স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, ২০ সেপ্টেম্বর ।। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তার ফোনালপে টিকটক চুক্তিতে অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, শি চুক্তিটি অনুমোদন করেছেন। একইসঙ্গে শি’র সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ায় মুখোমুখি বৈঠকের পরিকল্পনা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন ট্রাম্প। গত জুনের পর থেকে শি এর সঙ্গে শুক্রবারই প্রথম ফোনে কথা বলেন ট্রাম্প। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ তিনি লেখেন, কথোপকথনটি ছিল “ফলপ্রসু”। চুক্তি অনুমোদন পাওয়ার প্রশংসা করেন ট্রাম্প। সঙ্গে এও জানান,আগামী মাসে শি’র সঙ্গে বৈঠকে বসবেন তিনি। আগামী ৩১ অক্টোবরে দক্ষিণ কোরিয়ার গিয়াংজুতে শুরু হচ্ছে ‘এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনোমিক কো-অপারেশন’ (এপেক) সম্মেলন।
ট্রাম্প বলেন, এই সম্মেলনের ফাঁকেই বৈঠক সেরে নিতে শি’র সঙ্গে একমত হয়েছেন তিনি। এই বৈঠকের পর আগামী বছর চীন সফরে যাবেন বলেও ট্রাম্প জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এরপরে শি যুক্তরাষ্ট্র সফর করবেন। চীন-যুক্তরাষ্ট্র এর আগে এ সপ্তাহের শুরুতে টিকটক নিয়ে একটি কাঠামোগত চুক্তি করেছিল। সেই চুক্তিতে বেইজিংয়ের চূড়ান্ত অনুমোদন ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল, যাতে যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক চালু রাখা যায়। ট্রাম্প এর আগে নিজেই যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক চালু থাকার বিষয়ে চীনের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তখনই তিনি জানিয়েছিলেন, বিষয়টি চূড়ান্ত করতে শুক্রবার চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলবেন।
এদিন ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপে শি চুক্তি অনুমোদন করায় যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক চালু থাকার পথ সুগম হয়েছে। তবে চুক্তির বিস্তারিত খুঁটিনাটি এবং সেটি চূড়ান্ত হওয়ার বিষয়ে এখনও স্পষ্ট করে কিছু জানাননি ট্রাম্প। চীনা মালিকানাধীন বাইটড্যান্সের টিকটককে যুক্তরাষ্ট্রে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হলে স্থানীয় মালিকানায় যেতে হবে—এমন নির্দেশনা আগে দেওয়া হয়েছিল। তবে জানুয়ারির পর থেকে চার দফা সময় বাড়ানোর পর এই সপ্তাহে আবারও ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বাড়ান ট্রাম্প। প্রস্তাবিত চুক্তিতে একাধিক মার্কিন প্রতিষ্ঠান—যার মধ্যে ওরাকল থাকার কথা বলা হচ্ছে—টিকটকের মার্কিন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ নেবে। তবে অ্যালগরিদম প্রযুক্তি বাইটড্যান্সের কাছ থেকে লাইসেন্স নেওয়া হবে। চীনা সংবাদমাধ্যম সিনহুয়া জানিয়েছে, টিকটক নিয়ে বেইজিংয়ের অবস্থান স্পষ্ট। বাজারের নিয়ম মেনে বাণিজ্যিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজার আহ্বান জানিয়েছে তারা। “আমরা আশা করি যুক্তরাষ্ট্র চীনা কোম্পানিগুলোর জন্য একটি উন্মুক্ত, ন্যায্য এবং বৈষম্যহীন ব্যবসায়িক পরিবেশ নিশ্চিত করবে,” বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
ট্রাম্প বলেছেন, টিকটকের যুক্তরাষ্ট্রে “অসাধারণ সম্ভাবনা” আছে। তবে কংগ্রেসের রিপাবলিকানদের একাংশ এখনও উদ্বিগ্ন যে চুক্তির মাধ্যমে বাইটড্যান্সের অ্যালগরিদমের ওপর নির্ভরশীলতা থাকলে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রভাব অব্যাহত থাকতে পারে। ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে টিকটক নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানালেও এখন অবস্থান বদলে জানিয়েছেন, প্ল্যাটফর্মটি তার ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালত ২০২৪ সালের শুরুতে আইন বহাল রেখেছিল যাতে বাইটড্যান্স মার্কিন কার্যক্রম বিক্রি না করলে অ্যাপ নিষিদ্ধ থাকে। তখন সাময়িকভাবে অ্যাপ বন্ধ থাকলেও ট্রাম্প নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা স্থগিত করেন। শুক্রবার শি’য়ের সঙ্গে ফোনালাপ সম্পর্কে ট্রাম্প ট্রুথ স্যোশালে লিখেছেন, আলোচনায় বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে। এর মধ্যে টিকটক চুক্তি অনুমোদন ছাড়াও আছে- বাণিজ্য, ফেন্টানিল পাচারের বিষয় এবং রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ শেষ করার বিষয়টিও। “ফোনালাপটি খুবই ভাল ছিল। আমরা আবার ফোনে কথা বলব। টিকটক অনুমোদন প্রশংসনীয়, দুইজনই এপেক সম্মেলনকালে বৈঠকের অপেক্ষায় আছি”, লেখেন ট্রাম্প।

