স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১৫ নভেম্বর : এখনও কোভিড টিকার পুরো ডোজ না নেওয়া প্রায় ২০ লাখ নাগরিককে লকডাউনে থাকার নির্দেশ দিয়েছে অস্ট্রিয়া।
গত কিছুদিনে নতুন করে সংক্রমণ বাড়ায় চাপ বাড়ছে অস্ট্রিয়ার হাসপাতালে। এই প্রেক্ষাপটে দেশটির সরকার এ নির্দেশ দিয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।
অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর আলেক্সান্ডার শালেনবের্গ বলছেন, “বিষয়টা আমরা হালকাভাবে দেখছি না। বিষয়টা দুঃখজনক, কিন্তু জরুরি।”যে নিয়ম অস্ট্রিয়া করেছে, তাতে পুরো ডোজ টিকা না নেওয়া ব্যক্তিরা কেবল খাবার কেনা বা জরুরি কাজের জন্যই বাসা থেকে বের হতে পারবেন।
এখন পর্যন্ত অস্ট্রিয়ার ৬৫ শতাংশ মানুষ কোভিড টিকার পূর্ণ ডোজ নিয়েছেন। পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে এই হার সর্বনিম্ন। সাত দিনের গড় হারে দেখা যাচ্ছে, অস্ট্রিয়ায় এখন প্রতি লাখে ৮০০ মানুষ সংক্রমিত হচ্ছেন, যা ইউরোপের মধ্যে এখন সবচেয়ে বেশি।শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে পুরো ইউরোপই আবার কোভিড সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের কবলে পড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে নতুন করে বিধিনিষেধের পথে হাঁটছে কিছু দেশ।
সংক্রমণের হারে যুক্তরাজ্য ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সামনের দিকে থাকলেও সেখানে এখনও নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ হয়নি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অবশ্য জনসমাগমস্থলে মাস্ক পরা আবার বাধ্যতামূলক করার পরামর্শ দিয়ে আসছেন। অস্ট্রিয়া জানিয়েছে, টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের লকডাউনে থাকার এই নির্দেশনা আপাতত দশ দিনের জন্য প্রযোজ্য হবে। তবে ১২ বছরের কম বয়স শিশু এবং যারা সম্প্রতি কোভিড থেকে সেরে উঠেছেন, তাদের ক্ষেত্রে এ বিধিনিষেধ প্রযোজ্য হবে না।
সরকারের এমন কঠোর অবস্থানের পরও টিকা নিতে রাজি নন অনেকে। রোববার শত শত মানুষ রাজধানী ভিয়েনায় চ্যান্সেলরের দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ করেছেন। তাদের ব্যানারে লেখা ছিল: ‘শরীর আমার, সিদ্ধান্তও আমার’। টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের রেস্তোরাঁ, সিনেমা হল কিংবা হেয়ারড্রেসারের কাছে যাওয়া নিষিদ্ধ হয়েছিল আগেই। এখন তাদের পুরোপুরি ঘরে থাকতে হবে।চ্যান্সেলর শালেনবের্গ বলেন, “বাস্তবতা হল, দেশের এক তৃতীয়াংশ মানুষকে আমরা এখন বলতে বাধ্য হচ্ছি- খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাসা ছেড়ে বের হবেন না।”
আর এটা নিশ্চিত করতে রাস্তাঘাটে কাজ করবে পুলিশ। যারা বাইরে আছেন, তাদের সবাই টিকা নেওয়া কিনা, তা নিশ্চিত করবেন তারা।
এ ধরনের নির্দেশ অস্ট্রিয়ার সাংবিধানিক অধিকারের লঙ্ঘন কি না- সেই প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ। উগ্র ডান ফ্রিডম পার্টি অভিযোগ করেছে, সরকার দেশের মানুষের একটি অংশকে ‘দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক’ বানিয়ে ফেলছে।
পাশের দেশ জার্মানি অস্ট্রিয়াকে উচ্চ ঝুঁকির দেশের তালিকায় রেখেছে। এর মানে হল, অস্ট্রিয়া থেকে কেউ জার্মানিতে গেলে তাকে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।
জার্মানিতে টিকা পেয়েছেন ৬৭.৩ শতাংশ নাগরিক। সেটা অস্ট্রিয়ার চেয়ে বেশি হলেও খুব বেশি নয়। সংক্রমণের হার জার্মানিতেও বাড়ছে। এ অবস্থায় নতুন করে বিধিনিষেধ ফিরিয়ে আনা হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নিতে এ সপ্তাহেই বৈঠক হওয়ার কথা নেদারল্যান্ডস এরইমধ্যে কিছু বিধিনিষেধ ফিরিয়ে এনেছে। একে বলা হচ্ছে ‘লকডাউন-লাইট’। এর আওতায় রেস্তোরাঁ আর দোকানপাট খোলা রাখার সময় কমেছে, মাঠে বসে খেলা দেখা যাচ্ছে না।
ডাচ নাগরিকদের ৮৪ শতাংশ এরইমধ্যে টিকার পুরো ডোজ পেয়েছেন। এখন যারা কোভিড নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগই টিকা নেননি।পূর্ব ইউরোপের কিছু দেশে টিকাদানের হার বেশ কম। লাটভিয়ায় টিকার পুরো ডোজ পেয়েছেন ৫৯ শতাংশ নাগরিক। গত মাসে সেখানেও বিধিনিষেধ ফিরিয়ে আনা হয়েছে।আইনপ্রণেতাদের মধ্যে যারা টিকা নিতে রাজি নন, তাদের পার্লামেন্টের আলোচনায় অংশ নেওয়া কিংবা ভোট দেওয়ার অধিকার স্থগিত রাখা হয়েছে। এই সময়ে তাদের বেতনও আটকে থাকবে বলে জানিয়েছে বিবিসি।