Saturday, June 21, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদনীতি পুলিশ বিলুপ্তিতে ইরানে আসলে কি কোনো পরিবর্তন আসবে

নীতি পুলিশ বিলুপ্তিতে ইরানে আসলে কি কোনো পরিবর্তন আসবে

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা, ৫ ডিসেম্বর: ইরানে নীতি পুলিশের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অন্তত এখনকার মতো। দেশটির প্রসিকিউটর জেনারেল মোহাম্মদ জাফর মোন্তাজেরি এমনটাই জানিয়েছেন। নীতি পুলিশের কার্যক্রম বন্ধে তাঁর এ ঘোষণার অর্থ বাস্তবে কী দাঁড়ায়, তা নিয়ে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছে আল-জাজিরা।গত শনিবার প্রসিকিউটর জেনারেলকে উদ্ধৃত করে ইরানের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলেছে, বিচার বিভাগের সঙ্গে নীতি পুলিশের কোনো সম্পর্ক নেই। অতীতে যেখান থেকে এই বাহিনীর যাত্রা শুরু হয়েছিল, সেখান থেকেই তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।নারী, জীবন ও স্বাধীনতা—এই বিক্ষোভের মূল স্লোগানে পরিণত হয়। এই স্লোগানের মধ্য দিয়ে চলমান বিক্ষোভের প্রতি সংহতি জানাতে দেখা যায়ছবি: রয়টার্সএমন সময় এই ঘোষণা এল, যখন পুলিশি হেফাজতে ২২ বছরে তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যুর পর শুরু হওয়া বিক্ষোভ ইরানে তৃতীয় মাসে গড়িয়েছে। দেশটির পোশাকবিধি ঠিকভাবে না মানার অভিযোগে তেহরানে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিল নীতি পুলিশ।

নীতি পুলিশ কারা?

১. নীতি পুলিশ ইরানে ‘গাশত-ই এরশাদ’ বা ইসলামি নির্দেশিকা বাস্তবায়ন টহলদার হিসেবে পরিচিত। বর্তমান নীতি পুলিশ বাহিনী ১৫ বছরেরও বেশি আগে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদের আমলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর আগে অন্যভাবে এ টহলের ব্যবস্থা ছিল।

২. এই বাহিনীর ইউনিটগুলো সাধারণত বেশ কয়েকজন পুরুষ ও নারী সদস্য নিয়ে গঠিত হয়। টহল দেওয়ার সময় তাঁরা গাঢ় সবুজের ডোরাকাটা সাদা পুলিশ ভ্যান ব্যবহার করতেন। কম বয়সী লোকজন নিয়মিত যাওয়া-আসা করে—এমন সড়ক ও পার্কে তাঁরা টহল দিয়ে থাকেন।

৩. এই বাহিনীর কর্মকর্তারা দেশটির পোশাকবিধি বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতেন। পোশাকবিধি অনুযায়ী, নারীদের ওড়না দিয়ে চুল ঢেকে রাখতে হয় এবং আঁটসাঁট পোশাক পরা থেকে বিরত থাকতে হয়। কেউ এই নিয়ম লঙ্ঘন করলে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়। ক্ষেত্রবিশেষ গ্রেপ্তার করে ওই নারীদের ‘পুনঃশিক্ষণ’কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।

নীতি পুলিশের কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণার তাৎপর্য কী

১. ইরানের প্রসিকিউটর জেনারেল বলেছেন, এই বাহিনীর ‘কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে’। সাম্প্রতিক সময়ে জনসমক্ষে এই বাহিনীর গাড়িগুলো দেখা যায়নি। তবে পুলিশ কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে এ ধরনের সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি। মোন্তাজেরির বক্তব্যেও অনির্দিষ্টকালের জন্য এই বাহিনীর কার্যক্রম বন্ধের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।

২. ইরানে বর্তমানে বিক্ষোভ চলছে। দেশটির বিভিন্ন শহরে, বিশেষ করে তেহরানের সড়কগুলোতে অনেক নারীই মাথায় ওড়না ছাড়াই চলাফেরা করছেন।

৩. বিক্ষোভের সময় ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, নারীরা তাঁদের মাথার ওড়না খুলে নিচ্ছেন এবং সেগুলো পুড়িয়ে দিচ্ছেন। ‘নারী, জীবন ও স্বাধীনতা’—এই বিক্ষোভের মূল স্লোগানে পরিণত হয়। এই স্লোগানের মধ্য দিয়ে চলমান বিক্ষোভের প্রতি দেশ ও দেশের বাইরে থেকে সংহতি জানাতে দেখা যায়।

৪. বর্তমান পরিস্থিতি কর্মকর্তারা মেনে নেবেন, নাকি অন্য কোনো উপায়ে তাঁরা পোশাকবিধি প্রয়োগ করবেন, তা স্পষ্ট নয়।

আইনে কি কোনো পরিবর্তন আসবে

১. একটি বিষয় ভুলে গেলে চলবে না, ইরানে হিজাব পরাটা বাধ্যতামূলক। আর এটা বাস্তবে পরা হচ্ছে কি না, তা দেখভাল করার দায়িত্বটা শুধু পালন করে নীতি পুলিশ।

২. ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের চার বছর পর আইন প্রণয়নের মাধ্যমে পোশাকবিধি মেনে চলা বাধ্যতামূলক করা হয়। এই বিপ্লব বর্তমান ধর্মতান্ত্রিক সরকারের জন্ম দেয় এবং যুক্তরাষ্ট্র–সমর্থিত রাজতন্ত্রকে উৎখাত করে।

৩. হিজাব আইনে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন শিগগিরই বাস্তবায়ন করা হবে, জ্যেষ্ঠ কোনো কর্মকর্তা জনসমক্ষে এমন কোনো ইঙ্গিত দেননি। বছরের পর বছর শীর্ষস্থানীয় কর্তৃপক্ষ জোর দিয়ে বলে আসছে, তারা বিষয়টিকে ‘চূড়ান্ত সীমা’ হিসেবেই বিবেচনা করে থাকে।

৪. গত সপ্তাহে মোন্তাজেরি বলেছেন, পার্লামেন্ট ও বিচার বিভাগ উভয়ই ‘হিজাবের বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে এবং বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখছে’। একই সময় তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, ‘নীতি নিরাপত্তা পুলিশের’ কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার পক্ষে নয় বিচার বিভাগ।

৫. সেপ্টেম্বরের পর থেকে কয়েকবার প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলে আসছেন, পোশাকসংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগে ‘শিথিলতা’ দেখানো সম্ভব হতে পারে। তবে এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি। অন্য কর্মকর্তারা তুলনামূলক কম সংঘাতের পক্ষে থাকলেও এখনো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ক্যামেরা ব্যবহারের মতো পদ্ধতি অনুসরণ করে অপরাধীদের জরিমানা করার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য

error: <b>Alert: </b>Content selection is disabled!!