Tuesday, November 18, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদজিমি কিমেলকে সরিয়ে দেওয়া কি বাক স্বাধীনতার পরিপন্থি?

জিমি কিমেলকে সরিয়ে দেওয়া কি বাক স্বাধীনতার পরিপন্থি?

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, ২০ সেপ্টেম্বর ।। ডানপন্থি রাজনৈতিক কর্মী চার্লি কার্ক হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে যুক্তরাষ্ট্রের টিভি উপস্থাপক জিমি কিমেলের শো বন্ধ করে দিয়েছে ডিজনি মালিকানাধীন সংবাদমাধ্যম এবিসি। রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গির ভাষ্যকার কার্ককে গেল সপ্তাহে গুলি করে হত্যা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থিরা একে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড হিসেবে দেখছেন। আবার অনেক সমালোচক মনে করছেন, কিমেলকে সরিয়ে দেওয়া তার বাক স্বাধীনতার পরিপন্থি, যা মার্কিন সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে নিশ্চিত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার কিমেলের কয়েকশ ভক্ত তার অপসারণের প্রতিবাদে বাহব্যাংক, নিউ ইয়র্ক ও হলিউডের সড়কে বিক্ষোভ করেন। এমন প্রেক্ষাপটে কিমেলের সঙ্গে কী ঘটেছে এবং বাক স্বাধীনতা নিয়ে মার্কিন সংবিধান কী বলছে, সে বিষয়ে ব্যাখ্যামূলক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আল-জাজিরা।

যা ঘটেছে কিমেলের সঙ্গে

ডানপন্থি রাজনৈতিক কর্মী ও ভাষ্যকার চার্লি কার্ক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবেও পরিচিত। গত ১০ সেপ্টেম্বর ইউটাহ ভ্যালি ইউনিভার্সিটিতে এক অনুষ্ঠানে প্রায় তিন হাজার মানুষের সামনে বক্তব্য দিচ্ছিলেন ৩১ বছর বয়সী কার্ক। সেখানে দূর থেকে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয় তাকে। ঘটনার প্রায় ৩৩ ঘণ্টা পর গ্রেপ্তার করা হয় সন্দেহভাজন হামলাকারী টাইলার রবিনসনকে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মাগা (মেইক অ্যামেরিকা গ্রেইট এগেইন) সংশ্লিষ্ট ডানপন্থি কিছু ব্যক্তি বলছেন, ২২ বছর বয়সী রবিনসন বামপন্থায় বিশ্বাস করেন।

এর মধ্যে সোমবার নিজের টিভি শোতে কিমেল বলেন, “চার্লি কার্ককে হত্যা করা ছেলেটিকে নিজেদের বাইরের কেউ প্রমাণ করার চেষ্টায় মাগা গ্যাং মরিয়া হয়ে উঠেছে এবং এ থেকে রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ে তারা সম্ভাব্য সবই করছে।” এ টিভি উপস্থাপক হত্যাকাণ্ড নিয়ে ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়ার সমালোচনাও করেন, যিনি কার্ককে ‘সন্তানের মতো’ বলে মন্তব্য করেন। কিমেল বলেন, “বন্ধু বলে ডাকা ব্যক্তির মৃত্যুতে প্রাপ্ত বয়স্ক কোনো ব্যক্তি এভাবে শোক প্রকাশ করে না। একটা গোল্ডফিশ মারা যাওয়ার পর চার বছরের বাচ্চা এ ধরনের আচরণ করে।”

এসব মন্তব্য নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হলে সম্প্রচারকারী প্রতিষ্ঠান নেক্সস্টার ও সিনক্লেয়ার জানায়, তারা কিমেলের শো সংশ্লিষ্ট স্টেশন থেকে সরিয়ে নেবে। দেশটির ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশনের (এফসিসি) চেয়ারম্যান ব্রেন্ডান কার বলেন, কিমেল, ডিজনি ও এবিসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার মতো যথেষ্ট আইনি ভিত্তি তার হাতে রয়েছে। এফসিসির একমাত্র ডেমোক্র্যাট আনা গোমেজ সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ব্রেন্ডান কারের বক্তব্যের সমালোচনা করেন।তিনি বলেন, “মত প্রকাশের আইনি অধিকার দমন করতে বর্তমান প্রশাসন ক্ষমতা অপব্যবহার করেছে।” এবিসি ও এর বিভিন্ন স্টেশনকে এফসিসির কাছ থেকেই লাইসেন্স নিতে হয়।

কী আছে প্রথম সংশোধনীতে?

যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে সরকারের হস্তক্ষেপ থেকে বাক স্বাধীনতাকে মুক্ত রাখার কথা বলা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, “এমন আইন করা যাবে না, যা কোনো ধর্মীয় বা তার স্বাধীন চর্চার পরিপন্থি হয়; কিংবা বাক স্বাধীনতা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সীমিত করে; অথবা জনগণের শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার বা অভিযোগের প্রতিকার চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করার অধিকার খর্ব করে।”

১৯৬৩ সালে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট ঐতিহাসিক এক রায় দেয়, যেখানে বলা হয়, বেসরকারি কোনো কোম্পানির ওপর চাপ প্রয়োগ করে সরকার অনানুষ্ঠানিক কোনো ‘সেন্সরশিপ’ তৈরি করতে পারবে না। এ রায় এসেছিল বই ও সাময়িকী বিতরণকারীদের বিরুদ্ধে রোড আইসল্যান্ড এজেন্সি থেকে হুমকি আসার পরে। ‘বিতর্কিত’ প্রকাশনা বিক্রির অভিযোগে এমন হুমকি দিয়েছিল ওই এজেন্সি। এরপর গেল বছর সুপ্রিম কোর্টের আরেক রায়ে বলা হয়, এ ধরনের পরিস্থিতিতে বাদীকে প্রমাণ করতে হবে যে, কারো বক্তব্যে তারা প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিমেলের শো বন্ধ করাটা কি অসাংবিধানিকবিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রথম সংশোধনীতে যে বাক স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে, সেই জায়গা থেকে দেখলে কিমেলের শো বন্ধ করে দেওয়াটা অসাংবিধানিক। বাক স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা অ্যাডভোকেসি গ্রুপ—ফাউন্ডেশন ফর ইনডিভিজুয়াল রাইটস অ্যান্ড এক্সপ্রেশনের জেনারেল কাউন্সেল রুনি লন্ডন মনে করেন, “কারের পদক্ষেপগুলো অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা প্রয়োগের একটা উদাহরণ।” এফসিসির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, “এফসিসি শুরু থেকেই বিশ্বাস করে, চিন্তার মুক্ত প্রকাশকে সুযোগ করে দেওয়ার মাধ্যমেই জনস্বার্থকে সুরক্ষা দেওয়া যায়।”

কে কী বলছেন

অনেক ডেমোক্র্যাট, রাজনীতিক, হলিউড তারকা ও টক-শো উপস্থাপক বাক স্বাধীনতা নিশ্চিতে জোর দেওয়ার কথা বলছেন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম—এক্সে কয়েকটি প্রবন্ধ ও মন্তব্য শেয়ার করেছেন। সঙ্গে লিখেছেন, “চার্লি কার্কই হোক, কিংবা জিমি কিমেলই হোক; মাগা সমর্থকই হোক কিংবা মাগাবিরোধীই হোক, কারো বাক স্বাধীনতা কেন গণতন্ত্রের প্রাণ এবং কেন তা রক্ষা করা প্রয়োজন, তা এসব প্রবন্ধ ও মন্তব্যে স্পষ্ট ও জোরালো হয়েছে।” সাবেক টিভি উপস্থাপক ডেভিড লেটারম্যান বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে বলেন, “আমি খুবই অস্বস্তিবোধ করছি। কারণ, ঘটনা কোথায় গড়াচ্ছে, আমরা সবাই দেখতে পাচ্ছি, তাই না? এটা স্বাধীন সংবাদমাধ্যম নয়। এটা ভালো কিছু না; এটা বোকামি; হাস্যকর।”

ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট সেনেটর অ্যাডাম শিফ বৃহস্পতিবার এক্স পোস্টে লেখেন, “যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সংবাদমাধ্যমের ওপর বড় ধরনের হস্তক্ষেপের জন্য বর্তমান প্রশাসন দায়ী। প্রথম সংশোধনীর আর কী অবশিষ্ট থাকল?” বিপরীত প্রতিক্রিয়াও অবশ্য আছে। কিমেলের শো বন্ধের সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বেশির ভাগ ডানপন্থি, যে তালিকায় খোদ ট্রাম্পও আছেন। নিজের ট্রুথ সোশাল প্ল্যাটফর্মে তিনি লেখেন, “আমেরিকার জন্য দারুণ খবর। দর্শক খরায় ভোগা জিমি কিমেল শো বাতিল। “যেটা করা দরকার ছিল, শেষমেশ সেটা করায় এবিসিকে অভিনন্দন। কিমেলের কোনো প্রতিভা নেই।”

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য