Tuesday, September 17, 2024

চুল পড়ছে!

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ২৯ ডিসেম্বর:নারীর কেশেই বেশ। দিদিমা-ঠাকুরমাদের কাছে খোঁপার কাঁটাই ছিল ট্রেন্ডি। এসব এক জমানার স্টাইল। এখন ব্লান্ড, বব, কার্ল, লব…। হাল ফ্যাশনে ছোট চুলে নানা কাট। তবে পুরনো স্টাইল কিন্তু মোটেই ফিকে নয়। বরং স্ট্রেট একঢাল, পিঠ ঢাকা চুলই চলতি ফ্যাশন। শুধু বড় কেন, ছোট চুলেও এখন স্ট্রেটনিং, স্মুথনিং খুব ইন, তাই সবাই করাচ্ছে কেরাটিন। দুর্গাপুজো গেল, সবে মাত্র তিনমাস গিয়েছে। চুলে এই সব করেননি, নারীকুলে এইরকম রমণীর সংখ্যাটা হাতে গোনা। কেরাটিন থেরাপি করে আর সুন্দর চুলের পিছনে ছুটছে সবাই। আসলে নানা কারণে এখন চুলের সমস্যা বেড়েছে। চুলের জেল্লা থেকে লম্বা, সবেতেই নানা প্রতিকূলতা। কারও লম্বায় বাড়ছে কিন্তু জেল্লা নেই। কারও জেল্লা থাকলেও চুল উঠে যাচ্ছে। এইসব থেকে বাঁচতে গিয়ে অতিরিক্ত পার্লারে গিয়ে ক্ষণিকের জন্য খানিক চুল চকচক করলেও পড়ে গিয়ে আসল সমস্যা শুরু হচ্ছে।

এখন রোজই যত রোগী আসে তার ১০-১৫ শতাংশ রোগী আসছে চুল উঠে যাওয়ার সমস্যা নিয়ে। অতিরিক্ত পার্লারের উপর ভরসা করতে গিয়ে বারবার চুলে কেরাটিন থেরাপি বা আরও অন্যান্য চলতি যেসব পদ্ধতিতে আমজনতা ভরসা করছেন সেগুলো আসলে মিথ। কিছুটা কাজ হয়, তবে ডার্মাটোলজিক্যালি এসব প্রমাণিত নয়। বিশেষত চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যা মেটাতে কেরাটিন করুন, এটা আমরা ডাক্তাররা কখনওই বলি না। কারও কারও আবার কনট্যান্ট ডার্মাটাইটিস হয়ে র‌্যাশ বেরোতে পারে। কেরাটিন করার ফলে মাথার স্ক্যাল্পে এলার্জির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এটাও খুব লক্ষণীয় বিষয় যে, সবে পুজো গিয়েছে তিনমাস হয়েছে। আর চেম্বারে অল্পবয়সি মেয়েদের ভিড় কিন্তু বেশ বেড়েছে। সমস্য একটাই চুল উঠে যাচ্ছে।

চুল ওঠার কারণ অনুযায়ী চাই চিকিৎসা। চুল উঠে যাচ্ছে বা রুক্ষ হয়ে যাচ্ছে, তা হলে প্রথমেই পার্লারে না গিয়ে আগে কেন হচ্ছে এমন, সেটা নির্ণয় জরুরি।

টেলোজেন ইফ্লুভিয়াম- এক্ষেত্রে যেকোনও বড় অসুখের পর, প্রেগন্যান্সির পর অনেক মেয়েদেরই চুল উঠতে থাকে। যেটা সাধারণত ৩-৬ মাসের মধ্যে নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যায়। এক্ষেত্রে বিশেষ কিছু চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে না।

 অ্যান্ড্রোজেনিক অ্যালোপেশিয়া- এতে কী হয়, পুরুষ হরমোন অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমলে চুল উঠতে থাকে। ছেলেদের ক্ষেত্রে এই কারণে টাক পড়ে আর মেয়েদের সিঁথি ফাঁকা হয়ে চওড়া হয়ে যেতে থাকে। চুল পাতলা হয়ে যায়। মেয়েদের এই সমস্যাকে বলা হয় ফিমেল অ্যান্ড্রোজেনিটি।

অ্যালোপেশিয়া এরিয়াটা- এতে পুরো মাথায় টাক পড়ে যেতে পারে। সাধারণত অটোইমিউন ডিজিজ থেকে এই সমস্যা হয়। এক্ষেত্রে হঠাৎ করেই সকালে উঠে দেখা যায় মাথায় মধ্যে মধ্যে একটু একটু করে চুল উঠে গিয়েছে।

 অ্যানাজেন ইফ্লুভিয়াম- সাধারণত ক্যানসারে কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি চলার পর সেই কারণে চুল উঠে যাওয়া।

এইসব ক্ষেত্রে চুল উঠলে কিন্তু সেটা কেরাটিন বা অন্যকিছু করে সমস্যা মেটানো সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে উপযুক্ত চিকিৎসা দরকার। রোগীকে ওষুধ দেওয়ার সঙ্গে কাউন্সেলিংও দরকার। প্রথমে চিকিৎসা করাতে এলে কিছু ব্লাড টেস্ট করে দেখা প্রয়োজন কেন চুল উঠছে, শরীরে কীসের ঘাটতি। তারপর আমরা সিদ্ধান্ত নিই কী ট্রিটমেন্ট করতে হবে। ওষুধের পাশাপাশি প্রয়োজনে কিছু থেরাপি দেওয়ারও দরকার হয়। চুল পড়ার সমস্যা থাকলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা জরুরি।

এইসময় চুলের সমস্যা বেশি শুরু হয়। তাই প্রাথমিক যত্ন নেওয়াও খুব জরুরি। 

শীতকালে সপ্তাহে নিয়মিত শ্যাম্পু করা দরকার সঙ্গে কন্ডিশনার জরুরি। না হলে চুল খুব দ্রুত শুষ্ক হয়ে যায়।

চুলে তেল লাগালে চুল বেশি ভাল হবে এই ধারণাও ঠিক নয়। এতে করে অনেক সময়ই খুশকি বাড়তে পারে। প্রতিটি চুলের গোড়ায় সিবেসিয়াম গ্ল্যান্ড থাকে, চুলের প্রয়োজনীয় তেল সেই গ্ল্যান্ডেই জমা থাকে। তাই বাইরে থেকে আলাদা করে মাথায় তেল দেওয়ার কোনও দরকারই পড়ে না।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য