Tuesday, January 14, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদগাজায় যুদ্ধ বিরতির পর কী হবে

গাজায় যুদ্ধ বিরতির পর কী হবে

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ২৫ নভেম্বর: সাত সপ্তাহের যুদ্ধে ১৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণহানির পর শুরু হয়েছে মাত্র চার দিনের যুদ্ধবিরতি, যার প্রথম দিনে গাজায় হামলা-আক্রমণের খবর পাওয়া যায়নি।এই যুদ্ধবিরতি নির্ভর করছে ইসরায়েল-হামাসের বন্দী বিনিময়ের ওপর। ফলে বিরতির মেয়াদ যদি না বাড়ে, তাহলে চারদিন পর কী ঘটবে, সেটিই এখন প্রশ্ন।বিবিসি লিখেছে, গাজা শহরে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সম্ভবত চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। যুদ্ধবিরতি শেষ হলে গাজা নিয়ন্ত্রণে লড়াই আবার শুরু হবে। আর সেটি আরও এক সপ্তাহ বা দশ দিন ধরে চলতে পারে বলে জানাচ্ছেন ইসরায়েলি বিশেষজ্ঞরা।ইসরায়েলের মুহুর্মুহু হামলার মধ্যে উত্তর গাজা থেকে দক্ষিণে আশ্রয় নিয়েছে লাখো মানুষ। সেখানে থাকতে পারে হামাস যোদ্ধারাও। হামাসের আস্তানা যেখানেই পাবে, সেখানেই আক্রমণ চালাবে ইসরায়েলি বাহিনী। আবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দক্ষিণে অভিযানের ইঙ্গিতও দিয়েছেন।ফলে ইসরায়েলি বাহিনী যদি দক্ষিণে মনোযোগ দেয়, তবে মানবিক সংকট যে আরও বাড়বে,  তাতে সন্দেহ নেই।

ইসরায়েল মনে করছে, হামাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতা ইয়াহা সিনওয়ার ও মোহাম্মদ দেইফ দক্ষিণে কোথাও আছেন। সেইসঙ্গে হামাসের অনেক যোদ্ধা ও জিম্মি ইসরায়েলি নাগরিকরাও সেখান আছে।দেশটি উত্তর গাজায় এতদিন ধরে যা করেছে, যদি সেটি দক্ষিণেও করার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে পশ্চিমা বিশ্ব- বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কী হবে, সেটিও একটি প্রশ্ন।গাজার শত শত মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে দক্ষিণের আল-মাওয়াসি এলাকার বালুকাময় মাঠে তাবু পেতেছে। ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা বলছে, গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে গাজার প্রায় ১৭ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এদের বেশিরভাগই আশ্রয় নিয়েছে দক্ষিণাঞ্চলে গাদাগাদি করে।সেখানে পরিস্থিতি বেশ ঘোলাটে। ১০ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে স্কুল, হাসপাতালে ও তাবুতে। শীতকালীন বৃষ্টি ইতোমধ্যে ওই এলাকা ভাসিয়ে দিয়েছে। ফলে দুর্ভোগ আরও চরমে উঠেছে।কয়েক সপ্তাহ ধরে আল-মাওয়াসি এলাকাকে তথাকথিত ‘নিরাপদ এলাকা’ বলছিলেন ইসরায়েলি কর্মকর্তারা। মাওয়াসি মূলত ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলের সরু কৃষিভূমি। কাছেই মিশর সীমান্ত।

গত সপ্তাহে খান ইউনিস শরণার্থী শিবিরে বিমান হামলা চালানোর খবর প্রচার করা হয় লিফটলেটের মাধ্যমে। সেখানকার বাসিন্দাদের পশ্চিমে সাগরের দিকে সরে যেতে বলা হয়।বৃহস্পতিবার সোশাল মিডিয়ায় এক পোস্টে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র আভিচায় আদ্রাই বলেন, আল-মাওয়াসি গাজাবাসীর জন্য উপযুক্ত জায়গা।কিন্তু যখন এর কাছেই যুদ্ধ চলছে, তখন এই এলাকায় ২০ লাখেরও বেশি মানুষের আশ্রয় নেওয়াটা কতটা বাস্তবসম্মত? সেই সঙ্গে আল- মাওয়াসির পরিবেশই বা কতটা উপযুক্ত?বিবিসি জানিয়েছে, মানচিত্রে ওই এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মাঠ, গ্রিনহাউজ আর বিক্ষিপ্তিভাবে ছড়িয়ে থাকে কিছু বাড়িঘর দেখা গেছে। ইসরায়েলের হিসাবে ওই এলাকাটি আড়াই কিলোমিটার চওড়া, আর লম্বায় প্রায় ৪ কিলোমিটার।ফিলিস্তিন বিষয়ক ইসরায়েলের প্রাক্তন এক উপদেষ্টা মাইকেল মিলশটাইন বলেন, “সেটি সুন্দর আর কার্যকরী জায়গা। কিন্তু বেশ ছোট।”ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থার কমিউনিকেশন ডিরেক্টর জুলিয়েট টুমা বলেন, “আল-মাওয়াসি খুব ছোট জায়গা। কিছুই নেই সেখানে। কেবল বালিয়াড়ি আর পামগাছ রয়েছে।”

হাজারো বাসিন্দাদের এমন একটি জায়গায় সরিয়ে নিলে, যেখানে অবকাঠামো নেই, হাসপাতাল নেই, জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র নেই…তাহলে বিশাল মানবিক সংকট তৈরি হবে।ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলছেন, রাফাহ ক্রসিং থেকে ১০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে আল-মাওয়াসিতে সাহায্য পৌঁছানোর বিষয়টি নির্ভর করবে সহায়তা সংস্থাগুলোর ওপর। তবে বাস্তবে সেটি কীভাবে সম্ভব হবে, সে ব্যাপারে কিছু বলেনি ইসরায়েলি কর্মকর্তারা।গাজাবাসীদের জন্য আরও নিরাপদ এলাকা খুঁজতে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মার্কিন কর্মকর্তারা আলোচনার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। গাজা থেকে আরও দক্ষিণের দাহানিয়া এলাকার কথাও সম্ভববত বিবেচনা করা হচ্ছে।জিম্মিদের মুক্তি চুক্তির শর্তের অধীনে প্রতিদিন গাজায় ২০০ ট্রাক সাহায্য পৌঁছানোর সুযোগ দেওয়ার কথা রয়েছে ইসরায়েলের।আর এখন ইসরায়েল গাজাবাসীর নিরাপদ আশ্রয়স্থলের যে কথা বলছে, তা গত ১৬ নভেম্বর ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের সহায়তা প্রদানের সঙ্গে জড়িত ১৮টি জাতিসংঘ সংস্থা ও এনজিওগুলোর প্রধানদের দেওয়া বিবৃতির পুরো বিপরীত।

ওই বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা গাজায় কোনো ‘নিরাপদ এলাকা’ তৈরিতে অংশ নেব না, যেগুলো সব পক্ষের চুক্তি ছাড়াই তৈরি করা হয়েছে।”জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর বিবৃতিতে আল-মাওয়াসির নামোল্লেখ না করে বলা হয়, “ইসরায়েলের একক প্রস্তাব অনেকের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে।”বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস ইসরায়েলের পরিকল্পনাকে ‘দুর্যোগের রেসিপি’ বলে অভিহিত করেছেন।“এমন ছোট এলাকায় (আল-মাওয়াসি) এতগুলো মানুষকে একত্র করলে ব্যাপক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হবে। সেখানে তেমন অবকাঠামো কিংবা সেবার ব্যবস্থা নেই।”

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য