স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ২৯ জুন: হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর ইরানিরা নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ভোট দিতে শুরু করেছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মাত্র চার প্রার্থী।শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। এবং সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলার কথা। তবে মধ্যরাত পর্যন্ত ভোটের সময় বাড়ানো হতে পারে।নিয়ম অনুযায়ী, ইরানে আগামী বছরের জুনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত ১৯ মে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে মারা যাওয়ায় ওই শূন্য পদে এখন আগাম নির্বাচন হচ্ছে। সংবিধান অনুযায়ী, ৫০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচন দিতে হয়।
নির্বাচনে ছয়জন প্রার্থী হওয়ার অনুমতি পেয়েছিলেন। পরে দুজন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। নির্বাচনী দৌড়ে থাকা চার প্রার্থী হলেন- রক্ষণশীল মোহাম্মদ বাঘের গালিবাফ, মধ্যপন্থি মাসুদ পেজেশকিয়ান, কট্টরপন্থি সাইদ জালিলি এবং রক্ষণশীল মোস্তফা পুরমোহাম্মদি।গাজায় ইসরায়েল ও ইরানের মিত্র হামাস এবং লেবাননে হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধের কারণে আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধির পাশাপাশি ইরানের দ্রুত অগ্রসরমান পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমা চাপ বৃদ্ধির মধ্যে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।চার প্রার্থীই দেশে দুর্নীতি, নিষেধাজ্ঞা এবং অব্যবস্থাপনায় নাজুক পড়া অর্থনীতি চাঙ্গা করার অঙ্গীকার করেছেন। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি লোকজনকে বেশি বেশিভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।তিনি ভোট দেওয়ার পর রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলেন, “ইরানের স্থায়িত্ব, শক্তি, মর্যাদা ও সুনাম জনগণের উপস্থিতির ওপর নির্ভর করে। ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া জরুরি।”
তবে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেশি হবে না বলেই পূর্বাভাস পাওয়া গেছে। নির্বাচনে সংস্কারপন্থিরা প্রার্থি না হওয়া, অর্থনৈতিক সংকট এবং ইরানজুড়ে চলা প্রাণঘাতী বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে ভোটারদের মধ্যে হতাশা রয়েছে।গত চার বছরে ভোটার উপস্থিতি কমেছে। ইরানের ধর্মীয় শাসনের সমালোচকরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ের নির্বাচনগুলোতে কম ভোটার উপস্থিতি প্রমাণ করে যে নির্বাচনের ব্যবস্থার বৈধতা হ্রাস পেয়েছে।২০২১ সালের নির্বাচনে মাত্র ৪৮ শতাংশ ভোটার অংশ নিয়েছিলেন এবং তিন মাস আগে সংসদীয় নির্বাচনে ভোটদানের হার রেকর্ড সর্বনিম্ন ৪১ শতাংশে পৌঁছেছিল।ভোটের ফল দু’দিনের মধ্যে ঘোষণা করা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও প্রাথমিক ফল আরও আগেই প্রকাশ হতে পারে।
পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলোর প্রতি সমর্থনের বিষয়ে বড় ধরনের কোনো নীতিগত পরিবর্তনের সূচনা করবেন না বলেই মনে করা হচ্ছে।আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইরানের প্রেসিডেন্টের ভূমিকা বড় করে দেখা হলেও দেশের প্রকৃত ক্ষমতা থাকে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার হাতে। পররাষ্ট্র বা পারমাণবিক নীতি ও সরকারের বিভিন্ন শাখার নিয়ন্ত্রণ, সামরিক, গণমাধ্যম ও বিভিন্ন আর্থিক সম্পদের বিষয়ে তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেন।ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ঘনিষ্ঠ কেউ এই নির্বাচনে জয় পেতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, এবারের নির্বাচনের আগে খামেনি তার রক্ষণশীল ধারণা পোষণ করে এমন ব্যক্তির প্রার্থিতার ওপর জোর দিয়েছেন।