Tuesday, February 11, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদঘোরের ঘরে বন্দি কার্তিক মিয়াপ্পান

ঘোরের ঘরে বন্দি কার্তিক মিয়াপ্পান

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা, ১৯ অক্টোবর: মিয়াপ্পানের জন্ম ভারতের চেন্নাইয়ে। কিন্তু ২০১২ সালে যখন তার বয়স ১২, তখন থেকে তার পরিবার স্থায়ীভাবে বাস শুরু করে দুবাইয়ে। আর সেই সুবাদে তিনি এখন আমিরাত জাতীয় দলের সদস্য। ৭ বছর পর বৈশ্বিক আসরে জায়গা করে নেওয়া মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির প্রতিনিধিত্ব করে বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেকে চেনালেন মিয়াপ্পান। ভিক্টোরিয়ার জিলংয়ে মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে উপহার দিলেন দুর্দান্ত বোলিং, করলেন এবারের বিশ্বকাপে প্রথম হ্যাটট্রিক। আলোচনার কেন্দ্রে যে এখন তিনিই! পেশাদার ক্রিকেটে মিয়াপ্পানের ক্যারিয়ার শুরু আমিরাতেই। ২০১৮ সালে দেশটির অনূর্ধ্ব-১৯ দলে জায়গা করে নেন তিনি। নিজেকে প্রমাণ করে পান অধিনায়কের দায়িত্ব। তার নেতৃত্বে পরের বছর যুব এশিয়া কাপে খেলে আমিরাত। আন্তর্জাতিক আঙিনায় আসতে বেশি সময় লাগেনি মিয়াপ্পানের। ১৯ বছর বয়সে ২০১৯ সালেই ওয়ানডে অভিষেক হয়ে যায় তার, যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে। গত বছর আয়ারল্যান্ড ম্যাচ দিয়ে পা রাখেন টি-টোয়েন্টির সীমানায়। 

নিজের প্রথম ম্যাচেই জানান দেন সামর্থ্যের। বল হাতে আইরিশদের বিপক্ষে ওই ম্যাচে ২৫ রান দিয়ে নেন ৪ উইকেট। আমিরাতের হয়ে টি-টোয়েন্টি অভিষেকে যা সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড। আমিরাতের জার্সিতে ৮ ওয়ানডেতে মিয়াপ্পানের নামের পাশে উইকেট ১০টি। চার উইকেট পেয়েছেন একবার। এই ম্যাচের আগে টি-টোয়েন্টিতে ১৮ উইকেট ছিল তার, ১২ ম্যাচ খেলে। সেখানেও একবার পেয়েছেন চার উইকেট। বয়সভিত্তিক থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ক্যারিয়ারে আগে হ্যাটট্রিকের কাছে গিয়েছিলেন, কিন্তু পরপর তিন বলে তিন উইকেট পাওয়া হয়নি মিয়াপ্পানের। এবার অনির্বচনীয় সেই স্বাদ পেলেন এমন এক মঞ্চে, যেখানে তিনি ছাড়া এই কীর্তি আছে কেবল আর চার জনের। ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরে বাংলাদেশের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেন অস্ট্রেলিয়া সাবেক গতিময় পেসার ব্রেট লি। বাকি তিন জন এই তালিকায় নাম লিখিয়েছেন গত বছর ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের আসরে। নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে আয়ারল্যান্ডের কার্টিস ক্যাম্পার। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার ভানিন্দু হাসারাঙ্গা এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার কাগিসো রাবাদা। ক্যাম্পার অবশ্য সবাইকে ছাড়িয়ে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে ‘ডাবল হ্যাটট্রিক’, চার বলে চার উইকেট নেওয়া প্রথম বোলার যে তিনি। মিয়াপ্পানও নিজে যেমন পেয়েছেন প্রথম হ্যাটট্রিকের স্বাদ, দেশকে দিয়েছেন সেই অভিজ্ঞতা। আমিরাতের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এর আগে যে তিন বলে তিন উইকেট নেওয়ার কীর্তি ছিল না কারো! আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হয়তো আমিরাত পেয়ে যেত এমন অর্জন। কিন্তু বিশ্বকাপে? বৈশ্বিক আসরে যে নিয়মিতই নয় তারা। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার খেলছে দলটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। সবশেষ খেলেছিল ২০১৪ সালে বাংলাদেশ আসরে। আর ওয়ানডেতে ১৯৯৬ সালের পর বৈশ্বিক মঞ্চে সবশেষ খেলে তারা ২০১৫ সালে। দলের বিশ্বকাপে ফেরা। সঙ্গে নিজের এমন অর্জন সব মিলিয়ে যেন ঘোরের মধ্যে আটকে গেছেন ২২ বছর বয়সী মিয়াপ্পান। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে তার কথায় ছিল সেসবের বহিঃপ্রকাশ।“টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আমি হ্যাটট্রিক করেছি এবং (দেশের হয়ে) প্রথম বোলার হিসেবে; এখনও ঘোরের মধ্যে আছি। এটা সত্যিই গর্ব করার মুহূর্ত, সত্যিই অসাধারণ।” 

মিয়াপ্পানের কীর্তি গড়ার ম্যাচটি জয়ে রাঙাতে পারেনি আমিরাত। দারুণ শুরু পাওয়া লঙ্কানদের ঠিকই বোলাররা আটকে রাখে ১৫২ রানে। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ধারেকাছে যেতে পারেনি আমিরাত। ৭৩ রানে থামে তাদের ইনিংস, হারে ৭৯ রানের বিশাল ব্যবধানে। নিজের অর্জনে খুশি মিয়াপ্পান। কিন্তু দলের হারও পোড়াচ্ছে তাকে বেশ। বললেন, লঙ্কানদের হারাতে পারলে তার আনন্দ পূর্ণতা পেত। “প্রথমত, ব্যক্তিগতভাবে এটা আমার জন্য ছিল দারুণ মুহূর্ত। কিন্তু আমরা যদি জিততে পারতাম, বিশেষ করে শ্রীলঙ্কার মতো টেস্ট খেলুড়ে দলের বিপক্ষে, তাহলে আরও অনেক বেশি ভালো হতো।” মিয়াপ্পানের সামর্থ্য বুঝতে পেরেছিল আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি চেন্নাই সুপার কিংস, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালোর। তাকে নেট বোলার হিসেবে রেখেছিল দল দুটি। বিশ্বের তারকা সব ক্রিকেটারে ঠাসা দলগুলোর সঙ্গে থেকেও বেশ ভালোই অভিজ্ঞতা হওয়ার কথা আমিরাত ক্রিকেটারের। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজের অভিজ্ঞতা ঝুলি থেকে দারুণ কিছু অস্ত্রই কাজে লাগালেন মিয়াপ্পান। পঞ্চদশ ওভারের শেষ তিন বলে যেভাবে লঙ্কান তিন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানকে ফেরালেন তিনি, তাতে মিশে ছিল তার চতুরতা। ওভারের প্রথম দুই বলে তিন রান দিয়ে তৃতীয় বলটি ভানুকা রাজাপাকসেকে ডট খেলান মিয়াপ্পান। তখন ৭ বল খেলে রাজাপাকসের রান কেবল ৫। আমিরাত বোলার বুঝতে পারে, তার ওপর ব্যাটসম্যান এখনই চড়াও হবেন। পরের বলটি তিনি দেন অফ স্টাম্পের বাইরে। তেড়েফুঁড়ে খেলতে গিয়ে ডিপ কাভারে ক্যাচ রাজাপাকসে। পরের বলে গুগলি বুঝতে না পেরে পা বাড়িয়ে খেলার চেষ্টায় কট বিহাইন্ড চারিথ আসালাঙ্কা। হ্যাটট্রিক বলটিও ছিল গুগলি, দাসুন শানাকাও পারেননি পড়তে। লঙ্কান অধিনায়কের ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বল ছোবল দেয় স্টাম্পে। ব্যস! হয়ে গেল মিয়াপ্পানের দারুণ এক কীর্তি, বাঁধনহারা উল্লাসে মাতলেন তিনি। কীভাবে পরিকল্পনা করে তিন ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়েছেন সেটাও তুলে ধরেন মিয়াপ্পান।“প্রথমে রাজাপাকসের বিপক্ষে, আমার মনে হয় তার জন্য লেংথ সাইডের (অফ সাইড) বাউন্ডারি বেশি বড় ছিল। আমি ধারণা করি, সে ওই জায়গায়ই আমাকে মারবে, কারণ তখন তার রান বোধহয় ৫ বলে ৫ ছিল। আমি তাকে সেদিকে খেলতেই বাধ্য করি এবং সে কাভার দিয়ে খেলার চেষ্টা করে কিন্তু ব্যাট-বলে ঠিকমতো করতে পারেনি। বাউন্ডারিতে কাশিফের হাতে যায় বল। ওটা ছিল প্রথম শিকার। এরপর আসালাঙ্কা আসে। ওই উইকেটের জন্য তেমন কিছু করতে হয়নি…ভ্রিত্তিয়া (কিপার) দারুণ ক্যাচ নেয়। ” “যখন দাসুন শানাকা উইকেটে এলো, হ্যাটট্রিক করার আবেগের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিলাম। তবে আমি স্রেফ চেয়েছি স্টাম্পে বলটি করার। এরপর যা হয়েছে সেটা আমার হাতে ছিল না…আমার মনে হয় সে লেগ-স্পিন ভেবে কাভারে খেলার চেষ্টা করে।” হ্যাটট্রিকের সামনে দাঁড়িয়ে অন্য এক অনুভূতি দোলা দিয়েছে মিয়াপ্পানের মনে। তবে সেসব সামলে নিজের পরিকল্পনায় অটুট থেকেই সাফল্য মিলেছে তার। “হ্যাটট্রিক বলের আগে আমি আমার পরিকল্পনায় পরিষ্কার ছিলাম। (দলের) কেউই কিছু বলতে আসেনি। তবে হ্যাঁ, বোলিংয়ে গেলে আমি সবসময়ই উইকেটরক্ষকের সঙ্গে কথা বলি। আমরা একই শহর থেকে এসেছি, আমরা আমাদের তামিল ভাষায় কথা বলি। ওই বলের আগে আমাদের কথা হয়েছিল…।”

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য