স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা, ১ জুন : শনিবার সন্ধ্যা থেকে প্রবল বর্ষণে বিধ্বস্ত আগরতলা শহর সহ গোটা রাজ্য। এদিন সন্ধ্যায় টানা দুই ঘন্টার বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়ে আগরতলা শহরের প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলি সর্বত্র। রবিবার সকাল হওয়ার আগেই আগরতলা শহরের নিম্নাঞ্চল ইন্দ্রনগর, জামতলা, চন্দ্রপুর, বলদাখাল, জয়নগর, প্রতাপগড় সহ বিভিন্ন এলাকার জলমগ্ন হয়ে পড়ে। মানুষকে উদ্ধারের কাজে প্রশাসন রাতের বেলায় হাত লাগায়। মানুষকে নিরাপদ স্থানের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। বিভিন্ন বিদ্যালয়ের মধ্যে খোলা হয় অস্থায়ী শিবির। এনডিআরএফ এবং সদর মহকুমা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের কর্মীরা রাতের বেলায় বোর্ট নিয়ে পৌঁছে যায় বিভিন্ন জলমগ্ন এলাকায়। বাড়ি ঘর থেকে মানুষকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে অস্থায়ী শিবিরে।
রবিবার সকাল থেকে বেলা বাড়ার সাথে সাথে হাওড়া নদীর জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইতে শুরু করে। নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলিতে যে সমস্ত বাড়িঘর ছিল সেগুলি সম্পূর্ণভাবে ডুবে যায়। এদিকে বন্ধ হয়ে পড়ে আসাম – আগরতলা জাতীয় সড়ক। চন্দ্রপুর জাতীয় সড়কে কোমর জল হওয়ায় যান চলাচল ছিল বন্ধ। চন্দ্রপুর আইএসবিটি-র ভেতর প্রবেশ করে জল। রাস্তার মধ্যে থাকা বহু গাড়ি বিকল হয়ে পড়ে। অপরদিকে বটতলা মহাশ্মশান হাওড়া নদীর জলে তলিয়ে যায়। মৃতদেহ সৎকার করতে এনে বিপাকে পড়ে বহু মৃতের পরিবার। মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় অন্যান্য মহাশ্মশানের উদ্দেশ্যে। পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা শাসক ডঃ বিশাল কুমার জানান, জলমগ্ন বারোটি জায়গা থেকে মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। তারা বর্তমানে অস্থায়ী শিবিরে আছেন। মোট ২৫ টির মত অস্থায়ী শিবির খোলা হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ছয় হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। তিনি আরো জানান মানুষকে উদ্ধারের কাজে ১৪ টি টিম কাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে দুটি এন ডি আর এফ -এর টিম। এছাড়া রয়েছে এস ডি আর এফ, আসাম রাইফেলস।
এবং অস্থায়ী শিবির গুলির মধ্যে স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মীরা গিয়ে মানুষের শারীরিক অবস্থা খোঁজখবর নিচ্ছেন। তিনি আরো জানিয়েছেন, হাওড়া নদীর জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। বৃষ্টি বন্ধ হলে ধীরে ধীরে নদীর জল নিচের দিকে নামবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। এদিকে পরিস্থিতি নিজ চোখে খতিয়ে দেখতে রবিবার দুপুরে সরজমিনে বিভিন্ন অস্থায়ী শিবিরে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার মানিক সাহা।মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গত দুদিন ধরেই প্রবল বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আগরতলা শহরে যে জল জমেছিল, সেটা খুব দ্রুত সরে গেছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, প্রায় ২৫ টির মত অস্থায়ী শিবির খোলা হয়েছিল। এর মধ্যে শ্রীলংকা বস্তি, প্রতাপগড় সহ নিজ বিধানসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন অস্থায়ী শিবিরে গিয়ে আশ্রয় নেওয়া মানুষের কাছ থেকে তাদের খোঁজখবর নিয়েছেন। তাদের সঠিকভাবে স্বাস্থ্য পরিষেবা মিলছে কিনা সে বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন নিম্ন অঞ্চল গুলির মধ্যে যারা এখনো বাড়িতে জল প্রবেশ করার পর ঘরে বসে আছে তারা যেন প্রশাসনের পরামর্শ অনুযায়ী নিরাপদ স্থানে কিংবা অস্থায়ী শিবিরে এসে আশ্রয় নেয়।
কারণ পরবর্তী সময় কোন ঘটনা ঘটলে অনেক অসুবিধা হয়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, হাওড়া নদীর জল নিয়ে সমস্যা। কারণ এই নদীর জল পাহাড় থেকে আসে। বর্তমানে বিপদ সীমার উপর দিয়ে বইছে নদীর জল। আগরতলা শহর থেকে জল নামানোর জন্য সমস্ত পাম্প কাজ করছে। মুখ্যমন্ত্রী আর বলেন গোটা রাজ্যের মধ্যে এখন পর্যন্ত যতটুকু খবর রয়েছে সব জায়গায় পরিস্থিতি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে কৈলাশহরে কিছু সমস্যা রয়েছে। তবে কখন কি হবে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিকে আবহাওয়া অফিস থেকে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা এবং খোয়াই জেলাকে আবারও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সর্তকতা জারি করা হয়েছে। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে মানুষকে উদ্ধার করে অস্থায়ী শিবিরে নিয়ে আসা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত হতাহতের কোন খবর নেই বলে জানা যায়। রবিবার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে বিভিন্ন অস্থির শিবির পরিদর্শন করেছেন রাজস্ব দপ্তরের সচিব বিজেস পান্ডে, আগরতলা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার, সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্য সহ অন্যান্য আধিকারিক।