Thursday, June 19, 2025
বাড়িরাজ্যমনু নদীর বাঁধ সংস্কার কাজের গতি ও গুনগতমান নিয়ে প্রশ্ন বিধায়কের

মনু নদীর বাঁধ সংস্কার কাজের গতি ও গুনগতমান নিয়ে প্রশ্ন বিধায়কের

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা, ২০ মে : কৈলাসহরের মনু নদীর পাড়ের বাঁধ সংস্কারের কাজ খুবই ধীর গতিতে চলছে এবং বাঁধের কাজের গুনগত মান খুবই নিম্নমানের। বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের গাইডলাইন মেনে কাজ হচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেন কৈলাসহরের বিধায়ক বিরজিৎ সিনহা। দীর্ঘ প্রায় পঁয়তাল্লিশ বছর ধরে কৈলাসহরের বিভিন্ন এলাকায় মনু নদীর পাড়ের বাঁধের কোনো ধরনের সংস্কার কাজ না হওয়ায় বাঁধ বিপদজনক হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে কৈলাসহর বাসীরা বাঁধ সংস্কারের দাবী করার পর অবশেষে বিগত এক মাস পূর্ব থেকে বাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। বাঁধ সংস্কারের পাশাপাশি বাঁধের প্রস্থ বাড়ানো হচ্ছে এবং উচ্চতা আরও পাঁচ ফুট বাড়ানো হচ্ছে।

কৈলাসহরের কাউলিকুড়া, সোনামুখি, গৌরনগর, কামরাংগা বাড়ি, ছনতৈল, দূর্গাপুর, সোনামারা, কিনাইরছড়, গোবিন্দপুর, বৌলাপাশা, লক্ষীপুর, সফরিকান্দি, লাটিয়াপুড়া, রাংগাউটি, দেবীপুর, মাগুরুলী ইত্যাদি এলাকায় মনু নদীর পাড়ের বাঁধ প্রায় চল্লিশ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। কাজ শুরুর প্রথম থেকেই কাজের দুর্নীতি শুরু হয়েছে বলে স্থানীয় গ্রামবাসীরা অভিযোগ করে আসছিলেন। গ্রামবাসীরা স্থানীয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারের কাছে লিখিত ভাবে এবং মৌখিক ভাবে অভিযোগ জানানোর পরও দপ্তরের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের কার্যকরী ভুমিকা নেওয়া হয়নি। দপ্তরের উপর আস্থা হারিয়ে অনেকে স্থানীয় বিধায়ক বিরজিত সিনহার দারস্থ হয়েছিলেন। সেই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে বিধায়ক বিরজিত সিনহার নেতৃত্বে পাঁচজনের এক প্রতিনিধি দল মনু নদীর পাড়ের বাঁধ সংস্কারের কাজ পরিদর্শন করতে যান। প্রতিনিধি দলে বিধায়ক বিরজিত সিনহার সাথে ছিলেন গৌরনগর পঞ্চায়েত সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান মো: বদরুজ্জামান, গৌরনগর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য নুমান আলী, নূরপুর গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য রুনু মিঞা, কংগ্রেস নেতা চন্দ্রশেখর সিনহা। উনারা কৈলাসহর শহরের দূর্গাপুর, সোনামারা, পূর্ব দূর্গাপুর, কামরাংগা বাড়ি এলাকায় মনু নদীর পাড়ের বাঁধ সংস্কারের কাজ পরিদর্শন করেন এবং কাজ পরিদর্শন করতে গিয়ে চক্ষু চড়ক গাছ হয়ে যায় প্রতিনিধি দলের। পুরনো বাঁধের উপর মর্জিমাফিক মাটি ফেলা হচ্ছে। ভারী মেশিন দিয়ে মাটি ভাইব্রেটিং কিংবা মাটি চাপা দেওয়া হচ্ছে না।

 কাজের ওয়ার্ক অর্ডারে বাঁধ পাঁচ ফুট বাড়ানোর কথা থাকলেও কোথাও এক ফুট কিংবা কোথাও হাফ ফুট বাড়ানো হচ্ছে। তাছাড়া বাঁধের প্রস্থতা বাড়ানোর কথা থাকলেও প্রস্থতা বাড়ানো হচ্ছে না। কাজ চলছে খুবই ধীর গতিতে। কারন যে এজেন্সি বাঁধ সংস্কারের কাজ পেয়েছে উনারা দুইটি গাড়ি দিয়ে মাটি ফেলছে। এত বড় বিস্তৃর্ন জায়গায় বাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু করা হয়েছে তাতে একটি কিংবা দুইটি গাড়ি দিয়ে মাটি ফেলা হলে চলতি বছরেও কাজ শেষ হবে না। অত্যন্ত কুড়িটি গাড়ি দিয়ে মাটি ফেলা না হলে আসন্ন বর্ষায় বাঁধের অবস্থা আরও খারাপ হবে বলে জানান বিধায়ক বিরজিৎ সিনহা। বাঁধ সংস্কারের কাজ পরিদর্শন করে প্রতিনিধি দল কৈলাসহরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের অফিসে এসে এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার রনজয় দেববর্মার নিকট সাক্ষাৎ করেন। এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার রনজয় দেববর্মার মুখোমুখি হয়ে বিধায়ক বিরজিত সিনহা ক্ষোভ ব্যক্ত করে জানান যে, দপ্তরের গাইডলাইন মেনে বাঁধ সংস্কারের কাজ করা হচ্ছে না। তাছাড়া দপ্তরের গাইডলাইন অনুযায়ী পুরনো বাঁধের উপর হাফ ফুট মাটি ফেলার পর ভারী মেশিন দিয়ে ভাইব্রেটিং করে জল দেওয়ার পর ফের মাটি ফেলে ভারী মেশিন দিয়ে ভাইব্রেটিং করার কথা থাকলেও বাস্তবে তা করা হচ্ছে না বলেও জানান বিধায়ক। তাছাড়া বাঁধের উপর কাজের সময় দপ্তরের পক্ষ থেকে কোনো আধিকারিক কিংবা দপ্তরের কেউ উপস্থিত থাকেন না। যার ফলে, দপ্তরের কেউ তদারকিতে না থাকায় এজেন্সি তাদের মর্জিমাফিক কাজ করছে। বিধায়ক বিরজিত সিনহা নির্দিষ্ট করে আরও গুরুতর অভিযোগ করেন যে, মনু নদীর পাড়ের বাঁধ সংস্কারের কাজ এতটাই নিম্নমানের হচ্ছে যে, সামান্য বন্যা হলেই বাঁধ আবার ভাংবে। বিশেষ করে, ২০১৮ সালে কৈলাসহরের বিমানবন্দরের দক্ষিন অংশে মনু নদীর পাড়ের বাঁধ ভেংগে যেভাবে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিলো, সেই জায়গায় বাঁধের কাজ দপ্তরের গাইডলাইন না মেনে একেবারেই যাচ্চেতাই কাজ হচ্ছে। আসন্ন বর্ষায় বিমানবন্দরের দক্ষিন অংশে আবারও বাঁধ ভাঙবে বলে আশংকা প্রকাশ করেন বিধায়ক। তবে বিধায়কের অভিযোগ নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোন ধরনের সাড়া পাওয়া যায়নি।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য