Saturday, July 27, 2024
বাড়িবিশ্ব সংবাদপশুখাদ্য, জালি কাপড়ে মোড়া খেজুর: গাজায় যা খাচ্ছে শিশুরা

পশুখাদ্য, জালি কাপড়ে মোড়া খেজুর: গাজায় যা খাচ্ছে শিশুরা

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ২৮ ফেব্রুয়ারি: গাজায় চলমান যুদ্ধে দেখা দিয়েছে চরম খাদ্য সংকট। শিশুরা সেখানে পশু-পাখির খাদ্য দিয়ে তৈরি তিতকুটে খাবার খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। কিন্তু সেই খাদ্যেও এখন টান পড়ছে। দুধের শিশুর মুখে খেজুর গুঁজে দিয়ে সন্তানকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছেন মা।গাজায় উদ্বাস্তু হয়ে শরণার্থী শিবিরে ঠাঁই পাওয়া শিশু ও নারীদের বর্ণনায় উঠে এসেছে সেখানকার এই ভয়াবহ চিত্র। বিশেষ করে গাজার উত্তরাঞ্চলে খাদ্য সংকট খুবই প্রকট। কারণ, যুদ্ধ এবং নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতির কারণে সেখানে ঠিকমত পৌঁছাচ্ছে না ত্রাণ সরবরাহ।

যুদ্ধের মুখে গাজা ভূখণ্ডের বৃহত্তম নগরী গাজা সিটি থেকে পালিয়ে দক্ষিণের একটি আশ্রয়শিবিরে ঠাঁই নেওয়া তিন শিশু জানিয়েছে ফেলে আসা দিনগুলোতে খাবারের কষ্টে থাকার কথা।৮ বছর বয়সী সেরাজ শেহাদা, ৯ বছরের ইসমাইল এবং ১১ বছর বয়সী সাদ সম্পর্কে তিন ভাই। তারা জানায়, গাজা সিটিতে খাওয়ার কিছুই ছিল না। তাই গাজার কেন্দ্রস্থলে দেইর আল-বালায় ফুপুর সঙ্গে আশ্রয়শিবিরে ঠাঁই নেওয়ার জন্য গোপনে সেখানে পালিয়ে যায় তারা।দেইর আল-বালার আশ্রয়শিবিরে বসে গোগ্রাসে হালুয়া খেতে খেতে কথা বলছিল এই শিশুরা। সেরাজ শেহাদার কথায়, “আমরা যখন গাজা সিটিতে ছিলাম, তখন কিছুই খেতাম না। দুইদিন পরপর খাওয়া জুটত। আমরা পাখি,গাধার খাবার খেতাম। বলতে গেলে যে কোনওকিছুই খেতাম।”

যুদ্ধে এই ভাইয়েরা মা, আরেক ভাই এবং আরও কয়েকজন স্বজন হারানোর কথা জানিয়েছে। বড় ভাই শেহাদা বলেছে, বাবা আর দাদীকে নিয়ে তারা শহর ছেড়েছিল। তাদের কাছে পশুখাদ্য থেকে তৈরি পাউরুটি ছাড়া খাওয়ার আর প্রায় কিছুই ছিল না।“ওই পাউরুটি ছিল ততকুটে। আমরা সেটি খেতে চাইনি। কিন্তু খেতে বাধ্য হয়েছি। দুইদিন পরপর এক টুকরো পাউরুটি,” জানায় শেহাদা।নোনা পানি পান করে অসুস্থ হয়ে পড়া এবং গোসল বা কাপড় ধোয়ার কোনো উপায় না থাকার কথাও জানিয়েছে সে। বলেছে, “আমরা বাবাকে না বলেই গোপনে দেইর-আর বালায় চলে এসেছি।”সেখানে তারা তাদের ফুপু এমা শেহাদার কাছ থেকে যথাসম্ভব যত্নআত্মি পাচ্ছে। তবে এমা শেহাদার অবস্থাও করুণ। যুদ্ধে স্বামী হারিয়ে আশ্রয়শিবিরে ঠাঁই নেওয়া এই নারী সন্তানসম্ভবা। তার এক মেয়ে এবং শিশুসন্তান নিয়ে তিনি সেখানে থাকছেন।

একজন গর্ভবতী মায়ের যে পুষ্টি দরকার তা তিনি পাচ্ছেন না। একারণে, প্রায়ই ক্লান্ত এবং ঝিমুনি অনুভব করছেন বলে জানিয়েছেন এই নারী।“এক কেজি আলু কেনারও তার সামর্থ্য নেই। এই বাচ্চাদের নিয়ে কীভাবে সবকিছু সামলাব আমি জানি না। আমি গর্ভবতী। যে কোনও সময় আমার শিশুর জন্ম হতে পারে,” বলেন এমা।দেইর আল-বালার উত্তর দিকেই আছে আরেক শরণার্থী শিবির আল-নুসেইরাত। সেখানকার এক মা জানিয়েছেন, শিশুর জন্য খাবারের সংকটে থাকার কথা।দুই মাসের ছোট্ট শিশু নিয়ে একটি স্কুলের ওই আশ্রয়শিবিরে থাকছেন ওয়াদা মাত্তার নামের উদ্বাস্ত এই নারী। শিশুর জন্য নেই দুধ। তাই বাধ্য হয়ে গজের জালি কাপড়ে খেজুর মুড়িয়ে তা সন্তানের মুখে গুঁজে দিয়েছেন তিনি।

এই মা বলেন, “আমার নবজাতক ছেলের দুধ দরকার। সেটি প্রাকৃতিক বা ফরমূলা, যা-ই হোক। কিন্তু আমি দুধ পাচ্ছি না। কারণ, গাজায় কোনও দুধ নেই। তাই খেজুর দিয়ে ছেলেকে শান্তি রাখছি।”গত বছর ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর থেকে গাজায় অবিরাম ব্যাপক বিমান, ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পাশাপাশি স্থল হামলাও চালিয়ে আসছে ইসরায়েল।হামাসকে ধ্বংস করার অঙ্গীকার নিয়ে ইসরায়েলের চালানো এই অভিযানে ২৯ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনি নিহতের পরিসংখ্যান জানিয়েছে গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়।যুদ্ধে বাস্তুচ্যুত হয়েছে গাজার ২৩ লাখ মানুষ। খাদ্যসংকটে বহু মানুষ হয়েছে ক্ষুধার্ত। জনাকীর্ণ আশ্রয় শিবিরগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে রোগ-বালাই।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য