Friday, March 29, 2024
বাড়িবিশ্ব সংবাদআলঝেইমার্সের নতুন ওষুধ জাগাচ্ছে আশার আলো

আলঝেইমার্সের নতুন ওষুধ জাগাচ্ছে আশার আলো

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা, ৩০ নভেম্বর: মস্তিষ্কের কোষের মৃত্যুতে মগজের কর্মক্ষমতা লোপ পাওয়ার ব্যাধি আলঝেইমার্সের একটি প্রতিষেধক তৈরির দাবি করেছেন একদল ব্রিটিশ বিজ্ঞানী, যা জাগাচ্ছে আশার আলো।  বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, নতুন এই ওষুধ মস্তিষ্কের কোষের মৃত্যু কমিয়ে আলঝেইমার্স বৃদ্ধির গতি ধীর করে দিতে পারে। এর আগে আর কোনো ওষুধ এই সাফল্য দেখাতে পারেনি।  ‘লেকানেম্যাব’ নামের এই ওষুধ কাজ করে আলঝেইমার্সের একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে। রোগের বৃদ্ধি পুরোপুরি থামিয়ে দেওয়া বা রোগীকে সারিয়ে তোলার সাফল্য এ ওষুধ দেখাতে পারেনি। মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় এর প্রভাব নিয়েও প্রশ্ন রয়ে গেছে।তারপরও আলঝেইমার্সের ওষুধ উদ্ভাবনে বহু বছরের ব্যর্থতার কথা মাথায় রেখে লেকানেম্যাবকে ‘যুগান্তকারী’ বলছেন বিশেষজ্ঞরা।আলঝেইমার্স ডিজিজ হল মস্তিষ্কের ক্ষয়জনিত রোগ এবং ডিমেনশিয়ার একটি সাধারণ রূপ। একে বলে প্রগ্রেসিভ নিউরোলজিক ডিজিজ, যে রোগে মস্তিষ্কের কোষগুলো ধীরে ধীরে মারা যায়।

সাধারণত ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের এ রোগ হওয়ার প্রবণতা বেশি। অবশ্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে কম বয়য়েও এ রোগ হতে পারে।স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়া হল আলঝেইমার্সের প্রাথমিক লক্ষণ। এক সময় রোগীর কগনিটিভ কার্যকারিতা বা পারিপার্শ্বিক সচেতনতা হ্রাস পেতে থাকে। সাধারণ বিষয়গুলো ভুলে যাওয়ার পাশাপাশি তৈরি হয় বিভ্রম। এক পর্যায়ে খাওয়াসহ দৈনন্দিন কাজও নিজে করতে না পারেন না রোগী।ঠিক কেন আলঝেইমার্স হয়, তা এখনও জানা যায়নি। গবেষকরা বলছেন, বয়সের কারণে মস্তিষ্কের পরিবর্তন; কোষের বুড়িয়ে যাওয়া, জেনেটিক, পরিবেশগত এবং জীবনশৈলীর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব আলঝেইমার্সের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।মস্তিষ্কে অ্যামিলয়েড বিটা নামে এক ধরনের প্রোটিন তৈরি হয়। আলঝেইমার্স রোগীদের ক্ষেত্রে ওই প্রোটিন রক্তকণিকার সঙ্গে দলা পাকিয়ে মস্তিষ্কের কোষের ফাঁকে ফাঁকে অ্যামিলয়েড স্তর তৈরি করে। সে কারণে তাদের মস্তিষ্কের কোষ দ্রুত মারা যেতে থকে।বিবিসি লিখেছে, ‘লেকানেম্যাব’ নামের ওষুধটি অ্যামিলয়েডের ওই আঠালো স্তরে আক্রমণ করে এবং কোষের ওপর অ্যামিলয়েডের আস্তর জমার গতি কমিয়ে দেয়। সে কারণে এ ওষুধকে আলঝেইমার্সের গবেষণায় বড় অগ্রগতি বলে মনে করছেন গবেষকরা। অ্যামিলয়েডের স্তর ধ্বংস করে আলঝেইমার্স সারানোর এই ধারণা নিয়ে ৩০ বছর আগেই কাজ করেছিলেন অধ্যাপক জন হার্ডি। সেই পথ ধরে একটি ওষুধ তৈরি হওয়ার বিষয়টিকে তিনি ‘ঐতিহাসিক সূচনা’ বলছেন।

আর এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টারা স্পিয়ার্স-জোনস বলেছেন, “এটা একটা বড় সাফল্য, কারণ এর আগ পর্যন্ত আমরা শতভাগ ব্যর্থ ছিলাম।” আলঝেইমার্স রোগীর চিকিৎসায় এখন যেসব ওষুধ ব্যবহৃত হয়, সেগুলো মূলত রোগের অন্যান্য উপসর্গ দমিয়ে রাখতে সাহায্য করে। তাতে মূল রোগের উপশম হয় না।   বিবিসি লিখেছে, ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে মানুষের দেহ যেরকম অ্যান্টিবডি তৈরি করে, ‘লেকানেম্যাব’ তেমনই একটি অ্যান্টিবডি। এর কাজ হল মস্তিষ্কের ভেতরে জমা অ্যামিলয়েড স্তর দূর করতে শরীরের নির্দিষ্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে জাগিয়ে তোলা।পরীক্ষামূলক প্রয়োগে মোট ১ হাজার ৭৯৫ জন রোগীকে এ ওষুধ দেওয়া হয়েছে, যাদের আলঝেইমার্স ছিল প্রাথমিক পর্যায়ে। দুই সপ্তাহ পরপর তাদের রক্তে ‘লেকানেম্যাব’ দেওয়া হয় ইনফিউশনের মাধ্যমে।ওই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফল সম্প্রতি স্যান ফ্রান্সিসকোর আলঝেইমার্স ডিজিজ কনফারেন্সে উপস্থাপন করা হয়। এছাড়া নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনেও প্রকাশ করা হয়েছে ওই গবেষণা প্রতিবেদন। গবেষণায় দেখা গেছে, ‘লেকানেম্যাব’ আলঝেইমার্স রোগীকে রাতারাতি সারিয়ে তুলতে পারবে না। রোগীর মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা ঠিকই লোপ পেতে থাকবে। তবে ১৮ মাসের চিকিৎসায় ‘লেকানেম্যাব’ সেই গতি এক চতুর্থাংশ কমিয়ে দিতে পারবে।বিবিসি লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইতোমধ্যে এ গবেষণার তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ শুরু করেছে। সে দেশে বড় পরিসরে এ ওষুধ প্রয়োগের অনুমতি দেওযা হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত শিগগিরই জানাবে তারা।   ‘লেকানেম্যাব’ তৈরি করেছে ওষুধ কোম্পানি ইসাই ও বায়োজেন। আগামী বছর তারা অন্যান্য দেশেও এ ওষুধ অনুমোদনের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করবে। 

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য