Tuesday, January 21, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদহেনরি কিসিঞ্জারের মৃত্যু

হেনরি কিসিঞ্জারের মৃত্যু

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ৩০ নভেম্বর: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রভাবশালী পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ঊনিশশ সত্তরের দশকের স্নায়ুযুদ্ধের ইতিহাসের অন্যতম রূপকার হেনরি কিসিঞ্জার মারা গেছেন; তার বয়স হয়েছিল ১০০ বছর।যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ও জেরাল্ড ফোর্ডের সময় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা কিসিঞ্জার মার্কিন কূটনীতিতে রেখে গেছেন অমোচনীয় ছাপ, পরবর্তী জীবনে ক্ষমতার বাইরে থেকেও প্রভাব বিস্তার করে গেছেন আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে।তার প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কিসিঞ্জার অ্যাসোসিয়েটস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, জার্মান বংশোদ্ভূত এই সাবেক কূটনীতিক তার কানেটিকাটের বাড়িতে মারা গেছেন। তার মৃত্যুর কারণ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়নি।  কিসিঞ্জারের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ বলেছেন, পররাষ্ট্রনীতির বিষয়ে ‘সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্বকে’ হারালো যুক্তরাষ্ট্র।

চীন, রাশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন কূটনীতির সুরে এখনও কিসিঞ্জারের নীতি অনুরণিত হয়। বলা হয়, আনোয়ার সাদাত, মাও জে দং, রিচার্ড নিক্সন আর বাদশাহ ফয়সালের পররাষ্ট্রনীতিতেও তার প্রভাব ছিল।তুখোড় রাজনৈতিক মেধা আর কূটনৈতিক সাফল্যের জন্য নিজের দেশে কিসিঞ্জার যতটা সমাদৃত, বিশ্বের নানা প্রান্তে যুদ্ধ-সংঘাতের ‘কারিগর’ হিসেবে ছিলেন ততটাই নিন্দিত। কমিউনিস্ট চীন থেকে শুরু করে ভিয়েতনাম যুদ্ধের শেষপর্যন্ত সোভিয়েতবিরোধী স্বৈরশাসকদের সমর্থন দিয়ে গেছেন কিসিঞ্জার। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সম্প্রসারণ, চিলি ও আর্জেন্টিনায় সামরিক অভ্যুত্থান, পূর্ব তিমুরে ইন্দোনেশিয়ার রক্তক্ষয়ী অভিযানের পক্ষে অবস্থানের কারণে অনেকের কাছে তিনি একজন যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিবেচিত।১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর ব্যাপক নৃশংসতা দেখেও যে ভূমিকা কিসিঞ্জার নিয়েছিলেন, সেজন্য তিনি অনেকের ধিক্কারের পাত্র।১৯৭৩ সালে উত্তর ভিয়েতনামের লি ডাক থোর সঙ্গে হেনরি কিসিঞ্জারকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়, যা এ পুরস্কারের ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত সিদ্ধান্তের একটি।

জার্মানির নুরেমবার্গের এক ইহুদি পরিবারে ১৯২৩ সালের ২৭ মে কিসিঞ্জারের জন্ম। বাবা ছিলেন স্কুল শিক্ষক। ত্রিশের দশকের শুরুতে নাৎসি নির্যাতনের মুখে তাদের পরিবার যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী হয়।কিসিঞ্জারের বেড়ে ওঠা নিউ ইয়র্কে। শুরুতে এক নৈশ স্কুলে তিনি পড়তেন, দিনের বেলায় কাজ করতেন শেভিং ব্রাশ তৈরির কারখানায়।১৯৪৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পান কিসিঞ্জার। তিন বছর কাজ করেন মার্কিন সামরিক বাহিনীতে। পরে যোগ দেন কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স কোরে।স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি করার পর হার্ভার্ডে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পড়াতেন কিসিঞ্জার। ১৯৬৯ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন তাকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করে নেন, যে পদ মার্কিন পররাষ্ট্র নীতিতে ব্যাপক প্রভাব রাখার সুযোগ খুলে দেয় তার সামনে।

রিচার্ড নিক্সন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে, এবং পরে জেরাল্ড ফোর্ডের সরকারে একই দায়িত্বে থেকে কিসিঞ্জার চীনের সঙ্গে মার্কিন কূটনীতিক সম্পর্ককে পুনরায় সচল করার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেন। ১৯৭৩ সালে ইসরায়েল এবং আরব প্রতিবেশীদের মধ্যে যুদ্ধের অবসান ঘটাতে ভূমিকা রাখেন। প্যারিস শান্তি চুক্তিতেও তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল, যার মধ্য দিয়ে ভিয়েতনাম যুদ্ধের অবসান হয়।১৯৭৭ সালে মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পরও রাজনীতি ও কূটনীতি নিয়ে সরব ছিলেন কিসিঞ্জার। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও আইনপ্রণেতারা প্রায়ই তার পরামর্শ নিতেন।গত কয়েক দশকে বিভিন্ন কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন, বক্তৃতা দিয়ে বেয়েছেন পররাষ্ট্রনীতি আর জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে। লিখেছেন ২১টি বই।গত মে মাসে শতবর্ষ পূর্ণ করা কিসিঞ্জার শেষ দিনগুলোতেও ছিলেন দারুণ সক্রিয়। গত জুলাই মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আকস্মিক সফরে তিনি বেইজিংয়ে যান।তার এক বছর আগে ২০২২ সালের জুলাই মাসে এক সাক্ষাত্কারে এবিসি জানতে চেয়েছিল, সুযোগ পেলে জীবনের কোন সিদ্ধান্তটি তিনি ফিরিয়ে নিতেন।  জবাবে কিসিঞ্জার বলেন, “আমি সারাজীবন এই সমস্যাগুলো নিয়ে ভাবছি। এটা আমার নেশা এবং সেই সঙ্গে আমার পেশাও। ফলে যখন যে সিদ্ধান্ত আমি নিয়েছি, ওই সময়ের জন্য সেটাই ছিল আমার সেরা সিদ্ধান্ত।”

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য