগ্ন।রোনালদো রদ্রিগেজ আরও বলেন, ‘আমি সীমান্তের খুব কাছে বসবাস করি। কমলা ও বাইডেনের সময় যে বিপর্যয় তৈরি হয়েছে, তা দেখিনি।’একইভাবে ভার্জিনিয়ার কৃষ্ণাঙ্গ ভোটার জর্ডান বলেন, তাঁর বিশ্বাস, রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী এবং অন্যান্য বিদেশি নাগরিকেরা এমন সব সুযোগ-সুবিধা পান, যা কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায় দশকের পর দশক ধরে অনুরোধ জানিয়ে আসছে।

সামাজিক কারণ

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক কোয়ড্রিকস ড্রিসকেলন বলেন, ডেমোক্রেটিক পার্টি কৃষ্ণাঙ্গদের দৃষ্টিভঙ্গির বিরোধী বিভিন্ন সামাজিক অ্যাজেন্ডা গ্রহণ করায় তাঁদের পুরুষ ভোটারদের অনেকেই দল বদলেছেন।কোয়ড্রিকস ড্রিসকেলন বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় প্রথাগত পুরুষতন্ত্র চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এ কারণেও অনেক কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। দল বদলের ক্ষেত্রে ডেমোক্র্যাটদের লিঙ্গ এবং যৌন বৈশিষ্ট্যসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ও ভূমিকা রাখছে।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য