স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,২৭ ফেব্রুয়ারি: ইতালির দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলে উত্তাল সমুদ্রে জাহাজ ডুবিতে সদ্যই ৫৯ অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনা সামনে এনেছে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ সাগরপথে হাজারো মানুষের ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে পৌঁছানোর বিপজ্জনক যাত্রার প্রবণতা।বেশিরভাগ অভিবাসনপ্রত্যাশীই উত্তর আফ্রিকা থেকে যাত্রা করে। তবে কিছু কিছু মানুষ তুরস্ক থেকে ইতালিতে পাড়ি জমায়। ইতালি সরকার ধারাবাহিকভাবেই এই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সংখ্যা কমানোর চেষ্টা করে আসছে।তারপরও ইতালিতে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঢল বেড়েই চলেছে। এর কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স:
ইতালিতে পৌঁছানো অভিবাসনপ্রত্যাশীর সংখ্যা:
ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের হিসাবমতে, এবছর ১ জানুয়ারি থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নৌকায় করে ১৩,০৬৭ জন অভিবাসপ্রত্যাশী ইতালিতে পৌঁছেছে। ২০২২ সালের একই সময়ে যে সংখ্যা ছিল ৫,২৭৩। আর তার আগের বছরে এ সংখ্যা ছিল ৪,১৫৬। এ বছর নিবন্ধিত অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে ৮৬১ জনই অভিভাকহীন শিশু।২০২২ সালে মোট ১০৫,১২৯ অভিবাসনপ্রত্যাশী ইতালিতে পৌঁছেছিল। ২০২১ সালের তুলনায় এ সংখ্যা বেশি। ওই বছরে এ সংখ্যা ছিল ৬৭,৪৭৭। আর ২০২০ সালে ছিল ৩৪, ১৫৪। তবে এর আগে ২০১৬ সালে ইতালিতে পৌঁছেছিল রেকর্ড ১৮১,৪৩৬ অভিবাসনপ্রত্যাশী। ২০২২ সালে নিবন্ধিত অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে ১৩,৩৮৬ জন অভিভাবকহীন শিশু।জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) বলেছে, ২০২২ সালে সাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে পৌঁছানো ৫১ শতাংশ অভিবাসনপ্রত্যাশী এসেছিল লিবিয়া থেকে। ৩১ শতাংশ এসেছিল তিউনিসিয়া থেকে এবং ১৫ শতাংশ এসেছিল তুরস্ক থেকে। আরও অল্পকিছু অভিবাসনপ্রত্যাশী এসেছিল লেবানন, আলজেরিয়া এবং সিরিয়া থেকে।
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জাতীয়তা:
এবছর এখন পর্যন্ত ইতালিতে পৌঁছানো অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আছে গিনির নাগরিক। তাদের সংখ্যা (১,৬৫৪)। এরপর আছে যথাক্রমে- আইভরি কোস্ট (১,৫১১), পাকিস্তান (৯৯৭), তিউনিসিয়া (৮৪৬), মিশর (৪৯০) এবং বাংলাদেশ (৪৪৭)।এর আগে ২০২২ সালে পৌঁছানো অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল মিশরের নাগরিক। তাদের সংখ্যা ছিল (২০,৫৪২)। এরপর ছিল যথাক্রমে- তিউনিসিয়া (১৮,১৪৮), বাংলাদেশ (১৪,৯৮২), সিরিয়া (৮,৫৯৪) এবং আফগানিস্তান (৭,২৪১)।
নিহত এবং নিখোঁজ:
জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার নিখোঁজ অভিবাসনপ্রত্যাশী প্রকল্প সেই ২০১৪ সাল থেকে মধ্য ভূমধ্যসাগরে ১৭ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু এবং নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার নিবন্ধন তালিকা রেখেছে।বিশ্বে ভূমধ্যসাগরের এই যাত্রাপথই সবচেয়ে বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবছর এই পথে আনুমানিক ২২০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
ইতালি সরকারের তৎপরতা:
২০১৭ সালে ইতালির তৎকালীন মধ্য-বাম সরকার অভিবাসপ্রত্যাশীদের ঢল ঠেকানো, মানবপাচার রোধ এবং সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদারে লিবিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি চুক্তি সই করেছিল। এর ফলে ইতালিতে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঢল একলাফে অনেকখানি কমে যায়।কিন্তু মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই চুক্তির নিন্দা জানায়। তাদের ভাষ্য ছিল, এ চুক্তির ফলে হাজারো অভিবাসনপ্রত্যাশী লিবিয়ার আটক শিবিরে আটকা পড়েছে, যে শিবিরগুলোতে নিয়মিতই চলে নির্যাতন।পরের বছরগুলোতে ইতালিতে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঢল অবশ্য কমই ছিল। তবে এর একটি কারণ ছিল কোভিড মহামারী। পরে আবার অভিবাসনপ্রত্যাশীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। ইতালিতেও আসে ডান-পন্থি প্রধানমন্ত্রী মেলোনির নতুন সরকার। ২০২২ সালে এ সরকার এসেই আরও একবার অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঢল কমানোর অঙ্গীকার করেছে।