স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা, ২০ জুন : বিজেপি পরিচালিত মোদি সরকারের ১১ বছর পূর্তির সময়কালকে দেশের অমৃতকাল বলে আখ্যায়িত করে সরকারি তহবিলের কোটি কোটি টাকা খরচ করছে। গোটা দেশের সাথে রাজ্য এই কর্মসূচি চলছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শাসনকালে ১১ বছরে সৃষ্ট দেশের মূল সমস্যা নিয়ে যাতে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে না হয়, তার জন্য যেমন সাংবাদিক সম্মেলন এড়িয়ে যাচ্ছে, তেমনি এই বিষয়গুলি নিয়ে পার্লামেন্টে বিরোধীদের তোলা প্রশ্নের জবাবও এড়িয়ে যাচ্ছে বিজেপি। শুক্রবার প্রদেশ কংগ্রেস ভবনের সাংবাদিক সম্মেলন করে এই কথা বলেন প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রবীর চক্রবর্তী।
তিনি বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকারের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে বছরে দুই কোটি চাকুরী যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বছরে দুই কোটি চাকরির কি হাল? ২০১৪ সালে দেশে বেকারের হার ৫.৪ শতাংশ ছিল। ২০২৫ সালে সরকারি তথ্যেই ৭.৯ শতাংশ। ত্রিপুরায় সংখ্যাটা বর্তমানে ১৪.৩ শতাংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের শূন্যপদ ৯.৬৪ লক্ষ। বেকারদের ৮০ শতাংশই যুবক। এতে শিক্ষিত যুবক ৭৬.৭ শতাংশ, যুবতী ৬২ শতাংশ। কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদিত পদের সংখ্যা ৩৯.৭৭ লক্ষ। কিন্তু কর্মরত ৩০.১২ লক্ষ। রেলে ৩ লক্ষ ১৫ হাজার শূন্যপদ। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় স্থায়ী চাকুরি প্রতি বছরেই কমিয়ে আনছে। অপরদিকে ২০২২ সালের মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার গল্প যে একেবারে অসার, তা তো সরকারি তথ্যেই বেরিয়েছে। ২০১৯-২০ সালের পর থেকে কৃষকদের আয় নিয়ে কোনওরূপ তথ্য প্রকাশ করছেন না। শুধু কৃষিতেই জীবিকা নির্বাহ করার কৃষকের সংখ্যা বর্তমানে কমে দাঁড়িয়েছে ২০.৭ শতাংশ। কৃষির সাথে অন্যান্য কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করা মানুষের সংখ্যা ৪২.৪ শতাংশ।
কৃষিক্ষেত্রটাকে কর্পোরেটদের হাতে সঁপে দেওয়ার অনেক তথ্যের মধ্যে একটি ফসল বীমা যোজনা। এতে কৃষকরা লাভবান হোক বা না হোক এই প্রকল্প থেকে বিমা কোম্পানিগুলি গত পাঁচ বছরে মুনাফা করেছে সরকারি তথ্য অনুযায়ী ৫০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। কৃষিপণ্যের সহায়ক মূল্য বৃদ্ধির হার ২০০৪-১৪তে ছিলো ১.১৭ শতাংশ হারে। আর ২০১৪-২৫ সালে তা দাঁড়িয়েছে ০.৫৩ শতাংশে। গত এপ্রিল মাসে সরকার ঢাক পিটিয়ে খারিপ ফসলের এমএসপির জন্য ২ লক্ষ ৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণা করে এতে করে ড. স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ থেকে কৃষকরা চাল ও গমে প্রতি কুইন্টালে কম পাবে ৭৬০ টাকা, জোয়ারে ১১১১ টাকা, ভুট্টায় ৫২৮ টাকা, তিলে ৩১০২ টাকা, সয়াবিনে ১৬২৯ টাকা, তুলায় ২৩৬৫ টাকা। এর সাথে যোগ হয়েছে বর্তমানে ভারতে আসা আমেরিকার উৎপাদিত কৃষিপণ্যের শুল্ক শূন্য করা বা কিছু কিছু ক্ষেত্রে কমিয়ে দেওয়ার ফলে দেশের কৃষক এবং কৃষি ক্ষেত্র একেবারেই বিপন্ন হয়ে পড়বে। রাজ্যে তো গত ডিসেম্বরের বন্যায় যে ২ লক্ষ ১০ হাজার ২৭৮ জন কৃষক ও ১ লক্ষ ৩০ হাজার ৮৩২ জন মৎস্যজীবী ভয়ঙ্করভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আজও তাদের ক্ষতি অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের কোনও উদ্যোগই নেয়নি রাজ্যের বিজেপি শাসিত ট্রিপল ইঞ্জিনের সরকার। শুধুই নয়, ৯০ শতাংশ সেচ অচল হয়ে যাওয়া সত্বেও এগুলি সাড়াইয়ের কোনও উদ্যোগই নিচ্ছে না সরকার। এতে ডাবল আয় তো দূর অস্ত কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য থেকে জানা গেছে, কৃষি শ্রমিকদের দৈনিক আয় গড়ে মাত্র ২২৭ টাকা বলে সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় তুলেন তিনি।

