স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক , আগরতলা। ১১ আগস্ট : পুঁথিগত পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ক্রীড়া সংস্কৃতি সমাজ রাষ্ট্র সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে। শুধু পুঁথিগত বিদ্যায় একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হওয়া সম্ভব নয়। সমাজের সংকটে মেধাবীদের প্রয়োজন। কিন্তু তাদের সমাজের সংকটে কখনো পাওয়া যায় না। সমাজ ও রাষ্ট্র নির্মাণে সকলকে এগিয়ে আসা উচিৎ। সোমবার বিশালগড়ে নবীন বরণ অনুষ্ঠানে কথাগুলো বলেন মুখ্যমন্ত্রী ডা: মানিক সাহা। এদিন বিবেকানন্দ শিশু নিকেতনের উদ্যোগে মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের সংবর্ধনা, নবীন বরণ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। বিশালগড় নিউ টাউন হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজা মুখ্যমন্ত্রী ডা: মানিক সাহা।
ভাষণের মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন শুধু নম্বরের ক্ষেত্রে সেরা হলে চলবে না। ছাত্র-ছাত্রীদেরকে একদিন সেরা মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আজকের ছাত্রছাত্রীরা প্রাইভেট টিউশনির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। প্রাইভেট টিউশনিতে সার্বিক বিকশিত হওয়ার সুযোগ কম থাকে। তাই তিনি বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষে পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের পরামর্শ দেন। কারণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীজি বলেছেন যাদের কাছে জ্ঞান থাকবে তারাই আগামী দিনে রাজ্য এবং দেশ চালাবে। তাই শুধু পুঁথিগত বিদ্যায় নয়, সর্বক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান থাকতে হবে। শুধু নম্বরের ক্ষেত্রে যারা মেধাবী তারাই নয় সমাজের এবং রাষ্ট্রের কল্যাণে সকলের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। তিনি বলেন সামাজিক সংকটে মেধাবীদের খুঁজে পাওয়া যায় না। শুধু ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবলে হবে না। যে মাটি, যে সমাজ, যে দেশ আমাদের বিকশিত হওয়ার সুযোগ দিয়েছে সেই সমাজ এবং রাষ্ট্রের কল্যাণে নিজেকে যুক্ত করতে হবে। তিনি বলেন জাতির মূল ভিত্তি হল শিক্ষা। অন্ধকার থেকে আলোতে পৌঁছার সেতু হলো শিক্ষা। পড়াশোনার কোন শেষ নেই। জীবনব্যাপী জ্ঞান অর্জন করতে হবে। যারা সঠিক পথ দেখায় এবং যে কোন বিষয়ে যার কাছ থেকে আমরা জ্ঞান অর্জন করি তিনি আমাদের শিক্ষক। মুখ্যমন্ত্রী বলেন দেশের শিক্ষাবিদদের পরামর্শ নিয়ে জাতীয় শিক্ষানীতি চালু হয়েছে। আমরা শিক্ষার রোড ম্যাপ খুঁজে পেয়েছি। একসময় বিদ্যা জ্যোতি নিয়েও অনেক সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু এবছর বিদ্যা জ্যোতি স্কুল গুলি ভালো রেজাল্ট করেছে। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন আমরা গুণগত শিক্ষার উপর জোর দিচ্ছি। আরো সরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল স্থাপনের পরিকল্পনা চলছে। গত অর্থ বছরে ১৫৩ কোটি টাকায় বিভিন্ন স্কুলে নতুন বিল্ডিং তৈরি হয়েছে।
স্কুল সংস্কারে খরচ হয়েছে ৮০ কোটি টাকা । চলতি অর্থবছরে নতুন স্কুল বিল্ডিং তৈরির জন্য ২৬৪ কোটি টাকা এবং সংস্কারের জন্য ১৫১ কোটি টাকা বাজেটে রয়েছে। সুপার থার্টি প্রকল্পে অনেক মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মেধা পুরস্কার শিক্ষার্থীদের সহায়তা করছে। পড়াশোনার পাশাপাশি বৃত্তিমূলক শিক্ষা ৪২৬ স্কুলে চালু হয়েছে। বন্দে ত্রিপুরা চ্যানেল বিদ্যার্থীদের জ্ঞান অর্জনে অনেক সুযোগ করে দিচ্ছে। স্কুলে স্কুলে স্মার্ট ক্লাস চালুর ব্যবস্থা হচ্ছে। গত বছর ১৪০ জন মেধাবী ছাত্রীকে স্কুটি দেওয়া হয়েছে। কলেজে ছাত্রীদের জন্য অবৈতনিক শিক্ষার ব্যবস্থা হয়েছে। রাজ্যের শিক্ষার সর্বাঙ্গিন বিকাশে সরকার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। মাধ্যমিক পরীক্ষায় সেরা দশের তালিকায় স্কুলের পাঁচজন ছাত্রছাত্রী স্থান করে নিয়েছে। এদিন সারা পাঁচ জন ছাত্র-ছাত্রীকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী ডা: মানিক সাহা। অনুষ্ঠানে এছাড়া উপস্থিত ছিলেন জেলা সভাধিপতি সুপ্রিয়া দাস দত্ত, টিআইডিসি চেয়ারম্যান তথা স্কুলের পরিচালন কমিটির সভাপতি নবদল বণিক, বিশালগড় পৌর পরিষদ চেয়ারম্যান অঞ্জন পুরকায়স্থ, ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি ডঃ ধনঞ্জয় গন চৌধুরী, স্কুলের সেক্রেটার রাজেশ সুর চৌধুরী, সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুধীশ ভট্টাচার্য। এদিন সকালে নবীন ছাত্র ছাত্রীদের বরণ করার পর্ব সম্পন্ন হয়। দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিতিতে মেধাবী সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত নৃত্য নাটক পরিবেশন করেন।

