স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা, ৯ এপ্রিল : ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা উন্নত না হলে দেশ উন্নত হবে না। পঞ্চায়েত ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্সে ৩টি ক্ষেত্রে ত্রিপুরা সর্বোচ্চ আসনে উঠে এসেছে। আমাদের ত্রিপুরা এখন সবদিক দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আর কংগ্রেস সিপিএম বরাবরই নেতিবাচক ভাবনা নিয়ে রাজনীতি করে যাচ্ছে।
বুধবার উত্তর ত্রিপুরা জেলার ধর্মনগরে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। অনুষ্ঠানে বিরোধীদের নেতিবাচক মানসিকতা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আজকের দিনটি একটা উল্লেখযোগ্য দিন। এদিনটি উত্তর ত্রিপুরা জেলার মানুষের কাছে স্মরণীয় দিন। অথচ বিরোধীরা প্রায় বলে থাকেন কোথায় উন্নয়ন? আমি বলেছি তাদের চোখের ছানির অপারেশন করিয়ে নিতে। তাদের কাজই হচ্ছে বিদ্রূপ করা এবং নেতিবাচক মানসিকতা নিয়ে চলা। বিধানসভার মধ্যে দেখেছেন একটা শব্দকে বিকৃত করে বিরোধীরা সবাই চলে গেলেন। আমি তাদের বিধানসভায় আসার জন্য আহ্বান জানাই। সভার নেতা হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী তাদের কাছে আবেদন রেখেছেন। কিন্তু বিরোধী দলনেতা কি বললেন? তিনি বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী আমাদের আসার জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু মনের থেকে বলেছেন কিনা সেটা জানা নেই। এমনই নেতিবাচক ভাবনা নিয়ে সবসময় তারা চলছেন। আর তারা তো ভগবান বিশ্বাস করেন না। তাই তারা নাস্তিক। আর আমরা আস্তিক। তাদের নেতিবাচক ভাবনা যাবে না কোনদিনও। তারা ধীরে ধীরে ক্ষয়িষ্ণু হয়ে যাচ্ছে। নোটার সঙ্গে এখন তারা লড়াই করছেন। আর একটা বিরোধী দল আছে কংগ্রেস। তাদের হাতে গোনা তিনজন বিধায়ক। মিটমিট করে জ্বলছে আর নানারকম নাটক করছেন। আগামীদিনে তারাও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবেন। নির্বাচনের সময়ে এরা মিতালী করেছে। তাই আমি বলবো তারা এসে দেখুন যে কি ধরণের উন্নয়ন আমরা করছি।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্দেশিত মার্গদর্শনে রাজ্যের বিকাশে কাজ করছি। ত্রিপুরায় এখন ৬টা জাতীয় সড়ক হয়েছে। আগে মাত্র ১টা ছিল। আরো ৪টি জাতীয় সড়কের জন্য নীতিগত প্রক্রিয়া চলছে। এই সড়ক আমাদের আগামীদিনে প্রগতির রাস্তা দেখাবে। আগে উনকোটি জেলাকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। এখন আমাদের সরকার আসার পর উন্নয়ন কাকে বলে সেটা এখন মানুষ বুঝতে পারছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিত সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা প্রয়াস ও সবকা বিশ্বাস – এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আমরা সকলের জন্য কাজ করছি। এই সরকার জনজাতিদের উন্নয়নের জন্য আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। জনজাতিদের উন্নয়নে রাজ্য সরকার বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। অথচ আগে জাতি জনজাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে অনেকে ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টা করেছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আজ শিলান্যাস ও উদ্বোধন হওয়া প্রকল্পগুলির মধ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রাণী সম্পদ বিকাশ, গ্রামোন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্র রয়েছে। এতে এই এলাকার মানুষ ব্যাপকভাবে উপকৃত হবেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ত্রিস্তর পঞ্চায়েতকে শক্তিশালী করার উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। ২০১৮ থেকে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা শক্তিশালী হচ্ছে। ত্রিপুরা জাতীয় ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সংখ্যক জাতীয় পঞ্চায়েত পুরষ্কার অর্জন করেছে। ত্রিস্তর পঞ্চায়েত উন্নত না হলে দেশ উন্নত হবে না। ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ মানুষ গ্রামীণ এলাকায় বাস করেন। আর প্রধানমন্ত্রী সেটা বুঝেছেন। সাফল্যের সঙ্গে কাজ করায় কিছুদিন আগে ত্রিপুরা ৭টি জাতীয় পঞ্চায়েতী রাজ পুরস্কার পেয়েছে। পঞ্চায়েত ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্সে ৩টি ক্ষেত্রে ত্রিপুরা সর্বোচ্চ আসনে উঠে এসেছে। আমরা সবাই মিলে কাজ করছি বলে সেটা সম্ভব হয়েছে। আর্থ সামাজিক উন্নয়ন, পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং সম্পদ সৃষ্টির ব্যবস্থা একমাত্র ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় রয়েছে। ত্রিপুরা একমাত্র রাজ্য যেখানে ক্যাবিনেট থেকে শুরু করে জেলা, মহকুমা ও ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত পর্যন্ত ডিজিটাল পদ্ধতিতে কাজ হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিত ডিজিটাল ত্রিপুরা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি আমরা।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এবারের বাজেটে মুখ্যমন্ত্রী শস্য শ্যামলা যোজনা করা হয়েছে। মূলত, ফসলের গুণমান উন্নয়নে এটা করা হয়েছে। এতে ৫ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। বাজেটে রাখা মুখ্যমন্ত্রী বালিকা সমৃদ্ধি যোজনায় স্থায়ী বাসিন্দা অন্তোদয় পরিবারে কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করলে তার জন্য ৫০,০০০ টাকা ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট রাখা হবে। আর ১৮ বছর পূর্ণ হলে সুদ সমেত সেই টাকা পাবে সে। মানসিক প্রতিবন্ধীদের জন্য মাসিক ৫,০০০ টাকা প্রদানের সংস্থান রাখা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী কন্যা বিবাহ যোজনা চালু করা হয়েছে। এজন্য প্রায় ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়াও রাজ্যের সকল অংশের মানুষের কল্যাণে বাজেটে আর্থিক সংস্থান রাখা হয়েছে। কৈলাশহর ও উদয়পুরে দুটি মাল্টি পারপাস ইনডোর স্পোর্টস হল গড়ে তোলা হবে। চিকিৎসা পরিষেবার উন্নয়নে কাজ করছে সরকার। চোখের চিকিৎসার জন্য একটা ১০০ বেডের আই হাসপাতাল স্থাপন করার জন্য বাজেটে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা জল জীবন মিশনের আওতায় ৮৫.১২% কভার করেছি। পার্বত্য অঞ্চলে, যেখানে জলের ঘাটতি রয়েছে, আমরা উদ্ভাবনী প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। খুব সহসাই আমরা জল জীবন মিশনে ১০০% সম্পূর্ণ করতে সক্ষম হবো। ২০১৮ সাল থেকে রাজ্যে বিজেপি সরকার গঠন করার পর থেকে রাজ্যের নিজস্ব রাজস্ব কর প্রায় ২৩৬% বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিন অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেন, সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা মন্ত্রী টিংকু রায়, বিধায়ক যাদব লাল নাথ, উত্তর জেলার সভাধিপতি অপর্ণা নাথ, মুখ্যমন্ত্রী দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায়, উত্তর জেলার জেলাশাসক চাঁদনী চন্দ্রন সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ।