স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ১১ জানুয়ারি: লোহিত সাগরের দক্ষিণাঞ্চলে ইয়েমেনের হুতিদের ছোড়া ২১টি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করে ধ্বংস করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নৌবাহিনী।মঙ্গলবার রাতে ইরান সমর্থিত হুতিরা এসব ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে, যাকে লোহিত সাগরে তাদের এ পর্যন্ত চালানো বৃহত্তম হামলা বলে মনে করা হচ্ছে। হামলা প্রতিহত করার পর যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা হুতিদের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে। বিবিসি জানিয়েছে, বিমানবাহী রণতরী-ভিত্তিক জঙ্গি বিমান ও বহরে থাকা যুদ্ধজাহাজগুলো গুলি করে ওই ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছে।
হুতিদের এসব হামলা অবিলম্বে বন্ধ করার দাবি জানিয়ে বুধবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ একটি প্রস্তাব পাশ করেছে। প্রস্তাবে জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জাহাজ রক্ষার অধিকারকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। হুতিরা এতে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।মোহাম্মদ আলি আল-হুতি এই প্রস্তাবকে ‘রাজনৈতিক খেলা’ বলে অভিহিত করেছেন। তারা গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কিত জাহাজগুলোতে হামলা চালাচ্ছে বলে দাবি করে আসছে।প্রস্তাবটিতে ‘হুতিরা অবিলম্বে এ ধরনের সব হামলা বন্ধ করবে’ বলে দাবি জানানো হয়েছে। তাদের হামলা ‘বৈশ্বিক বাণিজ্যে বাধা সৃষ্টি করছে এবং জাহাজ চলাচলের অধিকার ও স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণের পাশপাশি আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার বিঘ্ন ঘটাচ্ছে’ বলে অভিযোগ করা হয়।নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য দেশের মধ্যে রাশিয়া ও চীন এবং অস্থায়ী সদস্যদের মধ্যে মোজাম্বিক ও আলজেরিয়া ভোট দানে বিরত থাকে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সসহ বাকি ১১ সদস্য প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দেয়।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র কয়েকটি দেশ লোহিত সাগরে হুতিদের হামলার জন্য ‘পরিণতির’ সম্পর্কে সতর্ক করে।ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব শিপিং জানিয়েছে, বিশ্বের কন্টেইনারবাহী জাহাজগুলোর ২০ শতাংশ এখন লোহিত সাগর এড়িয়ে চলাচল করছে, এর বদলে তারা আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণ প্রান্ত দিয়ে অনেক দীর্ঘ পথ ঘুরে গন্তব্যে যাচ্ছে।হুতিরা জানিয়েছে, মঙ্গলবার তারা ইসরায়েলকে সমর্থন যোগানো মার্কিন একটি জাহাজ লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। এটি ছিল ১৯ নভেম্বর থেকে লোহিত সাগরে হুতিদের চালানো ২৬তম হামলা।মার্কিন সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত প্রায় সোয়া ১০টার দিকে ইয়েমেনের হুতি নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলো থেকে ইরানের নকশা করা একমুখি ড্রোন, জাহাজ বিধ্বংসী ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও জাহাজ বিধ্বংসী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়।
লোহিত সাগরে মোতায়েন যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস ডোয়াইট ডি আইজেনহাওয়ার থেকে কয়েকটি এফ/এ-১৮ যুদ্ধবিমান উড়ে গিয়ে এবং চারটি ড্রেস্টয়ার থেকে ১৮টি ড্রোন, দু’টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করে ধ্বংস করা হয়।মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ড্রেস্টয়ার এইচএমএস ডায়মন্ড হুতিদের সাতটি ড্রোনকে কামান দিয়ে গুলি করে ও সি ভাইপার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ধ্বংস করেছে। এ ধরনের একেকটি ক্ষেপণাস্ত্রের মূল্য ১৩ লাখ ডলারেরও বেশি।এসব হামলায় কেউ হতাহত বা কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।এর কিছুক্ষণ পর হুতি সামরিক মুখপাত্র ইয়াহিয়া আল-সারেয়া জানান, তাদের বাহিনীগুলো ‘অনেকগুলো ড্রোন, নৌ ক্ষেপণাস্ত্র ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে’ একটি অভিযান চালিয়েছে।“জায়নবাদীদের সহায়তা যোগানো একটি মার্কিন জাহাজ লক্ষ্য করে হামলাগুলো চালানো হয়,” বলেন তিনি।