স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,২৭ জুলাই: পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজারে অভ্যুত্থান ঘোষণা করেছে দেশটির একদল সেনাসদস্য। বন্দি করা হয়েছে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজোমকে।বিবিসি জানায়, বুধবার প্রেসিডেন্ট গার্ডের সদস্যরা প্রেসিডেন্ট বাজোমকে রাজধানী নিয়ামেইর প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে বন্দি করে ফেলে।ভোর থেকে নানা সূত্রের বরাত দিয়ে সে খবর প্রকাশ পাওয়া শুরু হলে সকালে রাজধানী নিয়ামিতে সড়কে লোকজনকে প্রেসিডেন্টের সমর্থনে মিছিল করতে দেখা যায় বলে জানায় বিবিসি।ওইদিন সেখানে উপস্থিত বিবিসির একজন প্রতিনিধি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবন ঘিরে প্রেসিডেন্টের অনুগত সেনাদের ভারি অস্ত্র সজ্জিত হয়ে অবস্থান নিতে দেখেছেন।নগরী মোটামুটি শান্তই ছিল। যদিও প্রেসিডেন্টের পক্ষে সড়কে নানা ভিড় ছত্রভঙ্গ করে দিতে অভ্যুত্থানের পক্ষের সেনাদের গুলি চালাতে দেখা গেছে।পরে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এসে কর্নেল মেজর আমাদু আবদ্রামানে অভ্যুত্থানের ঘোষণা দিয়ে বলেন, তারা নাইজারের সংবিধান বিলুপ্ত ঘোষণা করছেন। সব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বাতিল এবং দেশের সব সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণাও দেন।
টেলিভিশনে কর্নেল মেজর আবদ্রামানে যখন অভ্যুত্থানের ঘোষণা দিচ্ছিলেন তখন সামরিক বাহিনীর পোশাক পরা আরো নয়জন সেনাকর্মকর্তা তাকে ঘিরে দাঁড়িয়েছিলেন।তিনি বলেন, “আমরা, প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা বাহিনী…দেশের বর্তমান সরকার ব্যবস্থার অবসান ঘটনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।“দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতির ক্রমাবনতি এবং দুর্বল অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুশাসনের অভাবে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।”তিনি আন্তর্জাতিক বিশ্বকে নাইজারের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার আহ্বানও জানিয়েছেন।বলেছেন, “সব বৈদেশিক অংশীদারদের নাইজারের অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ না করতে বলা হচ্ছে।“পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত নাইজারের স্থল ও আকাশ সীমান্ত বন্ধ থাকবে।”পরবর্তী নোটিস না দেওয়া পর্যন্ত স্থানীয় সময় রাত ১০টা থেকে ভোট ৫টা পর্যন্ত দেশজুড়ে রাত্রিকালীন কারফিউও ঘোষণা করেছেন তিনি।সেনাসদস্যরা ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর দ্য সেফগার্ড অব দ্য হোমল্যান্ডের-সিএনএসপি হয়ে কাজ করছে বলেও জানান এই সেনা কর্মকর্তা।টেলিভিশনে অভ্যুত্থানের ঘোষণা দেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন প্রেসিডেন্ট বাজোমকে দ্রুত মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানান।
বর্তমানে তিনি নিউ জিল্যান্ড সফরে আছেন। সেখানে এক সংবাদ সম্মেলনে ব্লিনকেন বলেন, “এটি স্পষ্টভাবেই বলপ্রয়োগ করে ক্ষমতা দখল এবং সংবিধানকে ব্যাহত করার প্রচেষ্টা।”ব্লিনকেন টেলিফোনে প্রেসিডেন্ট বাজোমের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং ওয়াশিংটনের তার প্রতি ‘অটল সমর্থন’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলেও জানা গেছে।জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টনি গুতেরেসও জানিয়েছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট বাজোমের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তার প্রতি জাতিসংঘের পূর্ণ সমর্থন দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন।পশ্চিম আফ্রিকায় ইসলামপন্থি জঙ্গিদের দমনে পশ্চিমাদের গুরুত্বপূর্ণ মিত্রদের একজন বাজোম।ওয়েস্ট আফ্রিকান ইকোনোমিক ব্লক-ইকোয়াস থেকেও এভাবে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জোর করে ক্ষমতা দখলের ঘটনায় কড়া ভাষায় ‘নিন্দা’ জানানো হয়েছে।এর আগে ২০২১ সালেও একবার নাইজারের সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থানের ব্যর্থ চেষ্টা করেছিল।সম্প্রতি পশ্চিম আফ্রিকার আরো দুই দেশ মালি ও বুরকিনা ফাসোতে সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে।