স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২০ সেপ্টেম্বর : রাজ্যে মহিলাদের উপর আক্রমণ বেড়েই চলেছে। পুলিশ মামলা নিচ্ছে না। বলছে অভিযোগ করে লাভ নেই, নিজেদের মধ্যে মীমাংসা করে নেওয়ার জন্য। কোন হেলদোল নেই সরকারের। মানুষ বাস্তব জীবনে এগুলি দ্বারা আক্রান্ত, ব্যতিব্যস্ত, বিব্রত। আর বর্তমান সরকারটা থাকলে এ জলন্ত সমস্যাগুলির সমাধান হবে তা ভাবা যায় না। তাই সমাধান একটাই এই সরকারটাকে হাটাতে হবে। মঙ্গলবার ভানু ঘোষ স্মৃতি ভবনে সারা ভারত গণতান্ত্রিক নারী সমিতি পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা কমিটি তৃতীয় সম্মেলনে বক্তব্য রেখে একথা বললেন বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার। তিনি বলেন, বিজেপি চার বছরে মাথায় বুঝতে পেরেছে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব তাদের সর্বনাশ করে দিয়েছে।
পায়ের নিচে মাটি সরে গেছে। মানুষ দল ছেড়ে চলে যাচ্ছে। তাই ২০২৩ -এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে মানুষের কাছে যেতে বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীর মুখ বদলেছে। এটা বিজেপির একটা কৌশল। অর্থাৎ সরকার তার সমস্ত ব্যর্থতা দায় মুখ্যমন্ত্রী কাঁদে চাপিয়ে নিজের পিঠ বাঁচাতে চেষ্টা করেছে। যদিও মানুষ এত বোকা নয়। বিজেপির এই কৌশল মানুষ বুঝতে পেরেছে বলে জানান বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার। পাশাপাশি এ দিন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবকে কটাক্ষ করে বিরোধী দলনেতা বলেন, বিপ্লব কুমার দেব মুখ্যমন্ত্রী পদে থেকে গর্ব করে বলেছিলেন ২০৪৭ সাল পর্যন্ত তিনি মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন। কিন্তু দেখা গেছে পাঁচ বছরের মধ্যেই দল থেকে তাকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়। এখন বিপ্লব কুমার দেবকে বেশি না খাটিয়ে দল তাকে দূরে পাঠিয়ে দিয়েছে। অর্থাৎ হরিয়ানার প্রভারি করা হয়েছে। নিজের রাজ্য কিছু করে দেখতে পারলেন না বিপ্লব কুমার দেব! এবং রাজ্যে যার নিজের দলে স্থান হয়নি, তাকে হরিয়ানার প্রভারী করে কি বিজেপি মুখ লুকোতে পারবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন বিরোধী দলনেতা। হরিয়ানার মানুষ বিজেপি নেতৃত্বদের প্রশ্ন করবেন কেন তাদের কাঁধে বিপ্লব কুমার দেবকে চাপানো হয়েছে। আর এর জবাব দিতে পারবে না দলের নেতৃবৃন্দ। আর এটাই শাসক দলের আভ্যন্তরীণ সমস্যা। আর এটা পরিস্থিতির পরিবর্তন। পরিস্থিতির পরিবর্তন শাসক দলে বিপক্ষে যাচ্ছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন শ্রী সরকার। আরো বলেন, বিপ্লব কুমার দেব মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরে কলকাঠি নেড়ে রাজ্যসভার প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করেছেন। দলের নেতৃত্ব বুঝতে পেরেছেন তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাজ্যসভার আসনে প্রার্থী করা হয়েছে। ফলে বিধানসভায় আর থাকার সুযোগ পাচ্ছেন না বিপ্লব কুমার দেব। সুতরাং রাজ্য নিয়ে কথা বলার সুযোগ হারিয়েছেন বিপ্লব কুমার দেব বলে জানান মানিক সরকার। আরো দেখা গেছে পৃষ্ঠা প্রমুখ এবং প্রভারী পাল্টে দিয়েছে বিজেপি। এর দ্বারা স্পষ্ট আভ্যন্তরীণ সমস্যায় ভুগছে বিজেপি। তাই এগুলি শক্তির লক্ষণ না, দুর্বলতা ও ভীত সন্ত্রস্তের লক্ষণ বলে জানান তিনি।
এদিন আবার পাহাড়ের জনজাতি দলগুলিকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, পাহাড়ে আইপিএফটি শক্তি এখন তিপ্রা মথায় চলে গেছে। আইপিএফটি বাক্স প্রায় খালি হয়ে গেছে। কিন্তু তিপ্রা মথার অবস্থা করুন। তারা পাহাড় দখল করেছে এক বছর হয়ে গেছে। কাজ নেই, খাদ্য নেই, পানীয় জল, নেই বিদ্যুৎ নেই, স্কুলে শিক্ষক নেই, হাসপাতালে কর্মী নেই। জনজাতি অংশের মানুষের অসহায় অবস্থার খবর নেওয়ার কেউ নেই। আশ্চর্য বিষয় হলো পাহাড়ের তিপ্রা মথা রাজ্য সরকারের উপর কোন চাপ সৃষ্টি করতে আন্দোলন বা দাবি জানাতে দেখা যায় না। ফলে জনজাতিদের মধ্যে আবারো হতাশা সৃষ্টি হচ্ছে এবং বামফ্রন্টের প্রতি মানুষ দুর্বল হচ্ছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন শ্রী সরকার। তিনি কংগ্রেসের প্রসঙ্গে বলেন, দেখা গেছে ২০১৮ নির্বাচনের সময় কংগ্রেসের অবস্থা করুন ছিল। কারণ কংগ্রেসের বড় একটা অংশ বিজেপিতে চলে যাওয়ায় সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিল বিজেপি। কিন্তু এখন আবার বড় অংশ বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেসের চলে যাচ্ছে। তাতে হতাশা হয়ে সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে বিজেপি বলে জানান তিনি।
রাজ্যে প্রতিদিন নারী সংক্রান্ত অপরাধ বাড়ছে। তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন সারা ভারত গণতান্ত্রিক নারী সমিতি নেত্রী তথা প্রাক্তন সাংসদ ঝর্ণা দাস বৈদ্য। তিনি বলেন নারী সংক্রান্ত অপরাধ রুখতে সব দলকে এগিয়ে আসা দরকার। এবং আগামী দিনে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। এদিন সম্মেলন শুরু হওয়ার আগে পতাকা উত্তোলন করা হয়। শহীদদের প্রতি পুষ্পাঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানো হয়। তারপর আগরতলা শহরে নারীদের সুরক্ষার দাবিতে একটি মিছিল সংঘটিত করে সারা ভারত গণতান্ত্রিক নারী সমিতির পশ্চিম জেলা কমিটি সদস্যারা। উপস্থিত ছিলেন সারা ভারত গণতান্ত্রিক নারী সমিতি নেতৃত্ব রমা দাস, কৃষ্ণা রক্ষিত সহ অন্যান্যরা।