Saturday, January 25, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদজাহাজের রাডারে চড়ে আটলান্টিক পাড়ি, ১৪ দিন পর উদ্ধার ৪ নাইজেরীয়

জাহাজের রাডারে চড়ে আটলান্টিক পাড়ি, ১৪ দিন পর উদ্ধার ৪ নাইজেরীয়

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,২ আগস্ট: আটলান্টিক মহাসাগরে ১৪ দিন ধরে জাহাজের রাডারের উপরের ছোট একটি জায়গায় আশ্রয় নিয়ে থাকার পর উদ্ধার পেয়েছেন চার নাইজেরীয়। ‍যাত্রার দশম দিনেই তাদের খাবার ও পানি ফুরিয়ে গিয়েছিল।তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, খাবার ফুরিয়ে যাওয়ার পর চারদিন কেটে গেলেও বেঁচে ছিলেন তারা, সাগরের ছলকে আসা পানি পান করেছেন।এরপর ব্রাজিলের ফেডারেল পুলিশ দেশটির দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় ভিতোরিয়া বন্দর থেকে তাদের উদ্ধার করে, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।পুরো সময়টিতে মৃত্যুকে অগ্রাহ্য করা এ যাত্রায় নাইজেরিয়া থেকে আটলান্টিক মহাসাগরের ৫ হাজার ৬০০ কিলোমিটার জলপথ পাড়ি দিয়ে ব্রাজিলে পৌঁছান তারা। একটি উন্নত জীবনের আশায় অনেক অভিবাসন প্রত্যাশীই এ ধরনের বিশাল ঝুঁকি নিয়ে থাকেন।সাউ পাওলোর এক গির্জায় আশ্রয়ে থাকা উদ্ধার পাওয়াদের একজন থ্যাঙ্কগড ওপেমিপো ম্যাথিউ ইয়ে (৩৮) বলেন, “এটি আমরা জন্য একটি ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা। এটা সহজ ছিল না। আমি আতঙ্কে কাঁপছিলাম। কিন্তু আমি এখানে।”   

এই চার ব্যক্তি জানিয়েছেন, তারা জাহাজের নিচে রাডারের ওপরের ওই খুপড়িতে চড়ে ইউরোপে পৌঁছানোর আশা করেছিলেন, কিন্তু তার বদলে আটলান্টিকের অপর পারে ব্রাজিলে পৌঁছে হতভম্ব হয়ে গেছেন।এই চারজনের মধ্যে দুইজনকে তাদের অনুরোধের ভিত্তিতে নাইজেরিয়ায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। অপর দুইজন নাইজেরিয়ার বাইয়েলসা রাজ্য থেকে আসা রোমান এবিমেনে ফ্রাইডে (৩৫) ও লাগোস রাজ্যের ইয়ে ব্রাজিলে আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছেন।  “ব্রাজিলের সরকার আমার প্রতি সদয় হবে এই প্রার্থনা করছি আমি,” বলেছেন ফ্রাইডে। তিনি এর আগেও একবার জাহাজযোগে নাইজেরিয়া থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ধরা পড়ে গ্রেপ্তার হন।ইয়ে ও ফ্রাইডে, উভয়েই জানান, অর্থনৈতিক দুরবস্থা, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অপরাধের কারণে তারা নিরুপায় হয়ে নাইজেরিয়া ছেড়েছেন। আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল দেশটিদে দীর্ঘদিন ধরেই দারিদ্র ও সহিংসতা বিরাজ করছে আর অপহরণ সেখানে নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।খ্রিস্টানদের পেন্টেকস্টাল ধারায় বিশ্বাসী ইয়ে জানান, তার চিনাবাদাম ও পাম তেলের বাগান এ বছরের বন্যায় ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর পরিবারসহ তিনি গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। ব্রাজিলে পেন্টেকস্টাল গির্জায় তিনি যোগ দিতে পারবেন বলে আশা করছেন।   ফ্রাইডে জানান, ২৭ জুন যাত্রা শুরু করেছিলেন তিনি, তখন এক মৎসশিকারী বন্ধু তাকে নৌকা করে লাগোস বন্দরে নোঙ্গর করে থাকা লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী জাহাজ কেন ওয়েভের রাডারে রেখে যান। কিন্তু তিনি আশ্চর্য হয়ে দেখেন, ইতোমধ্যে আরও তিনজন সেখানে আছেন আর তারা জাহাজ ছাড়ার অপেক্ষা করছেন। 

ফ্রাইডে জানান, তিনি আতঙ্কিত হয়ে ছিলেন, কারণ নতুন সঙ্গীরা তার অপরিচিত ছিল এবং তারা যেকোনো সময় তাকে সাগরে ফেলে দিতে পারে এমন ভয় করছিলেন তিনি।তিনি আরও জানান, জাহাজটি যখন চলতে শুরু করল, ক্রুরা যেন তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে না যায় তার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করেছেন তারা, জাহাজের লোকজন তাদের পানিতে ফেলে দিতে পারে এমন উদ্বেগেও ভুগছিলেন তারা।“তারা আমাদের ধরতে পারলে পানিতে ফেলেও দিতে পারে, তাই আমরা কোনো চেঁচামেচি না করার বিষয়টি স্মরণ রাখি,” বলেন ফ্রাইডে। আটলান্টিক মহাসাগর থেকে থু থু ফেলা দূরত্বে বসে দুই সপ্তাহ কাটানো বিপজ্জনক বিষয়। ফ্রাইডে জানান, তারা যেন পানিতে পড়ে না যান তার জন্য জাহাজের রাডারের চারপাশে একটি জাল পেঁচিয়ে নিজেদের একটি দড়ি দিয়ে সেটির সঙ্গে বেঁধে রাখেন। নিচে পানিতে তাকিয়ে তিনি প্রায়ই ‘তিমি ও হাঙ্গরের মতো বড় মাছ’ দেখেছেন বলে জানান। ছোট জায়গায় সঙ্কুচিত হয়ে থাকায় ও জাহাজের ইঞ্জিনের শব্দের কারণে তারা প্রায় ঘুমাতে পারেননি বলে জানা ফ্রাইডে। আর ঘুমানো ঝুঁকিপূর্ণ ছিল বলেও জানিয়েছেন তিনি।“উদ্ধার হয়ে আমি খুব খুশি হয়েছিলাম,” বলেন তিনি।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য