স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ৩ জুলাই:প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের অনুরোধে রাজা তৃতীয় চার্লাস পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার পর আগাম জাতীয় নির্বাচন হচ্ছে যুক্তরাজ্যে।পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়াসহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় ও সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আগে যুক্তরাজ্যে রাজা বা রানির সম্মতি এখনও প্রয়োজন হয়। গত কয়েক শতাব্দী ধরে দেশটির সংসদীয় গণতন্ত্রে রূপান্তরের পরিক্রমায় রাজনীতিতে রাজার ক্ষমতা প্রায় শূন্য হলেও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রতীকী প্রধান হিসেবে রাজার অধিষ্ঠান আজও অটুট।যুক্তরাজ্যে সাধারণ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে বৃহস্পতিবার। কিন্তু রাজা ও রাজপরিবারের সদস্যরা কি ভোট দেওয়ার অধিকার রাখেন? তারা কি ভোট দেন?
টাইম এক প্রতিবেদনে লিখেছে, ভোট এলেই সামনে আসে এসব প্রশ্ন। কিংস কলেজ লন্ডনের সাংবিধানিক আইনের অধ্যাপক রবার্ট ব্ল্যাকবার্নের কাছে তারা জানতে চেয়েছিল এর উত্তর।অধ্যাপক ব্ল্যাকবার্ন বলেন, রাজা ও রাজপরিবারের বাকি সদস্যদের ভোট দেওয়ার সুযোগ রয়েছে আইনে।“রাজা ও রাজপরিবারের সক্রিয় সদস্যরা আইনত অন্যান্য যোগ্য নাগরিকের মত একইভাবে সাধারণ নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন। তবে বাস্তবে তারা সেটা করেন না সঙ্গত কারণেই।”কারণটি হল, তারা ভোট দিতে গেলে সংবাদমাধ্যমে জল্পনা-কল্পনার ডালপালা মেলতে পারে। তাতে আইনের লঙ্ঘনও ঘটতে পারে। ফলে সাংবিধানিক প্রয়োজনেই তারা কঠোরভাবে ‘রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা’ বজায় রাখেন।
রাজকীয় ভাষ্যকার রিচার্ড ফিটজউইলিয়ামস টাইমকে বলেন, ব্রিটিশ রাজাদের একসময় উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক ক্ষমতা ছিল, কিন্তু গত তিনশ বছরে তাদের সেই ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমেছে।১৭০৮ সালে রানি অ্যান ‘স্কটিশ মিলিশিয়া’ নামে একটি বিলে সই করতে অস্বীকার করেছিলেন। ওই ঘটনা রানির সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগের সর্বশেষ বড় ঘটনা।ফিটজউইলিয়ামস বলেন, স্কটিশ মিলিশিয়াদের অস্ত্র সরবরাহের জন্য বিলটি তোলা হয়েছিল। যুক্তরাজ্যের রাজনীতিবিদরা চাইছিলেন স্কটিশ মিলিশিয়াদের অস্ত্র দিতে, কিন্তু রানির তাতে মত ছিল না।রাজা ও রানিরা ব্রিটেনে দীর্ঘসময় সরাসরি রাজনৈতিক নেতৃত্বে ছিলেন। তবে গত দুই শতাব্দীতে ধীরে ধীরে তা কমে এসেছে।
রিচার্ড ফিটজউইলিয়ামস বলছেন, কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান এবং সংসদ নেতা নির্বাচনেও এক সময় রাজা বা রানি হস্তক্ষেপ করতে পারতেন। ১৮৯৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের সময় এমনটি দেখা যায়। তখন রানি ভিক্টোরিয়া টোরি পার্টির পছন্দ করা প্রধানমন্ত্রীকে বাদ দিয়ে তৎকালীন হুইগ পার্টির নেতার প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছিলেন। এ ঘটনাকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে এড়িয়ে রানির চূড়ান্ত ক্ষমতা প্রয়োগের শেষ ঘটনা হিসেবে দেখা হয়।ব্রিটেনের রাজকীয় ক্ষমতা ক্রমেই সংকুচিত হয়ে ‘নিঃশেষ’ হওয়ার পর্যায়ে আসার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে ফিটজউইলিয়ামস বলেন, “বিপ্লবের মাধ্যমে নয়, জিনিসগুলো ধীরে ধীরে বদলে গেছে। এটিই ব্রিটেনের রাজনৈতিক পরিক্রমার প্রধান বৈশিষ্ট্য।
১৯৯২ সালে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ যখন সিংহাসনে বসেন, তখন থেকে রাজনীতিতে রাজতন্ত্রের ভূমিকা অনেক কমে যায়। তার পরও দ্বিতীয় এলিজাবেথের কিছুটা রাজনৈতিক ক্ষমতা ছিল।ফিটজউইলিয়ামস বলেন, ১৯৬০-এর দশকের গোড়ার দিকেও কনজারভেটিভ পার্টির নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের পছন্দই ছিল চূড়ান্ত।১৯৬৩ সালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড ম্যাকমিলান পদত্যাগ করেন। তখন রানি তার পছন্দ মত একজনকে টোরি দলের (কনজারভেটিভ পার্টি) প্রধানের পদে বসিয়ে তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও সমর্থন দেন।
ওই ঘটনার পর ১৯৬৫ সালে পার্টির প্রধান নির্বাচনের চূড়ান্ত ক্ষমতা রানির কাছ থেকে কেড়ে নেয় কনজারভেটিভ পার্টি। অল্প সময়ের মধ্যে দলটি সিদ্ধান্ত নেয়, তারা রানির পছন্দের ওপর নির্ভর না করে তাদের পরবর্তী নেতা নিজেরাই বেছে নেবে।সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের প্রতি সম্মান জানিয়ে রাজা বা রানি এবং রাজপরিবার এখন রাজনীতি এড়িয়ে চলেন। যুক্তরাজ্যের সংবিধান অনুযায়ী, রাজা রাজনীতির ঊর্ধ্বে। এ কারণে রাজা বা রানি কোনো নির্বাচনে ভোট দেন না। তারা নির্বাচন থেকে দূরে থাকেন, রাজনীতি আর তাদের বিষয় নেই।একই কারণে রাজ পরিবারের সদস্যরাও ভোট দিতে যান না।
রাজনীতি ও নির্বাচনে কোনো ভূমিকা না থাকলেও কাগজে কলমে রাজা বা রানি এখনও আইন পাসে বাধা দেওয়ার, নির্বাচন আহ্বান করা থেকে বিরত রাখার এবং ব্রিটিশ সরকারের মধ্যে অন্যান্য অনেক আনুষ্ঠানিকতা তত্ত্বাবধান করার ক্ষমতা রাখেন। এই ক্ষমতা নিরঙ্কুশ বা চূড়ান্ত নয়, কেবলই প্রতীকী।যেমন এবারের নির্বাচনে যে দলই জয় পাক, অথবা যদি জোট সরকার গঠন করতে হয়, তবে দল বা জোট নেতাকে সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ নিয়ে সরকার গঠনের জন্য রাজা তৃতীয় চার্লর্সের অনুমতি প্রার্থনা করতে হবে। রাজা অনুমতি দেবেন, এটাই প্রথা। তিনি সাংবিধানিক রাজনীতির কোনো প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করতে পারবেন না।