Thursday, May 22, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদবাল্টিমোর সেতু ধস: আটকা পড়া ২১ নাবিকের কী হবে?

বাল্টিমোর সেতু ধস: আটকা পড়া ২১ নাবিকের কী হবে?

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ২ এপ্রিল: যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ডের বাল্টিমোরে প্যাটাপস্কো নদীতে সেতু ধসের ঘটনার পর থেকে আটকা পড়া অপেক্ষাকৃত ছোট জলযানগুলোকে মুক্ত করতে অস্থায়ী একটি চ্যানেল খুলেছে বাল্টিমোর বন্দর কর্তৃপক্ষ।সোমবার ওই চ্যানেল দিয়ে কিছু টাগবোট ও বার্জ পার হয়েছে, কিন্তু ধসে পড়া ফ্রান্সিস স্কট কি ব্রিজের আবর্জনায় নদীর তলদেশ ভরে থাকায় বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল সহসাই শুরু করা যাচ্ছে না বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।     গত মঙ্গলবার মাল বোঝাই কন্টেইনারবাহী জাহাজ ডালির ধাক্কায় প্যাটাপস্কো নদীর ওপর দিয়ে যাওয়া মহাসড়ক সেতুটি ধসে পড়ে। ঘটনার সময় জাহাজটিতে বৈদ্যুতিক গোলযোগ দেখা দিয়েছিল, এতে এটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেতুর একটি পিলারে ধাক্কা দেয় আর তাতে প্রায় তিন কিলোমিটার সেতুটির অধিকাংশ অংশ ধসে পড়ে।এ ঘটনায় ছয় সড়ক মেরামত কর্মীর মৃত্যু হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি মহাসড়ক অচল হয়ে পড়ে। বাল্টিমোর বন্দরের কার্যক্রমও মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়।

ডালির ক্রুদের বিষয়ে যা জানা গেছে

দুর্ঘটনাটির সময় ডালিতে মোট ২১ জন ক্রু ছিল। তারা তখন ২৭ দিনের সমুদ্র যাত্রার প্রস্তুতি নিয়ে শ্রীলঙ্কার পথে রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু কয়েক মিনিটের ঘটনায় তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে আটকা পড়ে যান।জাহাজটির ২১ জন ক্রুর মধ্যে ২০ জন ভারতীয় নাগরিক বলে নিশ্চিত করেছে ভারত। দেশটির সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বৈশ্বিক সামুদ্রিক শিল্পে ভারতীয় কর্মীর সংখ্যা তিন লাখ ১৫ হাজার। যা মোট কর্মী সংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ।বৈশ্বিক সামুদ্রিক শিল্প খাতে সবচেয়ে বেশি কর্মী আছে ফিলিপিন্সের। ভারতীয়রা আছে এদের পরই। 

যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড জানিয়েছে, ডালির ক্রুদের মধ্যে একজন শ্রীলঙ্কান আছেন।গত সপ্তাহে ভারতীয় এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জাহাজটির সব ক্রু সুস্থ্য আছেন। যে একজন সামান্য আহত হয়েছিলেন, তার ক্ষতে সেলাই লাগলেও তিনিও এখন ভালো আছেন। তবে তাদের নাম, তারা কোন অঞ্চলের বাসিন্দা ও তাদের অভিজ্ঞতার মতো বিষয়গুলো নিয়ে তেমন কোনো তথ্য প্রকাশ পায়নি।

ডালির ক্রু সদস্যরা এখন কী করছেন

ডালির ক্রু সদস্যদের সঙ্গে বাইরের খুব অল্প লোকের যোগাযোগ আছে। তাদের মধ্যে সমুদ্রগামী নাবিকদের অধিকার রক্ষার জন্য কাজ করা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান বাল্টিমোর ইন্টারন্যাশনাল সিফেয়ারার্স সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক জোশুয়া মেসিক অন্যতম।মেসিক বিবিসিকে জানান, তিনি হোয়াটঅ্যাপে ডালির নাবিকদের সঙ্গে বার্তা বিনিময় করেছেন। ঘটনার ধাক্কায় ওই নাবিকরা ‘হতবিহ্বল’ হয়ে আছেন। তদন্ত শুরু হওয়ার পর থেকে তারা তাদের নিজেদের পরিস্থিতি নিয়ে তেমন কোনো কথা বলছেন না।  “তাদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকা কাউকেই তেমন কিছু বলছেন না তারা,” বলেন মেসিক।“শনিবারের আগে পর্যন্ত তাদের ওয়াইফাই সংযোগও ছিল না। তাই বাকি বিশ্বের সবাই কী ভাবছ তা নিয়ে তাদের কোনো ধারণা নেই। তাদের দোষী করা হয়েছে কি না, সে বিষয়েও তারা নিশ্চিত না। কী আশা করা উচিত তাই বুঝতে পারছে না তারা।

“তারা পরিস্থিতির বিষয়ে খুব স্পর্শকাতর হয়ে আছে। তারা যা বলতে পারে তা কোম্পানিতে প্রভাব ফেলতে পারে। আমার যা মনে হয়, সম্ভবত এই সময়টিতে তাদের বেশি কথা না বলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”বাল্টিমোরে আসা জাহাজগুলোর চাহিদা পূরণ করার কর্মসূচী ‘অ্যাপাসোলশিপ অব সি’র পরিচালক অ্যান্ড্রু মিডলটন জানান, দুর্ঘটনার পর থেকে জাহাজটির ক্রুদের সঙ্গে তার ‘দিনে বেশ কয়েকবার করে’ যোগাযোগ হচ্ছে।“তারা বলছে তারা ভালো আছে,” বলেছেন তিনি।শুক্রবার মার্কিন কোস্টগার্ডের অ্যাডমিরাল শ্যানন গিলরথ জানিয়েছেন, তাদের প্রথম লক্ষ্য হচ্ছে বাল্টিমোর বন্দর ও শিপিং চ্যানেল পুরোপুরি চালু করা, ডালিকে সরিয়ে নেওয়া পরে বিষয়।স্বাভাবিক সময়েও যুক্তরাষ্ট্রের বন্দরগুলোতে বিদেশি নাগরিকদের জাহাজ থেকে নামার জন্য অনেক নথি লাগে ও প্রচুর কাগজপত্রে সই-স্বাক্ষর করতে হয়।   

ভিসা ছাড়াও নাবিকদের জাহাজ থেকে তীরে নামতে বৈধ পাস থাকতে হয়। জাহাজ থেকে টার্মিনাল গেট পর্যন্ত যাওয়ার সময় তাদের জন্য পথপদর্শকও লাগে। তবে এসব কাজ ওই এলাকায় থাকা অনেক অলাভজনক প্রতিষ্ঠানও করে দেয়।ডালির ক্রুদের জাহাজ থেকে নামার মতো প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের দরকার হবে কিনা তা পরিষ্কার হয়নি।বাল্টিমোরের সেতু দুর্ঘটনার পুরো বিষয়টির তত্ত্বাবধান করা কর্তৃপক্ষ সোমবার বিবিসিকে জানিয়েছে, তদন্ত শেষ হতে কতোদিন লাগতে পারে তা পরিষ্কার না আর ‘প্রক্রিয়াটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত ডালির ক্রুদের তাদের জাহাজেই থাকতে হবে’।এ প্রক্রিয়া শেষ হতে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন একজন প্রবীণ ভারতীয় নাবিক।শ্রীলঙ্কার পথে ২৭ দিনের রসদ নিয়ে রওনা হওয়ায় আপাতত ডালিতে পর্যাপ্ত খাবার, পানি ও অন্যান্য সরবরাহ আছে। তরুণ ক্রুরা ভিডিও গেম খেলে ও সামাজিক মাধ্যমে ব্যস্ত থেকে সময় পার করছেন। তবে দীর্ঘদিন আটকা পরে থাকলে ক্রুরা ক্লান্তি ও একঘেয়েমিতে আক্রান্ত হতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য

error: <b>Alert: </b>Content selection is disabled!!