Monday, February 10, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদফ্রান্সে দাঙ্গা দমনে মোতায়েন ৪৫হাজার পুলিশ, সাঁজোয়া যান

ফ্রান্সে দাঙ্গা দমনে মোতায়েন ৪৫হাজার পুলিশ, সাঁজোয়া যান

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,১ জুলাই: সড়কে পুলিশের গুলিতে এক কিশোরের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে টানা চতুর্থ রাত ফ্রান্সের শহরগুলোয় তুমুল বিক্ষোভ আর দাঙ্গার ঘটনা ঘটেছে।এরপর শনিবার দেশটি সড়কগুলোতে ৪৫ হাজার পুলিশ আর বহু সাঁজোয়া যান মোতায়েন করেছে কর্তৃপক্ষ।চারদিনের দাঙ্গায় অসংখ্য ভবন ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, মার্কেট ও দোকানপাটে লুটপাট চালানো হয়েছে।ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর নেতৃত্বকে ২০১৮ সালে শুরু হওয়া ইয়োলো ভেস্ট আন্দোলনের পর এই সহিংসতাই সবচেয়ে ভয়াবহ সংকটে ফেলেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।মার্সেই, লিঁও, তুলুজ, লিলসহ পুরো ফ্রান্সজুড়েই শুক্রবার রাতে অস্থিরতা দেখা গেছে। অস্থিরতা দেখা গেছে রাজধানী প্যারিসেও, যার নঁ তে শহরতলীতে মঙ্গলবার পুলিশের গুলিতে আলজেরীয়-মরক্কান বংশোদ্ভূত ১৭ বছর বয়সী কিশোর নাহেল এম গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।ভিডিওতে ধরা পড়া তার মৃত্যুর দৃশ্য দরিদ্র এবং মিশ্রবর্ণের শহুরে সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর প্রতি পুলিশের আচরণ ও বর্ণবাদ নিয়ে ক্ষোভ নতুন করে উস্কে দেয়।কেবল শুক্রবার রাতেই ২৭০ জনকে আটক করার কথা জানান ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেগাল্ড দাগমানা, এ নিয়ে অস্থিরতা শুরুর পর চার রাতে আটকের সংখ্যা এক হাজার ১০০ ছাড়িয়েছে।শুক্রবার আটকদের মধ্যে দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মার্সেইয়ের ৮০ জনও আছে। দক্ষিণের এই শহরটিতে উত্তর আফ্রিকান বংশোদ্ভূতদের বড় একটি অংশের বাস।সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসা ভিডিওতে বিস্ফোরণে শহরটির পুরনো বন্দর এলাকা কেঁপে ওঠার দৃশ্য দেখা গেছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা ওই ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে, তবে এতে কেউ হতাহত হয়েছে বলে মনে করছে না তারা।দাঙ্গাবাজরা মার্সেইয়ের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি বন্দুকের দোকান থেকে বেশকিছু শিকারের বন্দুক লুট করলেও কোনো গুলি নেয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পরে ওই দোকানের বন্দুকের মতো দেখতে একটি বন্দুকসহ এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ। তারা এখন দোকানটি পাহারা দিচ্ছে।মার্সেইয়ের মেয়র সরকারের কাছে অতিরিক্ত পুলিশ চেয়েছেন।শুক্রবার রাতে এক টুইটে তিনি বলেছেন, “লুটপাট আর সহিংসতার দৃশ্য মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।”ফ্রান্সের তৃতীয় বৃহত্তম শহর লিঁওতে অস্থিরতা দমনে একটি হেলিকপ্টার ও সাঁজোয়া যানসহ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাগমানা ফ্রান্সজুড়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে রাত ৯টা থেকে বাস ও ট্রাম চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।৪৫ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে, যা বৃহস্পতিবারের তুলনায় ৫ হাজার বেশি, বলেছেন তিনি।“সহজ কথা হচ্ছে, আমরা কোনো কিছুই চিন্তার বাইরে রাখছি না। আজকের পর আমরা দেখবো প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট কোন বিকল্প বেছে নেন,” সরকার জরুরি অবস্থা জারি করবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে টিএফ১ টিভির সংবাদ বিষয়ক অনুষ্ঠানে এমনটাই বলেন দাগমানা।শুক্রবার রাতে পুলিশ তাৎক্ষণিক এক কর্মসূচির পর প্যারিসের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত আইকনিক প্লাস দে লা কনকদ চত্বর থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়।বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত দুইশর বেশি পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন, শত শত দাঙ্গাকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের গড় বয়স ১৭, বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাগমানা।ম্যাক্রোঁ এর আগে সড়ক থেকে শিশুদের দূরে রাখতে বাবা-মায়েদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছিলেন।ফ্রান্সের জাতীয় ফুটবল দলও বিরল এক বিবৃতিতে সবাইকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

কয়েকদিনের দাঙ্গায় কয়েক ডজন দোকান লুট হয়েছে, অগ্নিসংযোগ হয়েছে দুই হাজারেরও বেশি গাড়িতে।বিক্ষোভ, সহিংসতা ও দাঙ্গার কারণে রাজধানীর উপকণ্ঠ স্তাদ দে ফ্রান্সে দুটি কনসার্টসহ বেশকিছু অনুষ্ঠান বাতিল করতে হয়েছে।স্পেনের শহর বিলবাও থেকে শুরু হওয়া বাইসাইকেল প্রতিযোগিতা সোমবার ফ্রান্সে প্রবেশ করার পর পরিস্থিতি অনুযায়ী মানিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ট্যুর দি ফ্রান্সের আয়োজকরা।সংকট মোকাবেলায় দুইদিনের ভেতর মন্ত্রিসভার দ্বিতীয় বৈঠক করতে ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) এক সম্মেলন থেকে আগেভাগে বিদায় নিয়ে দেশে ফিরেছেন ম্যাক্রোঁ।তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোতে দাঙ্গার ‘সংবেদনশীল ফুটেজ’ সরিয়ে নিতে এবং সহিংসতার উসকানিদাতাদের পরিচয় জানাতে বলেছেন।দাগমানা এরই মধ্যে মেটা, টুইটার, স্ন্যাপচ্যাট ও টিকটকের স্থানীয় প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেছেন।স্ন্যাপচ্যাট বলেছে, সহিংসতা ছড়িয়ে দেয় এমন যে কোনো কনটেন্টের ব্যাপারে তাদের ‘জিরো টলারেন্স’ আছে।পুলিশের গুলিতে নিহত নাহেলের পরিবারের এক স্বজন মোহাম্মদ জাকুবি বলেছেন, একসময় ফরাসী উপনিবেশ ছিল এমন এলাকা থেকে আসা লোকজনসহ সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর সদস্যদের বিরুদ্ধে পুলিশি সহিংসতার ঘটনায় বিচার না পাওয়ার অনুভূতিই এবারের অস্থিরতা উসকে দিয়েছে।“আমরা বিরক্ত, আমরাও ফরাসী। আমরা সহিংসতার বিরুদ্ধে, আমরা জঞ্জাল নই,” বলেছেন তিনি।ম্যাক্রোঁ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভেতর ‘পদ্ধতিগত’ বর্ণবাদ থাকার কথা অস্বীকার করেছেন।সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসা একাধিক ভিডিওতে শহুরে অনেক স্থাপনা ও সড়কে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। পূর্বাঞ্চলীয় শহর লিঁওতে একটি ট্রামে আগুন ধরিয়ে দিতে এবং প্যারিসের উত্তরে অবারভিলে একটি ডিপোতে থাকা ১২টি ভস্মীভূত বাসও দেখা গেছে।  

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য