স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ৩ এপ্রিল: ফিনল্যান্ডের পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী সানা মারিনের ক্ষমতাসীন দল সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের টপকে জয় পেয়েছে ডানপন্থি দলগুলো।রোববার সব ভোট গণনার পর দেখা যায়, মধ্যডানপন্থি ন্যাশনাল কোয়ালিশন পার্টি (এনসিপি) ২০ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট নিয়ে শীর্ষে আছে। তাদের পরেই ২০ দশমিক ১ শতাংশ ভোট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে ডানপন্থি জনপ্রিয়তাবাদী দল ফিনস পার্টি। প্রধানমন্ত্রী মারিনের মধ্যবামপন্থি দল ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে আছে।নির্বাচনে অংশ নেওয়া ২২টি দলের মধ্যে শীর্ষে থাকা তিনটি দলের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। এ তিনটি দলের প্রত্যেকেই প্রায় ২০ শতাংশের মতো ভোট পেলেও কোনো দলই এককভাবে সরকার গঠনের মতো জনসমর্থন পায়নি।বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী পার্লামেন্টের ২০০ আসনের মধ্যে ব্যবসাবান্ধব এনসিপি ৪৮টি, তাদের ঠিক পেছনেই থাকা ফিনস ৪৬টি এবং সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটরা ৪৩টি আসন পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ফলাফল ঘোষণার পর সমর্থকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া এক বক্তৃতায় এনসিপির নেতা পেত্রি ওরপো বলেন, “আমরা সবচেয়ে বড় জনসমর্থন পেয়েছি।”তিনি ফিনল্যান্ড ও এর অর্থনীতিকে ‘ঠিক করার’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।নির্বাচনের এই ফলাফলের মাধ্যমে মারিনের প্রধানমন্ত্রীত্ব কালের অবসান ঘটতে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে ওরপোই সরকার গঠন করার প্রথম সুযোগ পাবেন। ক্ষমতায় যেতে জোট গঠনের মাধ্যমে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে হবে তাকে।দলীয় সদস্যদের উদ্দেশ্যে দেওয়া এক বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী মারিন বলেন, “আমরা জনসমর্থন পেয়েছি, আমরা আরও বেশি আসন পেয়েছি (পার্লামেন্টে) । আজ আমরা প্রথম হতে না পারা সত্ত্বেও এটি একটি চমৎকার অর্জন।”২০১৯ সালে যখন দায়িত্ব নেন তখন ৩৭ বছর বয়সী মারিন বিশ্বের সবচেয়ে তরুণ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। বিশ্বজুড়ে ভক্তরা তাকে প্রগতিশীল নতুন নেতাদের পথপ্রদর্শক হিসেবে বিবেচনা করলেও তার পার্টি করা ও সরকারি ব্যয় নিয়ে তিনি নিজ দেশে সমালোচিত ছিলেন।
ফিনল্যান্ডের উদারপন্থি তরুণদের মধ্যে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয় হলেও শিক্ষা ও অবসরকালীন ভাতার ক্ষেত্রে তার সরকারের ব্যয় অনেক রক্ষণশীলের বিরোধিতার কারণ হয়েছিল, একে তারা ‘অপব্যয়’ বলে অভিহিত করেছেন।প্রায় দুই বছর ধরে এনসিপি সবগুলো নির্বাচনী জরিপে এগিয়ে থাকলেও নির্বাচনের আগে তাদের জনপ্রিয়তায় কিছুটা ভাটা পড়ে। দলটি ব্যয় হ্রাস করে সরকারি ঋণ বৃদ্ধি থামানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।ইউক্রেইনে রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে ইউরোপজুড়ে জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। এ সময় সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির মাধ্যমে মারিন ফিনল্যান্ডের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ক্ষতি করেছেন বলে অভিযোগ ওরপোর।
ওরপো জানিয়েছেন, তিনি পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে সব পক্ষের সঙ্গে আপস আলোচনা করবেন। মারিন জানিয়েছেন, তার দল এনসিপির সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে হয়তো সরকার গঠন করতে পারে কিন্তু ফিনস পার্টির সঙ্গে কোনো সরকারে থাকবে না।জানুয়ারিতে নির্বাচনী বিতর্ক চলাকালে ফিনস পার্টিকে ‘প্রকাশ্যে বর্ণবাদী’ বলে অভিহিত করেছিলেন মারিন। তবে জাতীয়তাবাদী দল ফিনস মারিনের এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।ফিনস পার্টির প্রধান লক্ষ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে আসা অভিবাসীদের সংখ্যা হ্রাস করা। দলটির নেতা রিক্কা পুরা এই অভিবাসীদের ‘ক্ষতিকর’ বলে অভিহিত করেছেন। এনসিপির মতো তারাও ঘাটতি ব্যয় কমাতে কৃচ্ছতা নীতি অনুসরণের পক্ষে।মারিনের বৈদেশিক নীতি বিষয়ক পদক্ষেপগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল ফিনল্যান্ডের যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট নেটোতে যোগ দেওয়ার আবেদন করা। ফিনল্যান্ডের দীর্ঘদিনের নিরপেক্ষ নীতির অবসান ঘটিয়ে এ জোটে যোগ দেওয়ার তার এ পদক্ষেপে দেশটির প্রেসিডেন্ট সাউলি নিনিস্তোও সমর্থন দিয়েছেন। পশ্চিমা এ সামরিক জোটটির সব সদস্য রাষ্ট্র ফিনল্যান্ডের আবেদনে সমর্থন দেওয়ায় দেশটির নেটোতে যোগ দেওয়া প্রায় হয়ে গেছে।