স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা, ২ জুন : কোন কিছু হলেই রাস্তায় নেমে আন্দোলন করা, রাস্তা অবরোধ করা এবং সরকারি কাজকর্মের উপর প্রভাব ফেলা যেন রাজনৈতিক অধিকার অর্জন করেছে রাজ্য সরকারের শরিক দল তিপরা মথা এবং তাদের শাখা সংগঠন। আর তাদের পেছনে সাবাসী দেয় রাজ্য সরকার। এমনটাই গুঞ্জন উঠেছে রাজ্য বাসীর মধ্যে। গত ২৫ মে রবিবার ছুটির দিনে গোমতী জেলা শাসক তড়িৎ কান্তি চাকমার সরকারি আবাসনে রাতের বেলা গিয়েছিলেন তিপরা মথার সুপ্রিমো প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণ। সেখানে গিয়ে জেলা শাসকের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ মিলেনি প্রদ্যুতের। জেলা শাসকের দেহরক্ষীরা সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন নো- এন্ট্রি।
জেলাশাসকের সাথে দেখা করতে হলে অফিসে আসুন। কিন্তু এখন দেখা করার সুযোগ মিলবে না। শেষ পর্যন্ত প্রদ্যুৎ নিজেকে মহারাজা বলে দাবি করলেও দেখা করার সুযোগ পায়নি জেলা শাসকের সঙ্গে। শেষ পর্যন্ত অপমানিত হয়ে আগরতলা ফিরেছিলেন তিনি। তারপর উনার দলের যুব সংগঠন ওয়াই টি এফ সাংবাদিক সম্মেলন করে দাবি করেছিলেন গোমতি জেলা শাসক তড়িৎ কান্তি চাকমাকে ত্রিপুরা থেকে বিদায় করার জন্য। কিন্তু সপ্তাহ গড়িয়ে গেলেও জেলা শাসকের বিরুদ্ধে কোনরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করার মতো ক্লু খুঁজে পায়নি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ। শেষ পর্যন্ত শনিবার সাংবাদিক সম্মেলন করে ওয়াই টি এফ -এর নেতৃত্ব দাবি করেছিলেন সোমবার গোমতী জেলার সমস্ত অফিস শাটডাউন করে দেওয়া হবে। আন্দোলনে ডাক দিয়ে প্রত্যাশা অনুযায়ী কর্মী সমর্থক জোগাড় করতে না পেরে সোমবার শতাধিক কর্মী নিয়ে জেলাশাসক চত্বরে জমা হয়। আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল পুলিশ। কিন্তু পুলিশ কতটা ব্যর্থ সেটার পরিচয় দিয়েছে এদিন। পুলিশের উদ্দেশ্যে জুতো ছেড়া হলেও পুলিশ রাষ্ট্রপতি কালার্স প্রাপ্ত খাঁকি উদ্দির ক্ষমতা পর্যন্ত দেখায় নেই। জেলা পুলিশ এদিন আন্দোলনকারীদের ব্যারিকেড দিয়ে আটকাতে পারেনি।
ব্যারিকেড ভেঙে উশৃংখলভাবে জেলা শাসক কার্যালয়ে প্রবেশ করে। তারপর অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার শফিক দে-র নেতৃত্বে ওয়াই টি এফ -এর দশজনের একটি প্রতিনিধি দল গিয়ে তালা দিয়ে দেয়। অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপারের জামাই আদর দেখে বোঝা যায় ডাল মে কুচ কালা হে। ওয়াই টি এফ দলের নেতৃত্ব জানান আজ বিকাল পাঁচটার মধ্যে যদি গোমতী জেলা শাসককে বদলি না করে তাহলে রাজ্যের অন্যান্য জেলাগুলোর মধ্যে পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হবে। আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এর প্রভাব পড়বে রাজ্যের বাকি জেলাগুলির মধ্যে। আরো বলেন বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতিতে জেলা শাসকরা ব্যস্ত থাকলেও এটা ওয়াই টি এফ -এর দায়িত্ব নয়। টিটিএএডিসি -র নির্বাচন আসন্ন। এই মুহূর্তে একজন জেলা শাসক নিয়ে আসন্ন নির্বাচনে যদি কোন সমস্যা হয় সেটা তাদের দায়িত্ব নেই বলে জানান নেতৃত্ব। এদিকে যতদূর জানা যায় জেলাশাসক কার্যালয়ে ওয়াই টি এফ তালা ঝুলালেও জেলা শাসক কার্যালয়ে ছিলেন না। অবশেষে পুলিশের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে জুতো ছোড়ে তারা। অথচ পুলিশ উশৃংখলদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো পুলিশের গাড়ির মাইক বাজিয়ে আগামী কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। যা বিগত দিনে রাজ্যে হয়েছে বলে জানা নেই। প্রশ্ন হচ্ছে সেখানে উপস্থিত নিষ্কর্ম পুলিশ আধিকারিকদের ভূমিকা নিয়ে। এদিকে যতদূর জানা যায়, উদয়পুর মহাকুমা শাসক কার্যালয়, কিল্লা এবং মাতাবাড়ি ব্লকেও তালা ঝুলিয়েছে আন্দোলনকারীরা। এক কথায় আন্দোলন যেন তাদের কাছে মগের মূলক, কথায় কথায় আন্দোলন, অথচ সাবাসী দিচ্ছে সরকার! ছিঃ ছিঃ করছে জনগণ। অপরদিকে জেলা পুলিশ সুপারের ভূমিকা নিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে প্রশ্ন রাজনীতির কাছে পুলিশ কি দলদাস? নাহলে এভাবে মাথা নত কেন করা হলো এদিন?

