স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা, ১৬ মে : অর্থ সংকটে মেয়েকে কলেজ পড়ানোর স্বপ্ন অধরা এক বিকলাঙ্গ পিতার। মেয়েকে কলেজে পড়াতে চান। উনার মেয়ে সি বি এস ই বোর্ডে ভারতরত্ন অটল বিহারী বাজপেয়ি চড়িলাম বিদ্যারজ্যোতি স্কুল থেকে দ্বাদশ পরিক্ষায় ৩৫০ নম্বর পেয়ে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে মেধাবী ছাত্রী মুক্তা দেবনাথ। তার পিতা ভব রঞ্জন দেবনাথ। মা রিঙ্কু দেবনাথ। তাদের বাড়ি বিশ্রামগঞ্জ থানাধীন অন্তর্গত দক্ষিণ চড়িলাম ৪ নং কলোনি এলাকায়। অত্যন্ত গরিব। নুন আনতে পান্তা ফুরোয় পরিবারটির। তার পিতা ভব রঞ্জন দেবনাথ বিকলাঙ্গ। তার একটি পা নেই। ২০০৬ সালে যান দুর্ঘটনায় তার পিতার একটি পা হারাতে হয়। এরপরেও জীবনযুদ্ধে হার মানেনি সে।
তার চোখে মুখে স্বপ্ন মেয়ে পড়াশোনা করে শিখিয়ে বড় করবে। সে সেলাইর কাজ করে। চড়িলাম পুরান বাজারে একটি ছোট্ট দোকান ভাড়া নিয়ে সেলাইয়ের কাজ করে। অনেক কষ্ট করে এক পা দিয়ে সেলাইয়ের মেশিন চালিয়ে কোনো রকমে টুকিটাকি কাজ করে। তা দিয়েই চলে সংসার। তার স্ত্রী রিঙ্কু দেবনাথ বিকলাঙ্গ স্বামীকে সাহায্য করার জন্য এবং মেয়েকে লেখাপড়া করানোর জন্য নেমে পড়ে বিড়ি বাঁধার কাজে। এভাবেই চলছে তাদের জীবন সংগ্রাম। স্বামী এক পা দিয়ে সেলাইয়ের মেশিন চালায় স্ত্রী বিড়ি বাঁধার কাজ করে। সংসারে অভাব নিত্য সঙ্গী। ছোটবেলা থেকেই অভাবের মধ্যে বড় হয়েছে তাদের একমাত্র সন্তান মুক্তা দেবনাথ।সে অত্যন্ত মেধাবী পরিশ্রমী। সে জানে তার পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা। তাই মুক্তা মনোযোগ সহকারে লেখাপড়া করছে। উচ্চমাধ্যমিকে এবার ভালো ফল করেছে সে। সে ভূগোল বিষয় নিয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি শেষ করে শিক্ষিকা হয়ে বাবা মায়ের পাশে দাঁড়াতে চায়। ভূগোলে সে ৮৪ নম্বর পেয়েছে। তার প্রিয় বিষয় ভূগোল। কিন্তু তার উচ্চশিক্ষার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থনৈতিক সংকট।
শুক্রবার সকালে নিজ বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে মেয়েকে কলেজ পড়ানোর জন্য সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদন জানান মেধাবী ছাত্রী মুক্তা দেবনাথের পিতা ভব রঞ্জন দেবনাথ এবং মা রিংকু দেবনাথ। সরকারি ভাবে সাহায্য সহযোগিতা পেলে মেয়েটি উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন করতে পারবে বলে আশাবাদী তার বিকলাঙ্গ পিতা। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব ভব রঞ্জন দেবনাথকে একটি কৃত্রিম পা দিয়ে সাহায্য করেছেন। ভব রঞ্জন দেবনাথ সংবাদ মাধ্যমে আরো জানান এখন সবাই রেডিমেড পোশাক পরে। আগের মত কেউ এখন টেলার এর কাছে জামা কাপড় সেলাই করে না। তাই সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কিভাবে মেয়েকে কলেজে পড়াবো ভেবে উঠতে পারছেন না। সরকার সাহায্য করলেই তার পক্ষে সম্ভব মেয়েটিকে কলেজে পড়ানো। মেধাবী মুক্তার সাফল্যে গর্বিত তার বাবা-মা আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব পাড়া-প্রতিবেশী সহ গোটা দক্ষিণ চড়িলাম গ্রাম।