আগরতলা, ২৩ অক্টোবর (হি. স.) : উদ্ভাবনী ভাবনায় ও সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সহায়তায় রাজ্যের স্বনির্ভর যুবক যুবতীরাই এখন অন্যদের রোজগারের সুযোগ সৃষ্টি করছেন। রাজ্যে স্বসহায়ক দলগুলির মাধ্যমে আগামী ৫ বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি গড়ে তোলার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে ত্রিপুরা সরকার। আজ সিপাহীজলা জেলা প্রশাসন ও ত্রিপুরা গ্রামীণ ব্যাঙ্কের যৌথ ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত ‘স্বনির্ভর ক্যাম্প’ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব।
বিশালগড় ব্লকের রাউতখলা গ্রাম পঞ্চায়েতের বিশালগড় দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ের মাঠে এই স্বনির্ভর ক্যাম্পটি অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে এসে মুখ্যমন্ত্রী সুবিধা প্রদানকারী সংস্থা ও অন্যান্য স্টলগুলি পরিদর্শন করেন। এদিন মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন সুবিধাভোগীদের হাতে ঋণের অনুমোদনপত্র, কৃষান ক্রেডিট কার্ড, মুখ্যমন্ত্রী স্বনির্ভর পরিবার যোজনার অন্তর্গত বন দপ্তরের উদ্যোগে ভেষজ ও অর্থকরী গাছের চারা, উদ্যান ও ভূমি সংরক্ষন দফতরের উদ্যোগে পেঁপে ও কলার চারা, মৎস্য দফতরের উদ্যোগে মাছের পোনা তুলে দেন। তাছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার অ্যাকাউন্টের পাশবই তুলে দেন একজন সুবিধাভোগীর হাতে।
এদিন তিনি বলেন, ত্রিপুরায় স্বসহায়ক দলগুলিকে আত্মনির্ভর করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বর্তমান সরকারের সময়ে স্বসহায়ক দলের মাধ্যমে মহিলাদের রোজগারের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে একাধিক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে রাজ্যে। মহিলা স্বশক্তিকরণে সরকারের গৃহীত একাধিক ইতিবাচক উদ্যোগের ফলে বর্তমান সরকারের সময়ে স্বসহায়ক দলের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৬ গুণের অধিক। তাঁর দাবি, স্বনির্ভর যোজনার সুবিধা প্রদানের সরলীকরণ, স্বল্প ও সহজ শর্তে ঋণের সহায়তায় রোজগারের নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। নথি বা ঋণ অনুমোদনে বিভিন্ন জটিলতা ও ব্যাঙ্কের প্রতি অনীহার অবসান ঘটিয়ে সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে ব্যাঙ্কিং সহ অন্যান্য পরিষেবা। বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় আর্থিক সহায়তা গ্রহণ সহ উদ্ভাবনী ভাবনায় স্বনির্ভর ব্যক্তিরাই আত্মনির্ভর ত্রিপুরা নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।
তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, সমস্ত সংকীর্ণতার উর্দ্ধে উঠে বিভিন্ন প্রকল্পের সহায়তায় সকল স্তরের নাগরিকদের কাছে সমানভাবে পৌঁছে দিতে স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করছে ত্রিপুরা সরকার। একধাপে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ১ লক্ষ ৫৯ হাজার ঘর অনুমোদন প্রদানের পর আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে আরও ৭০,০০০ হাজার ঘর প্রদানের প্রক্রিয়া চলছে। বিভিন্ন প্রকল্পের সহায়তায় রোজগারের সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে গ্রামীণ স্তর পর্যন্ত প্রতি মাসের তৃতীয় শনিবার স্বনির্ভর ক্যাম্প করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জনজাগরণে বিশেষ করে সুবিধাভোগীদের বিভিন্ন প্রকল্পের সুযোগ সম্পর্কে অবহিত করা, প্রকল্পের সুফল পৌঁছে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে এধরণের উদ্যোগ।
তাঁর দাবি, স্মার্ট আপ সহ গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশে একাধিক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে। কৃষকদের রোজগার বৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়েছে মাথাপিছু গড় আয়। বিদ্যুৎ পরিষেবার আধুনিকীকরণে বিভিন্ন পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতি বাড়িতে জলের সংযোগ পৌছে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে কাজ করছে ত্রিপুরা সরকার। তিনি বলেন, ছাত্রছাত্রীদের থেকে শুরু করে সকল অংশের মানুষের মধ্যেই ইতিবাচক মানসিকতা তৈরি হয়েছে।
এদিন বিশালগড় পূর্ব লক্ষীবিল এলাকার কারুশিল্পী কৃষ্ণলাল গোস্বামী তার নিজের তৈরি বাঁশ বেতের কারুকার্যের একটি জাহাজের রেপ্লিকা মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। এরপর রাউথখলা পঞ্চায়েতের প্রতিনিধি ও বিশালগড় দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ মুখ্যমন্ত্রীর হাতে স্মারক উপহার তুলে দেন।