Saturday, July 27, 2024
বাড়িবিশ্ব সংবাদনির্বাচনে কতটা প্রভাব ফেলবে ট্রাম্পের রায়?

নির্বাচনে কতটা প্রভাব ফেলবে ট্রাম্পের রায়?

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ১ জুন: পর্ন তারকার সঙ্গে সম্পর্ক চেপে রাখতে তাকে ঘুষ দেওয়ার মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের পাতায় আলাদা জায়গা করে নিয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।ট্রাম্পই দেশটির প্রথম সাবেক প্রেসিডেন্ট, যিনি ফৌজদারী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন। অপরাধের দায় মাথায় নিয়ে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রধান কোনো দলের সম্ভাব্য প্রার্থীও তিনি।আসছে ১১ জুলাই এ মামলায় ট্রাম্পের সাজা ঘোষণা হবে। তাতে তার কারাদণ্ড এবং মোটা অঙ্কের জরিমানা হতে পারে। ট্রাম্প অবশ্য আদালতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার পরিকল্পনা করছেন।

এই রায় ট্রাম্পের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের পতন ডেকে আনবে কি না, স্বাভাবিকভাবেই সে আলোচনা সামনে আস। এখন প্রশ্ন হল, ট্রাম্পের মামলার বিচার তার ক্যারিয়ারে কতটা প্রভাব ফেলবে?বিবিসি লিখেছে, ট্রাম্পের এই সমীকরণটি জটিলই হবে। ফৌজদারি অপরাধের কারণে রাজনৈতিক পতনের ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে আগে কখনও ঘটেনি।সাদার্ন মেথোডিস্ট ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর প্রেসিডেন্সিয়াল হিস্ট্রির ডিরেক্টর জেফরি অ্যাঙ্গেল বলেন, “সামনে কী ঘটতে চলেছে সে ইঙ্গিত পেতে আমরা অনেক সময় ইতিহাসের দিকে তাকাই। কিন্তু সেরকম কিছু বা তার কাছাকাছি কিছুও যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নেই।”

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়ার জন্য রিপাবলিকান দলের হয়ে মনোয়ন নিশ্চিত করেছেন ট্রাম্প। সাজা ঘোষণার কিছুদিন পরেই আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে প্রার্থী ঘোষণা করার কথা রয়েছে।যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে জরিপগুলোতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ডনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পওয়া যাচ্ছে। যে রাজ্যগুলো নির্বাচনের ফল বদলে দিতে পারে, দোদল্যুমান সেইসব রাজ্যের অনেকগুলোতে ট্রাম্পকে সামান্য এগিয়ে থাকতেও দেখা যাচ্ছে জরিপে। আবার জরিপগুলো এও দেখাচ্ছে, ট্রাম্পের দণ্ডাদেশ সবকিছু বদলে দিতে পারে।গত শীতে রিপাবলিকানদের প্রার্থী বাছাইয়ের প্রাথমিক নির্বাচনের সময়ে একটি মতামত জরিপ চালানো হয়েছিল। সেখানে দ্বিগুণ সংখ্যক ভোটার বলেছিলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হলে তারা তাকে ভোট দেবেন না।

গত এপ্রিলে বাজার গবেষণা কোম্পানি ‘আইপিএসওএস’ এবং এবিসি নিউজের জরিপে দেখা যায়, ট্রাম্প দোষী প্রমাণিত হলে তার ১৬ শতাংশ সমর্থক ভোটের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে পুনর্বিবেচনা করবেন।সে সময়ে ট্রাম্প চারটি ফৌজদারি মামলার মুখে ছিলেন। এর মধ্যে ২০২০ সালের নির্বাচনের ফল উল্টে দেওয়ার কথিত ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এবং হোয়াইট হাউস ছাড়ার সময় নথি হস্তান্তর নিয়ে মামলাও ছিল।ট্রাম্পের দোষী সাব্যস্ত হওয়ার সম্ভাবনার ভিত্তিতে সে সময় জরিপ চালানো হয়েছিল। ভোটারদের উত্তর ছিল অনুমাননির্ভর। আর এখন ফৌজদারি মামলার সত্যিই দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন ট্রাম্প। ভোটাররাও সেভাবেই তাদের সিদ্ধান্ত নেবেন।

বিচার চলাকালে আদালত থেকে বেরিয়ে ট্রাম্প বলেছিলেন, “আগামী ৫ নভেম্বর জনগণ প্রকৃত রায় দিতে চলেছে।”ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও নিউ ইয়র্ক সিটি মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গের সঙ্গে কাজ করা জনমত জরিপ পরিচালনকারী ডগ শোয়েন বলেন, পর্ন তারকার সঙ্গে সম্পর্ক চেপে রাখতে ঘুষ দেওয়ার বিষয়টিকে আমেরিকানরা বড় কোনো বিষয় নাও ভাবতে পারে। আর ঘটনাটা আট বছর আগের।“নভেম্বরে নির্বাচনে ভোটাররা যে জিনিসগুলো নিয়ে ভাবছেন, তা হল- মুদ্রাস্ফীতি, মেক্সিকো সীমান্ত, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিযোগিতা এবং ইসরায়েল ও ইউক্রেনে ব্যয় করা অর্থের মত বিষয়গুলো।”

আবার রায়ের ফলে ট্রাম্পের সমর্থন সামান্য কমলেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তা বড় কোনো প্রভাব ফেলবে বলে মনে হয় না। সমর্থন সামান্য কমার পরও জোরালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে।উইসকনসিন বা পেনসিলভানিয়ার মত গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের ট্রাম্পের কয়েক হাজার ভোটার যদি তাকে ভোট না দিয়ে ঘরে বসে থাকেন, তখন বড় পার্থক্য হতে পারে‘রিপাবলিকান উইমেন ফর প্রগ্রেস’ এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা অ্যারিয়েল হিল-ডেভিস বলেন, “ট্রাম্পের রায় তার রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে এবং প্রার্থিতা থেকে তিনি ছিটকে পড়বেন– এমনটা আমি মনে করি না।“তরুণ ভোটার, যারা কলেজে শিক্ষিত এবং শহরে বাস করেন, তারা ট্রাম্পের আচরণ ও শাসন নিয়ে উদ্বিগ্ন। ডনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে রিপাবলিকান দলের পেছনে দাঁড়াতে এই ভোটাররা সত্যিকার অর্থেই ধন্দে আছে। দোষী সাব্যস্ত করে দেওয়া রায় তাদের সেই উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলবে।”

তবে নেতৃস্থানীয় রিপাবলিকান নেতাদের অনেকেই দলীয় মনোনীত প্রার্থীর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেছেন। তারা ট্রাম্পের পেছনেই থাকবেন।এ ঘটনায় হাউস স্পিকার মাইক জনসন বলেন, এটি আমেরিকার ইতিহাসে ‘লজ্জাজনক’ দিন। বিচার চলাকালে ট্রাম্পের পেছনে রিপাবলিকান নেতাদের অবস্থান সম্পূর্ণ রাজনৈতিক চর্চা, আইনগত কিছু নয়।বিশেষজ্ঞ ও ট্রাম্পের বিরোধীরা তার আসন্ন ‘রাজনৈতিক পতন’ নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করে আসছেন আট বছর ধরেই। ২০১৬ সালের নির্বাচনি প্রচারের সময় যেরকম কেলেঙ্কারির অভিযোগ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে উঠেছিল, একজন সাধারণ রাজনীতিবিদ হলে তিনি বাদ পড়তে পারতেন। নারীরদের যৌন হেনস্তার অভিযোগও ছিল, যে বিষয়টি পরে বিচারে বারবার উঠে আসে।

দুটি অভিসংশন ও প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষের সময়ে মার্কিন ক্যাপিটল হিলে সমর্থকদের বিশৃঙ্খলার ঘটনা সত্ত্বেও ট্রাম্পের সঙ্গেই রয়েছে তার দল। এসব ঘটনার কিছুই ট্রাম্পের নির্বাচনে দাঁড়ানো ঠেকাতে পারেনি। বরং নভেম্বরে হোয়াইট হাউজে যাওয়ার দৌড়ে তার অবস্থান ক্রমশ মজবুত হয়েছে।“এই মুহূ্র্তে ট্রাম্পের অবস্থান প্রমাণেরও দরকার নেই। এমন কেলেঙ্কারি সত্ত্বেও ট্রাম্পের অব্যাহত সমর্থন সত্যিই বিস্ময়কর,” বলেন অ্যাঙ্গেল।ট্রাম্পের এই অপরাধী সাব্যস্ত হওয়ার বিষয়টি ভিন্নরকম হতে পারে। বিশেষ করে যদি তার আপিল ব্যর্থ হয় এবং তার কারাগারে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। অথবা তার রাজনীতিতে ঘটে যাওয়া নানা ঝক্কি-ঝামেলার সবশেষ ঘটনাও হতে পারে এটি, যা অদৃশ্যভাবে তার ক্ষমতায় যাওয়ার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আমেরিকান ইউনিভার্সিটির এক অধ্যাপক অ্যালান লিচম্যান একটি রাজনৈতিক মডেল তৈরি করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীকে কে হবে, ১৯৮৪ সাল থেকে সফলভাবে সেই মডেলের মাধ্যমে ভবিষ্যদ্বাণী করে আসছেন।অ্যালান লিচম্যান জানান, ট্রাম্পের দোষী সাব্যস্ত হওয়ার ঘটনাটি ‘বিপর্যয়কর ও নজিরবিহীন’ বাঁক হয়ে দেখা দিতে পারে, যা ইতিহাসের ধারা পরিবর্তন করে দিতে পারে।“ইতিহাসের বইগুলো এটাকে সত্যিকারের অসাধারণ, অভূতপূর্ব ঘটনা হিসেবেই লিপিবদ্ধ করবে। কিন্তু এরপর কী ঘটবে, তার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করবে।”

জরিপ আর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মডেল যাই বলুক, ট্রাম্পের রায় তার রাজনীতির ক্যারিয়ারে কী প্রভাব ফেলবে, নভেম্বরে ভোটাররাই তা নির্ধারণ করে দেবেন।ট্রাম্প পরাজিত হলে তখন হয়ত ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়াকে তার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হবে। আবার তিনি যদি জয়ী হন, তখন ট্রাম্পের ‘উত্তাল’ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে সেটি কেবল একটি পাদটীকা হয়ে থাকবে।অ্যাঙ্গেল বলেন, “আমরা যেমনটা জানি, ইতিহাস বিজয়ীরাই লেখে।”

সম্পরকিত প্রবন্ধ

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য