স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,১ জুলাই: কম্বোডিয়ার নেতা হুন সেন ফেইসবুক ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন, সেই সঙ্গে নিজের দেশে এই জনপ্রিয় সোশাল মিডিয়া বন্ধের হুমকি দিয়েছেন তিনি।বিবিসি জানিয়েছে, সহিংসতা উসকে দেওয়ার অভিযোগে হুন সেনের অ্যাকাউন্ট ছয় মাসের জন্য স্থগিত করার সুপারিশ করেছিল ফেইসবুকের ওভারসাইট বোর্ড। তার প্রতিক্রিয়ায় কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীর এমন হুমকি।৩৮ বছর ধরে কম্বোডিয়া শাসন করে আসা হুন সেন গত জানুয়ারিতে নতুন নির্বাচনের প্রচার শুরুর আগে ফেইসবুকে প্রকাশিত এক ভিডিওতে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করার হুমকি দেন।ফেইসবুকে ওই ভিডিও দেখা হয়েছে ছয় লাখ বার। সেখানে হুন সেনের বক্তব্যকে ‘সহিংসতায় উসকানি’ হিসেবে দেখছে ফেইসবুক কর্তৃপক্ষ। হুন সেন সোশাল মিডিয়ায় বরাবরই সরব। ফেইসবুকে তার ফলোয়ারের সংখ্যা ১ কোটি ৪০ লাখ।
শুক্রবার পুরসাট প্রদেশে পোশাক কর্মীদের এক জমায়েতে প্রধানমন্ত্রী হুন সেন বলেন, নির্বাসিত বিরোধী দলের নেতারা যাতে দেশের মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে না পারে, সেজন্য তিনি ‘স্বল্প সময়ের জন্য বা চিরতরে’ ফেইসবুক বন্ধ করে দিতে পারেন।বিরোধী দলের নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “ঔদ্ধত্য দেখাবেন না। আপনারা আছেন বিদেশে, আর দেশের মানুষের সাথে যোগাযোগ করার জন্য ব্যবহার করছেন ফেইসবুক। আমরা কিন্তু ফেইসবুক ব্লক করতে পারি।”কম্বোডিয়ার নাগরিকদের ফেইসবুক বাদ দিয়ে টেলিগ্রাম ও টিকটকসহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন হুন সেন, তিনি নিজেও সেটাই করেছেন। টেলিগ্রামে হুন সেনের চ্যানেলের অনুসারীর সংখ্যা প্রায় আট লাখ; যা কম্বোডিয়ার রাজনীতিতে বহুল পরিচিত চ্যানেলগুলোর একটি।সমালোচকরা অবশ্য বলেন, সোশাল মিডিয়ায় হুন সেনের ওই বিশাল অনুসারী সংখ্যা তৈরি হয়েছে বট এবং ভুয়া অ্যাকাউন্টের কল্যাণে।কম্বোডিয়ার ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে ভোট চুরির অভিযোগ আনায় গত জানুয়ারির ওই ভিডিওতে বিরোধী দলের নেতাদের হুমকি দিয়েছিলেন হুন সেন।
তিনি বলেছিলেন, “হয় আপনাদের আদালতে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে, না হলে আমি জনগণকে আহ্বান জানাব, তারা মিছিল করে গিয়ে আপনাদের পেটাবে।” হুন সেনের ওই বক্তব্য সমালোচনার জন্ম দিলেও ভিডিওটি সে সময় বন্ধ করেনি ফেইসবুক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মেটার ওভারসাইট বোর্ড এখন ওই ভিডিও বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি হুন সেনের অ্যাকাউন্ট স্থগিত করার সুপারিশ করেছে।ওভারসাইট বোর্ডের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওই ভিডিওতে ফেইসবুকের নীতিমালা যে মাত্রায় লঙ্ঘন করা হয়েছে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর নিপীড়ন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে ইতিহাস হুন সেনের রয়েছে, সহিংসতার হুমকি বহুগুণে বাড়িয়ে তোলার জন্য সোশাল মিডিয়াকে যে কৌশলে তিনি ব্যবহার করেন, সব মিলিয়ে তার ফেইসবুক পেইজ ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট ছয় মাসের জন্য স্থগিত রাখার সুপারিশ করা হচ্ছে।
ওভারসাইট বোর্ডের ওই সিদ্ধান্ত আসার পরপরই হুন সেন ঘোষণা দেন, তার ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলতে একজন সহকারীকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।বিবিসি লিখেছে, কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা রাষ্ট্রনেতাদের একজন। বিভিন্ন সময়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।বলা হয়, জুলাই মাসের সাধারণ নির্বাচন সামনে রেখে বিরোধী দলকে নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছে হুন সেনের প্রশাসন।ধারণা করা হয়েছিল, একমাত্র ক্যান্ডেললাইট পার্টি হয়ত নির্বাচনে হুন সেনের দল কম্বোডিয়ান পিপলস পার্টিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবে। কিন্তু কাগজপত্র ঠিক না থাকার কথা বলে মে মাসে সে দলের প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করে দিয়েছে দেশটির নির্বাচন কমিশন।তার আগে মার্চে দেশটির বিরোধী দলীয় নেতা কেম সোখাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে ২৭ বছর গৃহবন্দি রাখার আদেশ দেয় দেশটির আদালত। ওই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে এসেছেন কেম সোখা।