স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,১৪ ফেব্রুয়ারি: ঘূর্ণিঝড় গ্যাব্রিয়েলের প্রভাবে ব্যাপক বন্যা, ভূমিধস ও সাগর ফুলেফেঁপে ওঠায় জরুরি অবস্থা জারি করেছে নিউ জিল্যান্ড।দেশটির ইতিহাসে এই নিয়ে মাত্র তৃতীয়বারের মতো জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হলো।মঙ্গলবার শেষ খবর পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ ২৫ হাজার মানুষ বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় ছিল। বন্যার কারণে বহু লোককে তাদের ঘরবাড়ি থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, অনেক বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিয়ে সেখানেই আটকা পড়ে আছেন।
জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর নিউ জিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস হিপকিন্স বলেছেন, “নিউ জিল্যান্ডবাসীর জন্য এটি একটি দীর্ঘ রাত হয়েছে, বিশেষভাবে নর্থ আইল্যান্ডের উপরের দিকের বাসিন্দাদের জন্য; সেখানে বহু পরিবার ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে, বহু বাড়ি বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় আছে, পুরো দেশজুড়েই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।” বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বিকাল ৩টায় গ্যাব্রিয়েল অকল্যান্ড থেকে দক্ষিণপূর্ব দিকে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার দূরে নর্থ আইল্যান্ডের পূর্ব উপকূলের কাছে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড়টি এই উপকূলের সঙ্গে প্রায় সমান্তরালে দক্ষিণপূর্ব মুখে এগিয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।নর্থ আইল্যান্ড ও সাউথ আইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলের পূর্ব উপকূলের অধিকাংশ এলাকাজুড়ে জারি করা আবহাওয়া সতর্কতা বজায় আছে। দেশটির জরুরি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক মন্ত্রী কিরান ম্যাকঅ্যানাল্টি বলেছেন, নিউ জিল্যান্ড তখন ঝড়ের সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল, আরও বৃষ্টি ও প্রবল বাতাস বয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।দেশটি ব্যাপক বন্যা, ভূমিধসের কবলে পড়েছে এবং রাস্তা ও অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
দেশটির জ্বালানিমন্ত্রী মেগান উডস জানিয়েছেন, প্রায় ২ লাখ ২৫ হাজার মানুষ বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় আছেন। সারা দেশ থেকেই বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন ও সাবস্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা জানাচ্ছে।নদী ফুলেফেঁপে ওঠায় এবং সাগর থেকে ধেয়ে আসা বিশাল ঢেউয়ে সৈকতমুখি বাড়ি ও স্থাপনাগুলো ডুবে যেতে থাকায় কর্তৃপক্ষ সৈকত সংলগ্ন বসতিগুলো থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়েছে। বহু রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে, মোবাইল ফোন পরিষেবা বিঘ্নিত হচ্ছে আর কিছু ছোট শহর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের পানি ও খাবার সংরক্ষণ করতে বলা হচ্ছে। এয়ার নিউ জিল্যান্ড ফের অকল্যান্ডগামী ও শহরটি থেকে উড্ডয়নের কথা থাকা সব অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বাতিল করেছে। এ পর্যন্ত কতো মানুষ বাস্তুচ্যুত বা আহত হয়েছেন তা বলার সময় এখনও হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী হিপকিন্স। এ পর্যন্ত নিশ্চিত কোনো মৃত্যুর কথা জানা যায়নি।হকস্ বে-তে একটি বাড়ি পাহাড় থেকে পড়ে গিয়ে এক ব্যক্তি নিখোঁজ হয়েছেন বলে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। দেশটির দমকল পরিষেবা জানিয়েছে, ভূমিধসের সঙ্গে পাহাড় থেকে নিচে চলে যাওয়া একটি বাড়ির ভেতরে তাদের একজন স্বেচ্ছাসেবক দমকল কর্মী রয়ে গেছিলেন।নিউ জিল্যান্ডের এক যুদ্ধজাহাজ পূর্ব উপকূলের সাগর থেকে এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করেছে। ঝড়ে তার ইয়ট উল্টে গিয়েছিল। নিউ জিল্যান্ড এর আগে ২০১১ সালে একটি ভূমিকম্পের পর প্রথমবার এবং ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারীর সময় দ্বিতীয়বার জরুরি অবস্থা জারি করেছিল।