আগরতলা, ১৭ মে: আগামী ৫ বছরের মধ্যে রাজ্যকে মাছ, মাংস, দুধ, ডিমে স্বয়ম্ভর করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সরকার। এজন্য প্রাণী সম্পদ দপ্তরের টিম কাজ করছে। কৃষি, উদ্যানজাত ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি প্রাণী সম্পদে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। গ্রামীণ এলাকার প্রাণী পালকদের আর্থিকভাবে উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় পশুপালন ও দুগ্ধ মন্ত্রী রাজীব রঞ্জন সিংয়ের উপস্থিতিতে আজ বামুটিয়ায় ৪০ হাজার লিটার দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য প্রক্রিয়াকরণ ও উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ডেয়ারি ইউনিট-২ এর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। ন্যাশনাল প্রোগ্রাম ফর ডেয়ারি ডেভেলপমেন্ট এর অধীনে এই দুগ্ধ প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের উদ্বোধন করা হয়।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, আজ ত্রিপুরা রাজ্যের জন্য একটা আনন্দের দিন। বামুটিয়ায় যুক্ত হলো আরো একটি পালক। আমি এই প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে খোঁজখবর নিয়েছি। টিম ওয়ার্ক না করলে এধরণের প্রকল্প বাস্তবায়ন ও মূল লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। এজন্য প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তর ও সমবায় দপ্তর সমন্বয়ের সঙ্গে কাজ করেছে। আগামীদিনে কৃষক ও গোপালকদের আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। আজ এখানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজীব রঞ্জন সিং উপস্থিত হওয়ায় আমি তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি বিভিন্নভাবে আমাদের সহায়তা করছেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই ডেয়ারি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য রাজ্য সরকার জমি দিয়েছে। প্রকল্পের মোট মূল্য ২২ কোটি টাকা। এরমধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার ১৯.৪১ কোটি টাকা ও রাজ্য সরকার ২.৬০ কোটি টাকা দিয়েছে। ইন্দ্রনগরে এমন একটি প্রকল্প রয়েছে। আজকের এটি দুই নম্বর ইউনিট। এই ইউনিট চালুর মাধ্যমে পশ্চিম জেলা, খোয়াই জেলা, সিপাহীজলা জেলা, গোমতী জেলা ও দক্ষিণ জেলার মানুষ উপকৃত হবেন। এখানে বিভিন্ন ধরনের উন্নতমানের দুগ্ধজাত সামগ্রী উৎপাদিত হবে। যারমধ্যে দুধ, দই, পনির, লস্যি, আইসক্রিম ইত্যাদি থাকবে। ডাঃ সাহা বলেন, গ্রামীণ এলাকায় আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন খুবই দরকার। এজন্য সমবায় ক্ষেত্র ও প্রাণী সম্পদ বিকাশ ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দিতে হবে। এই দুটো ক্ষেত্রকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেলে ত্রিপুরা আরো শক্তিশালী হবে।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, দুগ্ধ উৎপাদক থেকে শুরু করে গ্রাহকদের সরবরাহ পরিকাঠামো উন্নতমানের করতে হবে। সেই সঙ্গে গুণগত মান বজায় রেখে মানুষের কাছে সরবরাহ করতে হবে। বিপণনের ব্যবস্থাকেও শক্তিশালী করতে হবে। দক্ষতা উন্নয়নের জন্য কর্মী ও কর্মকর্তাদেরও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গ্রাম ভিত্তিক দুধ সংগ্রহ করার জন্যও জোর দিতে হবে। প্রাণী পালকদের উৎসাহিত করতে হবে। বিক্রি বাড়লে তারাও আর্থিকভাবে লাভবান হবে। আজ যে ডেয়ারি ইউনিট চালু হয়েছে এর মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, আগামী ৫ বছরের মধ্যে মাছ, মাংস, দুধ ও ডিমে স্বয়ম্ভর করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এই লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। তথ্য দিয়ে তিনি জানান, ডিমের মাথাপিছু প্রাপ্যতা নিরিখে উত্তর পূর্বে প্রথম স্থানে ত্রিপুরা। আর দুধে দ্বিতীয় স্থানে। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ডিমের উৎপাদন ৩৩.৮৫ কোটি টাকা এবং বাৎসরিক মাথাপিছু ডিমের প্রাপ্তি ৮৩টি। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ডিমের উৎপাদন বেড়ে ৩৫.৯৬ কোটি টাকা এবং বাৎসরিক মাথাপিছু ডিমের প্রাপ্তি ৮৭টি হয়েছে। মাংসের ক্ষেত্রে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ৫৭.৩৪ মেট্রিক টন ও বাৎসরিক মাথাপিছু প্রাপ্তি ১৪.১০ কেজি। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে এটি বেড়ে ৫৯.৭০ মেট্রিক টন ও বাৎসরিক মাথাপিছু প্রাপ্তি হয়েছে ১৪.৩৯ কেজি। দুধের ক্ষেত্রে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে রাজ্যে বাৎসরিক উৎপাদন ২৩০.১২ মেট্রিক টন ও মাথাপিছু দৈনিক প্রাপ্তি ১৫৫.০৭ গ্রাম। আর ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২৪৭.৩১ মেট্রিক টন।
সমবায়ের মাধ্যমেও দুগ্ধ শিল্পের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে গুরুত্ব তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, সমবায়ের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৯ লক্ষ মানুষ যুক্ত থেকে বিভিন্ন সুফল পাচ্ছেন। এই সরকার মহিলাদের স্বশক্তিকরণের উপর গুরুত্ব দিয়েছে। ত্রিপুরায় এখন লাখপতি দিদির সংখ্যা ৯১,৮৭১ জন। প্রাণীজ প্রোটিনের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্যও জোর দেওয়া হয়েছে। প্রাণী সম্পদ খাতে স্বয়ম্ভরতা বৃদ্ধির জন্যও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য কৃত্রিম প্রজনন, উন্নত প্রজননের লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। স্ত্রী বাছুরের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে দুধ উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষকদের আয় বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী প্রাণী সম্পদ যোজনায় ৬,০০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এতে ৮,০০৬টি পরিবার উপকৃত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী প্রফেসর এস পি সিং বাঘেল, রাজ্যের প্রাণী সম্পদ বিকাশ মন্ত্রী সুধাংশু দাস, সমবায় মন্ত্রী শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া, বিধায়ক মীনা রাণী সরকার, গোমতী ডেয়ারির চেয়ারম্যান রতন ঘোষ সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ।