Thursday, January 23, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদকতজন জিম্মি জীবিত আছে, কারও ধারণা নেই: হামাস

কতজন জিম্মি জীবিত আছে, কারও ধারণা নেই: হামাস

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ১৪ জুন: গাজায় দীর্ঘস্থায়ী ও রক্তাক্ত সংঘাতের অবসান ঘটাতে যেকোনো চুক্তির জন্য সেখানে অবশিষ্ট ১২০ জিম্মির জীবিত থাকা এবং তাদের ইসরায়েলে ফেরাটা গুরুত্বপূর্ণ।তবে হামাসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছেন, জিম্মিদের মধ্যে কতজন বেঁচে আছেন সে সম্পর্কে ‘কারও কোনও ধারণা নেই’।”সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হামাসের মুখপাত্র ও রাজনৈতিক বিভাগের সদস্য ওসামা হামদান স্থগিত হওয়া যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার বিষয়ে সশস্ত্র গোষ্ঠীটির অবস্থান জানান।

পাশাপাশি গাজায় ফিলিস্তিনিদের প্রাণহানির কারণ হয়ে ওঠা গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার ঘটনার জন্য হামাস অনুতপ্ত কিনা, তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন হামদান।চলতি সপ্তাহে গাজায় হামাসের প্রধান ইয়াহিয়া শিনওয়ারের ফাঁস হওয়া একটি বার্তা নিয়েও কথা বলেছেন হামদান যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, যুদ্ধবিরতির আলোচনার চাবিকাঠি এখন হামাসের হাতে।মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বৃহস্পতিবার এনবিসিকে বলেন, এই দরাদরি বন্ধ করতে হবে।শিনওয়ার প্রসঙ্গে ব্লিংকেন বলেন, “তিনি মাটির নিচে তুলনামূলকভাবে নিরাপদ; তিনি যে জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করতে চান, তারা প্রতিদিন কষ্ট পাচ্ছেন।”

সিএনএনকে হামদান বলেছেন, আলোচনার টেবিলে সর্বশেষ প্রস্তাব হচ্ছে একটি ইসরায়েলি পরিকল্পনা, যা গত মাসের শেষের দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রথম প্রকাশ্যে আনেন। এটি যুদ্ধ বন্ধে তাদের দাবির সঙ্গে মেলে না।“হামাসের যুদ্ধবিরতি মেনে নেওয়া, গাজা থেকে সম্পূর্ণ (ইসরায়েলি সেনা) প্রত্যাহার এবং ফিলিস্তিনিদেরকে নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে দেওয়ার জন্য ইসরায়েলের কাছ থেকে একটি স্পষ্ট অবস্থান দরকার। পুনর্গঠন, অবরোধ (প্রত্যাহার) এবং আমরা বন্দি বিনিময় সম্পর্কে একটি ন্যায্য চুক্তি সম্পর্কে কথা বলতে প্রস্তুত।”যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত এই প্রস্তাব নিয়ে সম্প্রতি আলোচনা জোরদার হলেও হামাস দলিলটি পাওয়ার ১২ দিন পর বুধবার প্রতিক্রিয়া জানানোর পর আলোচনা থেমে যায়।

দলিলটি ‘অসংখ্যবার পরিবর্তন’ করে জমা দেওয়া হয়। এতে হতাশা প্রকাশ করে ব্লিংকেন বলেন, হামাসের সিদ্ধান্তকে প্রথমে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি অবস্থানের বাইরে চলে গেছে।“কিছু পরিবর্তন কার্যকরী,” বুধবার দোহায় এক সংবাদ সম্মেলনে ব্লিনকেন বলেন।সোমবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে অনুমোদিত যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় পর্যায়ক্রমে বলা হয়েছে।প্রথম ধাপে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি থাকবে, যার মধ্যে ফিলিস্তিনি বন্দিদের বিনিময়ে কিছু জিম্মি বিনিময় করা হবে এবং ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজার জনবহুল এলাকা থেকে সরে আসবে।

দ্বিতীয় পর্যায়ে যুদ্ধের স্থায়ী অবসান এবং গাজা থেকে সম্পূর্ণ ইসরায়েল বাহিনী প্রত্যাহার উভয় পক্ষের মধ্যে আরও আলোচনার পরেই কার্যকর করা হবে।তবে হামদান সিএনএনকে বলেছেন, যুদ্ধবিরতির সময়কাল হামাসের জন্য একটি মূল বিষয় ছিল। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, ইসরায়েলের চুক্তির দ্বিতীয় পর্যায় অনুসরণ করার কোনো ইচ্ছা নেই।তিনি আরও বলেন, “শত্রুতার অবসান অবশ্যই স্থায়ী হতে হবে এবং ইসরায়েলকে অবশ্যই গাজা থেকে পুরোপুরি প্রত্যাহার করতে হবে।

“ইসরায়েলিরা কেবল ছয় সপ্তাহের জন্য যুদ্ধবিরতি চায় এবং তারপর তারা লড়াইয়ে ফিরে যেতে চায়। আমি মনে করি, আমেরিকানরা এখন পর্যন্ত ইসরায়েলিদের স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে পারেনি।”ইসরায়েল এখনও প্রকাশ্যে এই চুক্তির প্রতিশ্রুতি দেয়নি।প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, যিনি বর্তমান যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা মেনে নিতে চাপের মধ্যে রয়েছেন, তিনি বারবার বলেছেন, ইসরায়েল হামাসকে নির্মূল না করা পর্যন্ত যুদ্ধ শেষ হবে না।

দায়িত্বের প্রশ্ন

সিএনএনের সঙ্গে আলোচনায় হামাসের মুখপাত্র হামদান বারবার গাজায় ফিলিস্তিনিদের দুর্দশায় দায়ের বিষয়টি প্রশ্ন এড়িয়ে যান।তিনি ৭ অক্টোবরের সন্ত্রাসী হামলাকে ‘দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে জবাব’ বলে অভিহিত করেন।৭ অক্টোবরের হামলাটি ছিল ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা। ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে চালানো ওই হামলায় হামাস এবং অন্যান্য ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীর যোদ্ধারা১,২০০ জনেরও বেশি লোককে হত্যা করে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক এবং প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায়।

এরপরই গাজায় শুরু হয় ইসরায়েলের পাল্টা হামলা, যা এখনো চলছে।গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এছাড়া গাজার প্রায় ৯০% মানুষই বাস্তুচ্যুত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।গাজার কর্তৃপক্ষ বেসামরিক নাগরিক ও হামাস যোদ্ধাদের হতাহতের মধ্যে পার্থক্য না করলেও ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) একজন মুখপাত্র এর আগে স্বীকার করেছিলেন, অভিযানে নিহতদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।

হামাস ইসরায়েলে হামলা চালানোর সিদ্ধান্তের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে কিনা সিএনএনের পক্ষ থেকে কয়েক বার এমন প্রশ্ন করা হলে হামদান পরিস্থিতির জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে বলেন, এই হামলা ‘দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে একটি জবাব’।“যিনি বা যারা দায়িত্বে আছে, এর (দখলদারিত্ব) জন্য তিনি বা তারাই দায়ী। যদি আপনি দখলদারিত্বের বিরোধিতা করেন তবে আপনাকে হত্যা করবে, যদি আপনি দখলদারিত্বের বিরোধিতা নাও করেন তাও আপনাকে হত্যা করবে এবং আপনাকে আপনার দেশ থেকে নির্বাসিত করবে। তাহলে আমাদের কী করার আছে, শুধু অপেক্ষা করা ছাড়া?”

শিনওয়ার হাজার হাজার ফিলিস্তিনির মৃত্যুকে ‘আত্মত্যাগ’ বলেছেন বলে যে খবর রেটেছে, তাকে ভুয়া বলে উড়িয়ে দিয়েছেন হামদান।৭ অক্টোবরের হামলার পর থেকে শিনওয়ারকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি গাজার সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্কের ভেতরে লুকিয়ে আছেন। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য দেশ তাকে সন্ত্রাসী হিসাবে চিহ্নিত করেছে।ইজরায়েল বারবার গাজার বেসামরিক নাগরিকদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার জন্য হামাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেএই সপ্তাহের শুরুতে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল হামাসের বিভিন্ন নেতাদের কাছে পাঠানো শিনওয়ারের কিছু বার্তা প্রকাশ করেছে, যাতে তিনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আপসহীন সংকল্প প্রকাশ করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।হামদান সিএনএনকে বলেন, বার্তাগুলো ‘ভুয়া’।

হামাসকে ধ্বংস করা হচ্ছে?

ইসরায়েল যখন হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে, তখন নেতানিয়াহু বলেছিলেন, হামাসকে ধ্বংস করা এবং গাজায় আটক জিম্মিদের ফিরিয়ে আনাই তাদের লক্ষ্য।আইডিএফ কয়েকজন হামাস কমান্ডারকে হত্যা করলেও শিনওয়ারসহ গাজার শীর্ষ নেতৃত্ব তাদের চোখ এড়িয়ে চলছেন। যুদ্ধে অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি হলেও ইসরায়েল লক্ষ্য করে হামাসের রকেট ছোড়া বন্ধ হয়নি।

মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা মনে করেন, শিনওয়ার সম্ভবত বিশ্বাস করেন, ইসরায়েল যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তা থেকে হামাস বেঁচে যাবে।অন্যদিকে, নেতানিয়াহু একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে রয়েছেন, যা গাজায় অবশিষ্ট জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা নিশ্চিত করবে।ইসরায়েলের বিশ্বাস, গাজায় এখনও আটক শতাধিক জিম্মির মধ্যে ৭০ জনেরও বেশি জন বেঁচে আছেন।সিএনএনকে হামদান বলেন, কতজন জীবিত আছেন তা তিনি জানেন না।“এ বিষয়ে আমার কোনো ধারণা নেই। কারও কোনো ধারণা নেই।”

তিনি অভিযোগ করেন, গত শনিবার চারজনকে জিম্মিকে মুক্ত করতে ইসরায়েলি অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। যদিও এই দাবির সপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ দিতেক পারেননি হামদান।আশঙ্কা করা হচ্ছে, জিম্মিদের মধ্যে যতজনের পরিচয় জচানা গেছে, তার বেশি জন মারা যেতে পারে।গত এপ্রিলে হামাস আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের জানায়, চুক্তির প্রথম ধাপে বাকি ৪০ জন জিম্মিকে মুক্তি দিতে ইসরায়েলের দাবি তারা পূরণ করতে পারেনি। জিম্মিদের মধ্যে সব নারী, অসুস্থ ও বয়স্ক পুরুষও রয়েছে।

জিম্মিরা মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে একজন চিকিৎসক যে দাবি করেছেন, সে বিষয়ে হামাস মুখপাত্র হামদান আবারও তাদের দুর্ভোগের জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেন।“আমি বিশ্বাস করি, গাজায় ইসরায়েলের যে কর্মকাণ্ড, তাদের মানসিক সমস্যা আছে। কারণ ইসরাইল যা করছে তা কেউ সামলাতে পারছে না, প্রতিদিন বোমা হামলা চালাচ্ছে, বেসামরিক মানুষ হত্যা করছে, নারী ও শিশুদের হত্যা করছে। তারা নিজেদের চোখে এসব দেখেছে।”

সম্পরকিত প্রবন্ধ

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য