কলকাতা, ৩ জুন (হি.স.): প্রতিবাদী হামিত যশকোনের সাজাপ্রাপ্তিতে যুক্তরাজ্য তার সেক্যুলারিজমের আদর্শ থেকে আলোকবর্ষ দূরে চলে গিয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ করলেন নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন।
সোমবার রাতে তসলিমা সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “হামিত যশকোন মুসলমানের ঘরে জন্মেছেন। বাবা কুর্দ, মা আর্মেনিয়ান। বয়স ৫০। এ বছরের ফেব্রুয়ারির ১৩ তারিখে একদিন লন্ডনে, তুরস্কের দূতাবাসের বাইরে দাঁড়িয়ে, কো*রান পুড়িয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন ইসলাম জঙ্গিবাদ ছড়াচ্ছে, বলেছিলেন ফা*ক ইসলাম। বলেছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান তুরস্ককে জঙ্গিদের ঘাঁটি বানিয়েছেন। যশকোনকে এক জঙ্গি সে কারণে ছুরিকাঘাত করেছিলেন। কিন্তু আজ যুক্তরাজ্য তার সেক্যুলারিজমের আদর্শ থেকে আলোকবর্ষ দূরে চলে গিয়ে হামিত যশকোনকে ২৪০ পাউণ্ড জরিমানা করলো লণ্ডনের আদালত!
যে কোনও মতবাদ নিয়ে মানুষের ক্রিটিসিজম করার অধিকার আছে, এটি মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, এটিকেই বলে বাকস্বাধীনতা। যতক্ষণ না কেউ ভায়োলেন্স করছে, ততক্ষণ ক্রিটিসিজমকে অধিকার হিসেবেই মানতে হবে। হামিত যশকোন কোনও ভায়োলেন্স করেননি। তাঁর বিরুদ্ধে মূর্খ মুসলমানেরা তাণ্ডব চালালেও তিনি রা শব্দ করেননি।
কিন্তু সভ্য দেশে বাকস্বাধীনতার পিঠে ছুরি বসানো হলো কেন? আজ মানুষ যে কোনও ধর্মগ্রন্থের সমালোচনা করতে পারে, নিন্দে করতে পারে, যে কোনও ধর্মগ্রন্থ পুড়িয়ে ফেলতে পারে, কিন্তু কোরা*ন পোড়ালে বা কোরা*নের নিন্দে করলে দুনিয়ায় আগুন জ্বলে ওঠে। যারা আগুন জ্বালিয়েছে তাদের শাস্তি না দিয়ে সমালোচককে শাস্তি পেতে হয় কেন? আর কোনও ধর্মীয় সম্প্রদায়কে তো এভাবে প্রটেক্ট করার দায়িত্ব অনুভব করে না কোনও সরকার! এই মুসলিম সম্প্রদায় আর কত আবদার করবে দুনিয়ার কাছে! এই সম্প্রদায়কে সভ্য সমাজ আর কত শিশু হিসেবে ট্রিট করবে শুনি!
কো *রান পুড়িয়েছে বলে আজ আদালতের বিচারে যশকোনের শাস্তি হলো। হ্যাঁ, আজ জরিমানা হলো, কাল কো *রানের মিথ্যেগুলোকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলে জেল হবে, পরশু যাবজ্জীবন হবে, তরশু ফাঁসি হবে। অন্ধকারের পথ তো এমনই গভীর খাদের দিকে মানুষকে টেনে নিয়ে যায়!
যুক্তরাজ্য কেন মধ্যযুগের দিকে দৌড়োচ্ছে? বাকস্বাধীনতাবিরোধী অসভ্য বর্বর ব্লাসফেমি আইন ফিরিয়ে আনতে চাইছে? যুক্তরাজ্য কি পথ হারিয়েছে? মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতি রক্ষা করার জন্য যুক্তরাজ্য কেন শত শত বছর ধরে স্ট্রাগল করে অর্জন করা নিজের আধুনিকতা আর সভ্যতা বিসর্জন দিতে চাইছে? একদিন কি লক্ষ লক্ষ মুসলমানের দাবির মুখে শরিয়া আইনকেও নতমুখে মেনে নেবে দেশটি?”
যুক্তরাজ্যর ‘ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ’ নিয়ে প্রতিবাদী তসলিমা
সম্পরকিত প্রবন্ধ