Monday, February 17, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে গাজার ‘অর্ধেক’ ভবন

ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে গাজার ‘অর্ধেক’ ভবন

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ৩১ জানুয়ারি: গত অক্টোবরে হামাসের হামলার জবাবে ইসরায়েলের প্রতিশোধ অভিযান শুরুর পর থেকে গাজার অর্ধেকের বেশি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে বলে উঠে এসেছে নতুন এক বিশ্লেষণে।নিউ ইয়র্কের সিটি ইউনিভার্সিটির কোরি শের এবং ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির জ্যামন ভ্যান ডেন হোয়েক ওই অভিযানের আগে এবং পরে গাজার স্যাটেলাইট ছবিগুলো বিশ্লেষণ করে ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করেছেন।  

বিবিসি লিখেছে, ডিসেম্বরের শুরু থেকে গাজার দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ কীভাবে তীব্র হয়েছে, খান ইউনিস কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ওই বিশ্লেষণে তা উঠে এসেছে। গাজাজুড়ে আবাসিক এলাকাগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে; আগে যেখানে ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকা ছিল, সেখানে এখন ধ্বংসস্তূপ। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। কৃষিজমিগুলোতে যেন চালানো হয়েছে খনন কাজ।গাজাবাসীকে ‘নিজেদের নিরাপত্তার জন্য’ বারবার দক্ষিণে সরে যেতে বলছে ইসরায়েল। গৃহহীন লাখো মানুষকে আশ্রয় দিতে গাজার দাক্ষিণ অংশে গড়ে উঠেছে তাঁবুর শহর।জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল অভিযান শুরু করার পর প্রায় ১৭ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যা গাজার মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশের বেশি। বাস্তুহারা এই মানুষগুলোর অর্ধেক এখন গাদাগাদি করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন গাজা ভূখণ্ডের দক্ষিণ প্রান্তে।

বিবিসি লিখেছে, ইসরায়েলের অভিযানে কৃষিজমিও যেভাবে ধ্বংস করা হয়েছে, তার মাত্রা স্পষ্ট হয়েছে তাদের বিশ্লেষণে।ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা নিয়ে যখনই প্রশ্ন করা হয়েছে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী-আইডিএফ বলেছে, ‘হামাস যোদ্ধা এবং সন্ত্রাসী অবকাঠামো’- এ দুটোই তাদের আক্রমণের লক্ষ্য। সেজন্য তারা কীভাবে গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে, তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লষণে।বিবিসি লিখেছে, পুরো গাজায় ১ লাখ ৪৪ হাজার থেকে ১ লাখ ৭৫ হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে, যা গাজার মোট ভবনের ৫০ থেকে ৬১ শতাংশের মধ্যে।গত কয়েক সপ্তাহে ইসরায়েলের অভিযানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাজার দক্ষিণের শহর খান ইউনিস। বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, ৩৮ হাজার বা ৪৬ শতাংশ ভবন ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেখানে। গত দুই সপ্তাহেই ধ্বংস করা হয়েছে দেড় হাজারের বেশি ভবন।

শহরের কেন্দ্রস্থলের ১৬ তলা আবাসিক ভবন আল-ফাররা টাওয়ার ছিল গাজার সবচেয়ে উঁচু ভবন। আগের এবং পরের ছবি মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, গত ৯ জানুয়ারি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে ভবনটি। আশপাশের ভবনেরও মোটামুটি একই পরিণতি হয়েছে ইসরায়েলের বোমা বর্ষণে। ওই এলাকার ২০ বছরের তরুণী রাওয়ান কাদ্দা আরো অনেকের মতই এখন বাস্তুচ্যুত। পরিবারের অন্যদেরও তিনি আর খুঁজে পাচ্ছেন না। বিবিসিকে তিনি বলেছেন, ইসরায়েলি বাহিনী খান ইউনিসে বিশেষ করে আবাসিক ভবনগুলোকে নিশানা করে হামলা করছে। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোর মধ্যে অনেক স্কুলও রয়েছে।বিবিসি লিখেছে, আইডিএফ বরাবরই সাফাই গেয়ে আসছে যে, হামাস যোদ্ধারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে বেসামরিক এলাকায় গিয়ে অবস্থান নেওয়ায় আবাসিক ভবনে আক্রমণ চালাতে হয়েছে ইসরায়েলকে। কিন্তু কিছু ভবন তারা নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে, যা তাদের ওই দাবিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

গাজার উত্তরাংশের ইসরা ইউনিভার্সিটি এমনিতেই ইসরায়েলের হামলায় দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ছিল। পরে নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুরো মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়। বিস্ফোরণের সেই ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর আইডিএফ এর পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে। এই বিশ্লেষণের কাজে যুক্ত নিউ ইয়র্ক সিটি ইউনিভার্সিটির কোরি শের বলেন, তারা যুদ্ধের মধ্যে থাকা অন্যান্য এলাকাতেও একই ধরনের বিশ্লেষণ করেছেন। ইউক্রেইন, আলেপ্পো এবং আরো কিছু শহরের পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করে দেখেছেন। কিন্তু গাজার মত এত দ্রুত এত বেশি ধ্বংসযজ্ঞ আর কোথাও দেখেননি। বিবিসি লিখেছে, ইসরায়েলি আগ্রাসন এবং বোমাবর্ষণে গাজার কৃষিজমিগুলো দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার চিত্র তাদের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে।গাজা যদিও আমদানি করা খাদ্যের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল ছিল, তারপরও এ এলাকার ফিলিস্তিনিদের খাদ্য চাহিদার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নিজস্ব কৃষিজমি থেকে মিটত। ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, গাজার অর্ধেক মানুষ এখন অনাহারে ভুগছে।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য